অনলাইন ডেস্ক : কৃষকদের প্রতি জেলা আয়ুক্ত রোহণ কুমার ঝা-র আহ্বান-“তৃতীয়পক্ষ(মধ্যভোগী)র কাছে ধান নিয়ে যাবেন না, ভারতীয় খাদ্য নিগম (এফসিআই) -এর
মাধ্যমে সুযোগ দিচ্ছে সরকার, ভালো দর পেতে এই সুযোগ নিন।” জেলা আয়ুক্তের এই আহ্বান যে নিছক কথার কথা নয়, তা জোর করে দাবি করেছেন এফসিআইর ডিভিশনাল ম্যানেজার সন্দীপন বরঠাকুরও। এর সূত্র ধরে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন কৃষকরাও।
গত কয়েক বছরের মতো এবারও কাছাড়ের কৃষকদের কাছ থেকে নূন্যতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করবে এফসিআই। ধান ক্রয়ের জন্য বৃহস্পতিবার শিলচর রামনগর এফসিআই ডিপো, সোনাবাড়িঘাট, কাবুগঞ্জ এবং পয়লাপুলে খোলা হয়েছে চারটি কেন্দ্র। ক্রয় করা সাব ধানই জমা হবে এফসিআইর ভাড়ারে । তবে চারটি ক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে শুধু রামনগরের ডিপোর কেন্দ্রটিই সরাসরি পরিচালনা করবে এফসিআই। বাকি তিনটি কেন্দ্রে খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ধান ক্রয়ের পর তা পাঠানো হবে এফ সি আই এর কাছে। সেসব কেন্দ্রেও অবশ্য ধানের মান যাচাইয়ের জন্য থাকবেন এফসিআইর প্রতিনিধিরা ।
এদিন রামনগর ডিপোর কেন্দ্রটি ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা আয়ুক্ত। এউপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে, বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, গতবছর যেখানে এফসিআই
কুইন্টাল প্রতি ২০৪০ টাকা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করেছিল, এবার তা আরও বাড়িয়ে করা হয়েছে ২১৮৩ টাকা। শুধু ক্রয়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়কমূল্য বৃদ্ধিই নয়, এবার জেলায় ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। গত বছর যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০০০ মেট্রিক টন, এবার তা ৫ গুনেরও বেশি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০,৫০০ মেট্রিক টন।
এসব তথ্য তুলে ধরে তিনি জেলার কৃষকদের তৃতীয় পক্ষের কাছে ধান বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তৃতীয় পক্ষের কাছে গেলে মূল্য মিলবে অনেক কম। এফসিআই যেখানে তুলনামূলকভাবে ভালোদর দিচ্ছে, সেখানে কৃষকরা যেন এই সুযোগ নিতে এগিয়ে আসেন। সঙ্গে তিনি অবশ্য এও জানান, এফসিআইর ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড রয়েছে। ধানে আর্দ্রতার পরিমাণ ১৭ শতাংশের বেশি হতে পারবে না, আর ধানে পোকা থাকাও চলবে না।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিশেষ তৎপরতায় গত কয়েক বছর থেকে কাছাড়ে ফের শুরু হয়েছে এফসিআই ধান ক্রয়। যদিও সেই বছরগুলোতে অনেক কৃষকেরই অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। বহুদূর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ক্রয় কেন্দ্রে ধাণ নিয়ে আসার পর গুণগত মানের দরুন অনেকেরই ধান বাতিল হয়ে যায়। লাভের আশায় এসে উল্টে ফের গাটের কড়ি খরচ করে ধান ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে বাড়িতে। এরপর বাধ্য হয়ে যৎসামান্য মূল্যে ধান তুলে দিতে হয়েছে সেই মধ্যভোগী মহাজনদের হাতে। আর এই ডামাডোলে ২০০০ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি।
তবে এবার এখানে নতুন করে কাজে যোগ দেওয়া এফসিআইর ডিভিশনাল ম্যানেজার সন্দীপন বরঠাকুর দৃঢ়সুরে জানিয়েছেন, এবার যাতে কোনও কৃষককে ধান বাতিল হওয়ার দরুন হতাশ হয়ে ফিরে যেতে না হয়, এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কার্যসূচি হাতে নিয়েছে। ধানে যাতে কোনওভাবে পোকা না থাকে, এবং তা শুকিয়ে
ক্রয় কেন্দ্রে আনা হয় এর জন্য বার্তা দেওয়া হয়েছে তাদের। পোকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একাংশ ধানের বস্তায় পোকা থাকলে তা ছড়িয়ে পড়ে গুদামের অন্যান্য বস্তায়ও। তাই তারা পোকাযুক্ত ধান যাতে ক্রয় করা না হয়, এ নিয়ে বিশেষ সতর্ক থাকেন। আর আদ্রতার সমস্যায় কৃষকদের যাতে ফিরে যেতে না হয় এর জন্য ক্রয় কেন্দ্রে হাওয়া দিয়ে ধান শুকানোর
বসানো হয়েছে “উইনোওয়ার”। কথার সূত্রে তিনি আরও জানান, গত কয়েক বছর ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে
একটা বড় অসুবিধা ছিল এঅঞ্চলে ধান ভাঙ্গানোর জন্য উপযুক্ত মিলের অভাব। এবছর উধারবন্দের পাণগ্রামে চালু হয়েছে, উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকা একটি রাইস মিল। সব মিলিয়ে আশা করা যায়, এবার ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে ১০,৫০০ মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে।
এদিকে জেলাআয়ুক্ত ও ডিভিশনাল ম্যানেজারের কথাবার্তা শুনে এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা কৃষকরা অনেকটাই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তাপাং দ্বিতীয় খন্ড এলাকার সালেম হোসেন ও রমিজ উদ্দিন চৌধুরী সহ অন্যান্যরা বলেন, এফসিআই ধান ক্রয়ের আগে তারা মহাজনদের কাছে কুইন্টাল প্রতি ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। এতে অনেক সময় চাষের খরচটুকুও উঠতো না। ২০১৯ সাল থেকে এফসিআই এজেলায় ফের ধান ক্রয় শুরু করার পর তারা অনেকটাই লাভবান হয়েছেন। তবে কারো কারো ধান বাতিল হয়ে যাওয়ায়, তারা আর সেই লাভের মুখ দেখতে পারেননি। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ যেভাবে কথা বলছেন, এতে মনে হচ্ছে এবার বাতিলের পরিমাণ কমবে অনেকটাই। এর মধ্যে আবার বেড়েছে দর এবং ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা। তাই কথা অনুযায়ী সব ঠিকঠাক চললে, এবার অবশ্যই জেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে।
রামনগর ডিপোর এই ক্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি সোনাবাড়িঘাট এবং কাবুগঞ্জ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলাআয়ুক্ত যুবরাজ বর ঠাকুর। অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত ছিলেন কৃষি আধিকারিক নিখিল চন্দ্র দাস সহ অন্যান্যরা। পয়লাপুল কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন বিধায়ক কৌশিক রায় সহ অন্যান্যরা।