অনলাইন ডেস্ক : এক ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলো হাইলাকান্দির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিতী পালের। মঙ্গলবার রাতে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মহা কুম্ভ মেলায় ঘটে যাওয়া পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় তিনি প্রাণ হারান। মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ ভক্ত একসঙ্গে স্নান করতে আসায় প্রবল ভিড়ের সৃষ্টি হয়, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।হাইলাকান্দির বিখ্যাত মিষ্টির দোকান “ওম সুইটস”-এর মালিক নিতী পাল (৬৫) দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় তীর্থযাত্রায় আগ্রহী ছিলেন। এইবারও তিনি পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের নিয়ে কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করতে প্রয়াগরাজ যান। ২৮ জানুয়ারির রাতে মৌনী অমাবস্যার পুণ্যস্নানের জন্য লক্ষাধিক ভক্তের ভিড়ে তিনিও যান, কিন্তু স্নানের আগেই ভিড়ে চাপা পরে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মৌনী অমাবস্যার দিন পবিত্র গঙ্গায় স্নানের জন্য কোটি কোটি ভক্তের সমাগম ঘটে, যার ফলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। রাতের বেলা একসঙ্গে প্রচুর মানুষ স্নানের জন্য এগিয়ে এলে হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়। সংকীর্ণ পথে ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে বহু মানুষ পড়ে যান এবং একে অপরের ওপর চাপা পড়তে থাকেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বহু ভক্ত শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন এবং পদপিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। নিতী পালও ভিড়ের মধ্যে আটকে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান। প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কির ফলে তিনি শ্বাস নিতে না পেরে মারা যান। হাইলাকান্দি শহরের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী তথা শহরের নেতাজি সুভাষচন্দ্র রোডের অন্যতম প্রাচীণ মিষ্টির দোকান “ওঁম সুইটস”-এর স্বত্তাধিকারী শহরের ৫ নম্বর পুর ওয়ার্ডের নারাইনপুর রোডের বাসিন্দা নীতি রঞ্জন পাল সহধর্মিণী গায়ত্রী পালকে নিয়ে গিয়ছিলেন প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে ডুব দিতে। অবশ্য তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তাঁর নিকটাত্মীয় মিলে কমেও ২২ জন। তবে তাদের একমাত্র ছেলে শুভ যান নি বাবা-মায়ের সঙ্গে। ২৩ জানুয়ারি হাইলাকান্দি থেকে প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন ৩৩ জনের একটি দল। এরমধ্যে ছিলেন নীতি বাবু সহ তার আত্মীয়রাও। প্রয়াগরাজ গিয়ে উঠেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ পরিচালিত অতিথিশালায়। এখান থেকেই তাঁরা ২৭ জানুয়ারি অযোধ্যা ভগবান শ্রীরাম মন্দির পরিদর্শনে যান। ২৮ জানুয়ারি ফিরে আসেন প্রয়াগরাজ ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অতিথিশালায়। ২৮ জানুয়ারি রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় মৌনী অমবস্যার স্নান। সেই উদ্যেশ্যে নীতি রঞ্জন পাল সহ তাঁর স্ত্রী গায়ত্রী পাল ও পরিবারের অন্যান্যরা মঙ্গলবার রাত আনুমানিক একটা নাগাদ অতিথিশালা থেকে স্নানের জন্য নির্দিষ্ট ঘাটের উদ্যেশ্যে রওয়ানা দেন। হঠাৎ ঘটে যায় অঘটন। আর এই অঘটনে তীর্থযাত্রীদের হুড়োহুড়ির ফলে পদপৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অনেকেই। এর মধ্যে ছিলেন হাইলাকান্দির নীতি রঞ্জন পালও। তবে দীর্ঘদিন ধরে মধুমেয় রোগে আক্রান্ত ছিলেন নীতি রঞ্জন পাল। শরীরে রোগ বাসা বাঁধলেও এসব উপেক্ষা করে কার্যত মনের জোরে মহাকুম্ভে স্নান করতে স্ত্রী গায়ত্রী সহ পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন মহাকুম্ভে স্নান করতে। আর মঙ্গলবার রাতে পদপৃষ্ঠের মতো অঘটনের সময় শরীরে অস্বস্তিবোধ করলে স্নানের ঘাটের পাশেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশ্য চিকিৎসকরা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ভর্তি করা হয় আইসিইউ-তে। তবে অবশ্য রাতেই তিনি পরপারে পাড়ি দেন। হঠাৎ করে এমন ঘটনায় স্ত্রী গায়ত্রী পাল সহ নিকটাত্মীয়দের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কান্নায় বুক ভাসিয়ে দেন স্ত্রী গায়ত্রী পাল সহ নিকটাত্মীয়রা। প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে নীতি রঞ্জন পালের সঙ্গে যাওয়া তার খুড়তুতো ভাই পিন্টু পাল জানান, ২৫ জানুয়ারি তারা অযোধ্যায় রামমন্দির ঘুরতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার প্রয়াগরাজ ফিরে আসেন। ওইদিন গভীর রাত থেকে শুরু হয়ে যায় মৌনী অমবস্যার পুণ্যস্নান। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এক সাধু মহারাজ তাদেরকে বলেছিলেন মঙ্গলবার ভোরের দিকে স্নান করার জন্য। সেই উদ্যেশ্যে ওই সাধু মহারাজ তাদেরকে নিয়ে স্নানাঘাটের উদ্যেশ্যে রওয়ানা দেন। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অতিথিশালা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্নানের নির্দিষ্ট ঘাটে পৌঁছতেই পদপৃষ্ঠের মতো অঘটন ঘটে। আর ঠিক ওই সময় তাঁর দাদা নীতি পাল শারীরিক অসুস্থতাবোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মাটিতে লুটিয়ে পড়তেই পদপৃষ্ঠে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে চিকিৎসকরা তাঁকে তৎক্ষণাৎ হাসপতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এদিকে পিতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পরই নীতি পালের একমাত্র ছেলে শুভ প্রয়াগরাজের উদ্যেশ্যে রওয়ানা দেন। গুয়াহাটি থেকে বিমানে তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৌঁছবেন প্রয়াগরাজ। আর বৃহস্পতিবার রাতেই ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অনুমতি নিয়ে সেখানেই নীতি পালের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
তবে এমন হৃদয়বিদারক মৃত্যুর সংবাদে গোটা হাইলাকান্দি জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হাইলাকান্দির বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী নীতি পালের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়, বিজেপি জেলা সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান কল্যাণ গোস্বামী, জেলা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ভগবান দাস সারদা, জেলা কংগ্রেস সভাপতি সামস উদ্দিন বড়লস্কর প্রমুখ।