অনলাইন ডেস্ক : ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের তেষট্টি বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার শিলচরে এক পথচলা আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সংগঠন উপস্থিতিতে গঠিত ‘বরাকের আওয়াজ’ ব্যানারের অধীনে এদিন পথ চলা আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন প্রায় হাজার খানেক লোক।
এদিন বিকেল চারটে নাগাদ শিলচর শহরের রাঙ্গিরখারি পয়েন্ট থেকে শুরু হয় পথচলা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতি কর্মী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এতে যোগ দেন। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জড়িয়ে থাকা এক সুসজ্জিত ট্যাবলো পথ চলার নেতৃত্ব দেয়। বিভিন্ন শিল্পীরা মাতৃভাষার গান করতে থাকেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বাঙালি নয়, বরাক উপত্যকায় থাকা বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর লোকেরা এই পথ চলায় অংশ নিয়েছেন। তারা বলেন, ‘১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার লড়াই। আজ আমাদের পথ চলার থিম মাতৃভাষা। এখানে হিন্দিভাষী, মনিপুরী, বাঙালি সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা অংশ নিয়েছেন। যে ১১ তরুণ-তরুণী ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের লড়াই ছিল প্রত্যেক ব্যক্তির মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার, এই কথা ভুললে চলবে না।’
এদিন রাঙ্গিরখারি পয়েন্ট থেকে হাসপাতাল রোড, প্রেমতলা পয়েন্ট, শিলং পট্টি হয়ে গান্ধীবাগ পার্কে এসে শেষ হয় পথচলা। এতে অংশগ্রহণকারীরা গান্ধীবাগে শহীদদের স্মৃতিসৌধের কাছে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেকেই গান এবং কবিতার মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। পথচলায় প্রত্যেকেই হাতে বিভিন্ন প্লেকার্ড নিয়ে অংশ নেন। এতে বিভিন্ন ভাষার স্বরলিপি সহ লেখা ছিল বেশ কিছু স্লোগান। আয়োজকদের তরফে সুচরিতা ধর বলেন, ‘উনিশে মে বরাক উপত্যকার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে একটা আবেগিক দিন। আমরা ছোটবেলা থেকেই এই দিনটি উদযাপন করে আসছি। আজ উপত্যকার তিন জেলায় হাজার হাজার লোক পথ চলায় অংশ নিয়ে ভাষা আন্দোলনের মুহূর্তকে স্মরণ করেছেন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই লড়াই ছিল প্রত্যেক ব্যক্তির মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার, এত বছর পরে আজও আমাদের কাছে এই মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই পরবর্তী প্রজন্ম যেন এই ধারাকে না ভুলে।’ পল্লবীতা শর্মা বলেন, ‘আজ পথ চলায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিয়েছে তারা একদিন বড় হবে এবং সমাজের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যাবে। আমরাও এক সময় এভাবেই স্কুলে পড়ার দিনগুলো বড়দের হাত ধরে উনিশে মে উদযাপনে অংশ নিতাম। ছোটবেলায় সেই মুহূর্তগুলো আমাদের স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল, তাই এই দিনটি আমাদের কাছে আজও গুরুত্ব পায়। এধরনের পথচলার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই আবেগ পৌঁছে দিতে চাই।’