অনলাইন ডেস্ক : ৯৪ বছর বয়সে শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জীবনের প্রথম সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি পেলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম সমাবর্তনে তাকে এই সম্মান জানানো হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সমাবর্তনে গিয়ে এই সম্মান গ্রহণ করতে পারেননি। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাজিব মোহন পন্থ কবীন্দ্র পুরকায়স্থের বাড়িতে গিয়ে তার হাতে এই সম্মান তুলে দেন। এদিন কবীন্দ্র পুরকায়স্থের বাড়িতে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উপাচার্য সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক প্রদোষ কিরণ নাথ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুপ্রবীর দত্তরায় সহ অন্যান্য উপস্থিত ছিলেন। তারা যখন কবীন্দ্র পুরকায়স্থকে বিশেষ সম্মানটি তুলে দেন, তখন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক শশীকান্ত চৌথাইওয়ালে, বরিষ্ঠ শিক্ষাবিদ তথা শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শংকর ভট্টাচার্য, বরিষ্ঠ আইনজীবী অশোক পাল চৌধুরী সহ অন্যান্যরা।
দলের প্রবীণ নেতা, যাকে বিজেপির ভীষ্ম পিতামহ বলে সম্বোধন করা হয়, তার বিশেষ সম্মান পাওয়ার মুহূর্তের সাক্ষী হতে বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা এদিন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। রাজ্যসভার সাংসদ মিশন রঞ্জন দাশ, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, কৌশিক রায়, প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, জেলা বিজেপির সভাপতি বিমলেন্দু রায়, দলের বরিষ্ঠ নেতা বাসুদেব শর্মা, কংগ্রেস দলের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ অন্যান্যরা এতে যোগ দেন। তবে অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন বরাক উপত্যকার দুই সাংসদ। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেবকেও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তবে তিনি এতে অংশ নেননি।
কবীন্দ্র বলেন, ‘আমি এই বয়সে এসে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি কেন্দ্রীয় স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে সাম্মানিক ডক্টরেট পেয়েছি, এটা আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের এবং সম্মানের। জীবনে অনেক সম্মান পেয়েছি তবে এধরনের সম্মান এই প্রথম। আমাকে এই মুহূর্ত দেখার মত অবস্থায় রাখার জন্য ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা আমাকে এই সম্মান দিয়েছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিলচর একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই শহরের মাটি অনেক মহান ব্যক্তিকে জন্ম দিয়েছে। আমরা যত বড়ই হইনা কেন, এই মাটির প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত।’ শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও তিনি অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং নিজের মনের ভাব তুলে ধরেন। ডক্টরেট উপাধি পাওয়ার মুহূর্তে তিনি এবং তার পরিবারের লোকেরা অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। একইভাবে আবেগপ্রবণ হতে দেখা যায় উপাচার্য রাজিব মোহন পন্থকেও। তিনি বলেন, ‘কবীন্দ্র পুরকায়স্থের ব্যক্তিত্ব কতটা মহান, এব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। আজ যারা তার এই বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী হতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের গুরু হচ্ছেন কবীন্দ্র। আমি সরাসরি তার ছাত্র হওয়ার সুযোগ পাইনি তবে একলব্যের মতো তার কাছ থেকে গোপনে শিক্ষা নিয়েছি। বিশেষ করে বরাক উপত্যকায় আসার পর যতবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছে, কিছু না কিছু শিক্ষা পেয়েছি। তার মতো মহান ব্যক্তিকে সম্মান জানানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তাকে এই বিশেষ সাম্মানিক ডক্টরেট প্রদান করে আমরা ধন্য হয়েছি। ঈশ্বরের কাছে তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’এদিন অনুষ্ঠানে তার পরিবারের সদস্যরা আগমনী সংগীত পরিবেশন করেন। তার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের কথা তুলে ধরেন পুত্র কণাদ পুরকায়স্থ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তারা জানান, ১৯৩১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সিলেট জেলার কামারখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। দেশভাগের আগেই তারা ভারতবর্ষে চলে আসেন এবং তিনি পড়াশোনা করেন উদারবন্দের ডিএনএইচএস উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করা ছাড়াও তিনি সেই সময় বিটি পরীক্ষা পাস করেছিলেন। ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য হন তিনি। পরবর্তীতে নরসিংহ উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন এবং একসময় রামকৃষ্ণ নগরের রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার হাত ধরেই ১৯৭৭ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন তিনি। ১৯৮০ সালে বিজেপির সদস্য হন এবং তিনি দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সেই সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আদর্শে অসমে বিজেপির ভিত গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি। ১৯৭৮ সালে শিলচর থেকে প্রথমবার নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনী জয়ী হন এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ এবং ২০০৯ সালে শিলচর থেকে সাংসদ হন। ১৯৯৮ সালে জয়ী হওয়ার পর অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে থাকা ১৩ মাসের সরকারের তিনি প্রথমবার মন্ত্রিত্ব পান। সেই সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট সংশোধনীর অন্যতম সমর্থক ছিলেন তিনি। আদর্শ জীবনযাপনের এক জীবন্ত উদাহরণ কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। ৯৪ বছর বয়সেও অতীতের বহু ঘটনা অনর্গল বলতে পারেন। অসমে বিজেপির ভিত্তি স্থাপনের অন্যতম কান্ডারী ছিলেন তিনি। সর্বানন্দ সোনোয়াল থেকে শুরু করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, বিজেপির প্রথম সারির নেতারা যখনই শিলচরে আসেন তার আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। রাজ্যসভার সাংসদ মিশন রঞ্জন দাস এদিন জানান, তারা আশির দশকে কবীন্দ্র পরকায়স্থের নেতৃত্বে সংগঠনের কাজ করেছেন। তিনি সেই সময়ের বিভিন্ন মুহূর্তের কথা তুলে ধরেন এদিন অনুষ্ঠানে।