অনলাইন ডেস্ক : করিমগঞ্জের সুপ্রাকান্দি এলাকায় এক মুসলমান পরিবার স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের কাছে জমি বিক্রি করতে চাইলে সেটা আটকে দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। মার্চ মাসে জারি হওয়া রাজ্য সরকারের এক নির্দেশের দোহাই দিয়ে আটকানো হয়েছিল অনুমতি। এবার গৌহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে জট খুলেছে এবং আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে এধরনের জমি বিক্রিতে কোন আইনি বাধা নেই।
জমির মালিক কবির আহমেদ চৌধুরী এবং মোঃ ফয়জুল আহমেদ স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ মালাকার এবং পালতু কুমার মালাকারের কাছে তাদের ৪ কাঠা ৪ ছটাক জমি বিক্রি করবেন বলে এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাদের আবেদন মঞ্জুর করেছিল জেলা শাসকের কার্যালয় এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ তাদের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই এনওসির মেয়াদ বাড়িয়ে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তবে ঠিক এক মাসের মাথায় রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিশেষ নির্দেশ জারি হয়, যেখানে বলা হয় এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকের কাছে জমি বিক্রি করতে পারবেন না। তবে সেটা করা হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। নির্বাচন পেরিয়ে যাওয়ার বহুদিন পরেও সেই নির্দেশ দেখিয়ে এধরনের জমি বিক্রিতে বাধা দেন স্থানীয় আধিকারিকরা। জমির মালিক শেষমেষ গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে যে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল, সেটা দেখিয়ে আন্তঃধর্ম জমি কেনা-বেচায় বাধা দিচ্ছিলেন স্থানীয় সরকারি আধিকারিকরা।’ তার যুক্তি অনুযায়ী, এর মাধ্যমে স্থানীয় আধিকারিকরা ১৮৮২ সালের ট্রান্সফার অব প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট এবং ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ (১) নম্বর অনুচ্ছেদের অবমাননা করেছেন। তিনি বলেন, ‘একেবারে আইন এবং সংবিধান বিরোধী ছিল এই পদক্ষেপ। আদালতে মাত্র তিনটি শুনানীর মধ্যেই বিষয়টি সমাধান হয়েছে। জেলাশাসক শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেন এবং তিনি আশ্বাস দেন, এবার যদি আবেদনকারীরা ফের আসেন তাহলে তাদের প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া হবে। এতে কোনও বাধা থাকবে না।’ ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে সরকারের আইনজীবী এ ভট্টাচার্য বলেছিলেন, অসম সরকারের তরফে ৭ মার্চ যে নির্দেশ জারি হয়েছিল, সেটা মেনেই স্থানীয় সরকারি আধিকারিকরা অনুমতি দিতে চাননি। তবে আদালতের তরফে বলা হয়, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই নির্দেশ মাত্র তিন মাসের জন্য দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচন শেষ হওয়ার বহুদিন পেরিয়ে গেছে, তাই এই নির্দেশ মেনে কাউকে জমি কেনা-বেচার অনুমতি পাওয়া থেকে বঞ্চিত রাখা আইন বিরোধী। হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘অযথা সাধারণ মানুষকে এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি আর্থিক অসুবিধের জন্যই তার ভিটেমাটি বিক্রি করতে চায়। তবে স্থানীয় সরকারি আধিকারিকরা সেই পরিবারকে হাইকোর্টে গিয়ে মামলা করতে বাধ্য করলেন। এতে ওই পরিবারের বহু টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি আধিকারিকদের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ওই পরিবারকে। আমরা চাই এভাবে যেন কোনও ব্যক্তিকে আর হেনস্থা করা না হয়।’ ৭ মার্চ সরকারের নির্দেশ আসার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন তারা এব্যাপারে কড়া মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন এবং তিনি এক্ষেত্রে ‘জমি জেহাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্যের জাতি, মাটি এবং ভিটে রক্ষা করার জন্য, আমরা জমি জেহাদের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অনুযায়ী, আমরা একটি প্রস্তাব পেশ করেছি।’ পরবর্তীতে জানানো হয়, রাজ্যের কিছু কিছু জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে ১৯৫১ সালের আগে থেকে যারা বসবাস করছেন, শুধু তারাই জমি কেনাবেচা করতে পারবেন। বিশেষ করে ২৫০ বছর পুরনো মন্দির, নামঘর ইত্যাদির ৫ কিলোমিটার এলাকায় এই নিয়ম থাকবে। তবে করিমগঞ্জের এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, সরকারের নির্দেশকে ভুল ব্যাখ্যা করে কিছু আধিকারিক সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করছেন। শুক্রবার আদালতের তরফে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়। বিচারকরা সংশ্লিষ্ট সরকারিয়ার অধিকারীদের কড়া ভাষায় নিন্দা করেন।