অনলাইন ডেস্ক : বড় মাপের দুর্গাপুজো আয়োজনের আড়ালে পাট্টা জমি দখল এবং জমির মালিককে হুমকি দিয়ে কম দামে বিক্রি করার জন্য চাপ দেওয়ার চক্র শুরু হয়েছে উধারবন্দে, এমনটাই অভিযোগ শিলচরের নিওন রোডের বাসিন্দা বিশ্বদীপ ঘোষ এবং তার পরিবারের সদস্যদের। বিশ্বদীপ জানিয়েছেন, এই জমির মালিক তার প্রয়াত মা এবং এক বছর পুজো আয়োজন করার নামে এবার জমি প্রায় দখল করে নিয়েছে কমিটি। তারা এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বায়িত্ব হয়েছিলেন এবং আদালত গতবছর ওই জমিতে পুজো আয়োজন করতে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। তবে সেটা উপেক্ষা করে ফের পুজো আয়োজন করা হচ্ছে এবং তারা এবার উধারবন্দ হাসপাতাল রোড পুজো কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চলেছেন।
তিনি জানান, তার পিতা মৃণাল কান্তি ঘোষ ১৯৮৭ সালে জমিটি কিনেছিলেন এবং এর মালিক ছিলেন বিশ্বদীপের মা রিনা ঘোষ। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কমিটির সদস্যরা তাদের জমিতে পুজো আয়োজন করতে চান। এর আগে তারা রাস্তার পাশে পূজা আয়োজন করতেন। প্রথমবার পূজা আয়োজনের পর তারা বলেন, হিন্দু শাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী এক জায়গায় অন্তত তিনবার পুজো করতে হবে এবং সেটাও পরিবারের লোকেরা মেনে নেন। ২০২১ সালে কমিটির সদস্যরা জানান, শেষবারের মতো ওই জমিতে পুজো করবেন তারা। তবে ২০২২ সালে পরিবারের লোকেদের আর জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি কমিটির সদস্যরা, তারা সরাসরি ওই জমিতে পুজো করেন। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে আমার মা অসুস্থ ছিলেন এবং আমরা তার চিকিৎসার বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এই বছর নভেম্বর মাসে আমার মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর আমরা কমিটির সদস্যদের জানিয়ে দিই, তারা যেন ওই জমিতে আর পুজো আয়োজন না করেন। তবে কমিটির সদস্যরা এটা মানতে রাজি হননি। তারা ২০২৩ সালের জুন মাসে আমাকে ডেকে এক বৈঠক আয়োজন করেন, সেখানে কমিটির সদস্য সহ স্থানীয় ব্যবসায়ী শঙ্কর রায় ছিলেন। তারা আমাকে জমি বিক্রির জন্য চাপ দেন এবং শংকর রায় বলেন তিনি সেটা কিনে নেবেন। তবে তারা যে টাকা দেবেন বলে জানান, সেটা জমির মূল দাম থেকে অনেক কম ছিল। এছাড়া আমার মায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই জমি আমি বিক্রি করতে চাইনি। তারা আমাদের কথায় রাজি না হয়ে সেখানে পুজোর আয়োজন করেন এবং আমরা তাদের বিরুদ্ধে আদালতে যাই। জমি কেনা সহ সম্পূর্ণ নথি আদালতে পেশ করা হয় এবং প্রথম তারিখেই বিচারক ওই জমিতে পুজো আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যেহেতু পূজোর আয়োজন অনেকটাই এগিয়ে গেছিল, আমরা গত বছর এতে বাধা দিইনি। তবে এবার তারা ফের আমাদের না জানিয়ে ওই জমিতে পুজো আয়োজন করছেন। টিনের একটা সীমানা লাগানো হয়েছে এবং সেখানে পুজো কমিটির ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের হাবভাব একেবারে জমি মাফিয়া দের মত। আমরা এত বড় মাপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লড়াই করতে পারবো না তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী জানিয়েছেন, কমিটির সম্পাদক রাজেশ রায় সহ রঞ্জিত বণিক, রাজেশ বনিক, চন্দন রায়, অমল রঞ্জন এন্দো, বিদ্যুৎ দত্ত, রূপঙ্কর ধর, স্বদেশ দত্ত, অলক দাস এবং রূপেন্দ্র সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিশ্বদীপ এবং তার পরিবারের। তিনি জানান, গত বছর আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা হওয়ার পর তারা এবছর ফের আদালতের কাছে অভিযোগ জানান। জেলা আদালতের পক্ষ থেকে এমাসের প্রথম সপ্তাহে পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সৌমেন চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু আদালতের পক্ষ থেকে তদন্তের জন্য এক মাসের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে, আমরা ওই সময়ে কিছু করবোনা। তবে বিপরীত পক্ষের লোকেরা যদি আদালতের কথার সম্মান না রাখেন তাহলে আমরা শীঘ্রই মামলা করব। কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১১ ধারায় মামলা করা হবে। ভারতবর্ষের নতুন আইন ব্যবস্থা অনেক কঠোর এবং সংগঠিতভাবে অপরাধমূলক কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার মত জায়গা রয়েছে। আমরা এই ধারায় মামলা করব এবং আইনের কাছে সাহায্য চাইবো।’সৌমেন চৌধুরী জানান, উধারবন্দ দুর্গাপূজা কমিটির তরফে এবছর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে অতিথি হিসেবে পুজোয় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যে পূজো কমিটির বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ রয়েছে এবং তারা নির্দেশ মেনে পুজো আয়োজন করছে, তাদের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন না। এছাড়া যেসব নাগরিক এই পুজো আয়োজনের ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা একটি বেআইনি কাজের সহযোগী হবেন না।’