অনলাইন ডেস্ক : দুর্নীতির থাবায় শিক্ষার পরিমণ্ডল লাটে উঠেছে ভাগাডহর-পূর্ব শিলচর হাইস্কুলে। সরকারি অনুদান এলেও তা সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে না। উপরন্তু ভুয়া স্কুল পরিচালন কমিটি গঠন করে সরকারি তহবিলের অর্থ তছরুপ করা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন একাংশ অভিভাবক, স্কুল পরিচালন সমিতির কর্মকর্তা এবং সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, অবাধ দুর্নীতি চলছে স্কুলে। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় এক বছর ধরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এবার দ্বারস্থ হয়েছেন শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন স্তরে পৃথকভাবে দাখিল করা হয়েছে অভিযোগপত্র।
অভিভাবক মনোয়ার হোসেন লস্কর, এসএমডিসি-র সহ-সভাপতি নজমুল ইসলাম লস্কর সহ সাবিনা ইয়াসমিন ডেইজি ও গ্রামের আরও অনেকে জানিয়েছেন, স্কুলে রয়েছে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ২৭০। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন রয়েছেন ১৬ জন। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের হিসেবে যা পর্যাপ্ত। তারপরও স্কুলে পড়াশোনা হচ্ছে না। এরজন্য দায়ী প্রধান শিক্ষকের গাফিলতি।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক -সহ এসএমডিসি-র সভাপতিকে বারবার আর্জি জানালেও তাতে কর্ণপাত করছেন না কেউ-ই। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করছে। প্রধান শিক্ষকের কার্যকলাপ নিয়ে স্কুলের অন্য শিক্ষকদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ। মনোয়ার হোসেনরা দাবি করেছেন, স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়ে স্কুল পরিচালনা করছেন প্রধান শিক্ষক। শীঘ্রই স্কুলের পরিবেশ স্বাভাবিক না হলে তীব্র – আন্দোলন গড়ে তুলবেন অভিভাবকেরা, এমনটাই হুমকি দিয়েছেন তিনি।
স্কুল পরিচালন ও উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি নজমুল ইসলাম লস্কর বিস্ফোরক অভিযোগ এনে জানিয়েছেন, স্কুলের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভাপতি পদে তাঁর নাম ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোপুরি অবৈধভাবে। কারণ, তিনি যে এই পদে রয়েছেন সেটা তিনি নিজেই জানেন না। প্রধান শিক্ষক – তাঁকে কোনও কিছু না জানিয়েই অ্যাকাডেমিক কমিটির সভাপতি পদে তাঁর নাম ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি জানার পর তিনি বিস্মিত হয়েছেন। তত্ত্বতালাশ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সাবিনা ইয়াসমিন ডেইজি সহ বেশ ক’জনের অজ্ঞাতে অ্যাকাডেমিক কমিটিতে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন প্রধান শিক্ষক। এদের সই জাল করে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছেন। সংবাদ মাধ্যমে এই অভিযোগ এনেছেন খোদ সাবিনা ইয়াসমিন। বলেছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সব গাইডলাইন অমান্য করে অবৈধভাবে অ্যাকাডেমিক কমিটি গঠন করেছেন। এনিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নজমুলরা।অভিভাবক মনোয়ার হোসেন লস্কর জানিয়েছেন, স্কুলে শুধু যে শিক্ষার পরিবেশ লাটে উঠেছে তা নয়, দুর্নীতিও হচ্ছে লাগামছাড়া হারে। তিনি জানিয়েছেন, অভিভাবকরা এবার বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্কুলের পরিবেশ সুষ্ঠু না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন তাঁরা। উল্লেখ্য, বড়জুরাই অঞ্চলের একমাত্র হাইস্কুল ভাগাডহর পূর্ব শিলচর হাইস্কুল। এটি আগে ছিল সিনিয়র মাদ্রাসা। কয়েকবছর আগে সরকারের মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশে এটি উন্নীত হয় হাইস্কুলে। আশায় বুক বাঁধেন স্থানীয়রা। কারণ, এর আগে হাইস্কুলে পড়াশোনার জন্য নদী পেরিয়ে যেতে হত রংপুরে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অদূরদর্শিতা এবং দুর্নীতির কারণে স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন স্থানীয়রা।