অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘ প্রায় ৬৫ বছর, এবার জমি ফিরে পেয়ে বদর উদ্দিন বডভূঁইয়াদের যেন খুশির সীমা নেই। আদালতের নির্দেশে এত দীর্ঘ বছর পর বড়খলা বুড়িবাইল তৃতীয় খন্ডে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ এবং বদর উদ্দিনদের জমি ফিরে পাওয়াটা বর্তমানে গোটা এলাকা জুড়ে হয়ে পড়েছে চর্চার বিষয়।
জমি ফিরে পাওয়ার জন্য বদর উদ্দিনদের পূর্বপুরুষরা যখন লড়াই শুরু করেছিলেন, তখন তাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকের জন্মই হয়নি। সেই ১৯৬৮ সালে নিজেদের ১২ বিঘা ১০ ছটাক জমি ফিরে পেতে কাছাড়ের মুন্সেফ নং-২-এর আদালতে জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তাদের পূর্বপুরুষ আব্দুল জব্বার বড় ভূঁইয়া ও আব্দুর রজ্জাক বড়ভূঁইয়ারা। জবরদখলকারী হিসেবে আব্দুল জব্বাররা সিরাজউদ্দিন বড়ভূঁইয়া সহ অন্যান্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তারাও বর্তমানে জীবিত নেই। গত বুধবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তারা সিরাজউদ্দিনদের
উত্তরাধিকারী। উত্তরাধিকারের এই পর্ব শুধু বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় আইনজীবীর ক্ষেত্রেও বর্তে যায় উত্তরাধিকার।
১৯৬৮ সালে আব্দুল জব্বাররা যখন বরাক নদীর তীরে অবস্থিত তাদের জমি ফিরে পেতে মামলা করেছিলেন তখন আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করেন শিলচরের তৎকালীন লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী প্রিয়নাথ দেবকে। এরপর বরাক নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে আর প্রিয়নাথবাবু স্থলে এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তারই পুত্র শিলচরের বর্তমানের লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী প্রসেনজিৎ দেব।
গোটা আইনি প্রক্রিয়ার বিবরণ দিতে গিয়ে প্রসেনজিৎ বাবু জানান, ১৯৬৮ সালে তার বাবা আব্দুল জব্বারদের হয়ে কাছাড়ের মুন্সেফ নং-২-এর আদালতে মামলা লড়তে শুরু করার পর এর নিষ্পত্তি হয় ১৯৭৪ সালের ১১ জানুয়ারি। আদালত রায় দেয় বাদী আব্দুল জব্বারদের পক্ষে। এরপর বিবাদী পক্ষ এই অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট সেশন জাজ নং -২-এর আদালতে “অ্যপিল” করেন। এবার এই আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হয় ১৯৭৯ সালের ৩০ নভেম্বর। এবারও রায় দেওয়া হয় বাদী আব্দুল জব্বারদের পক্ষে। কিন্তু বিবাদীরা তখনও ব্যাপারটা মেনে না নিয়ে দারস্থ হন গৌহাটি হাইকোর্টের। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর হাইকোর্টও আব্দুল জব্বারদের পক্ষেই রায় দেয়। এসব প্রক্রিয়া চলার মধ্যে বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে প্রিয়নাথবাবু আইন ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯৮১ সাল থেকে বাবা প্রিয়নাথবাবুর স্থলে তিনি (প্রসেনজিৎবাবু) বাদী পক্ষের আইনজীবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
হাইকোর্ট রায় দেবার পর তা বাস্তবায়নের জন্য কাছাড়ের মুন্সেফ নং-২-র আদালতে ডিক্রি জারি মামলা করা হয়। আদালত ডিক্রি জারি করার পর অবশেষে মঙ্গলবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালানো হয় উচ্ছেদ অভিযান।
প্রসেনজিৎবাবু জানান, বিবাদী পক্ষ বারবার বিভিন্নভাবে এই আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। যার দরুন তার মক্কেলদের জমি ফিরে পেতে এতটা সময় লেগেছে। তবে এরপরও তিনি খুশি, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো লেগে থাকলে আদালতে সুবিচার অবশ্যই পাওয়া যায়।
আর আব্দুল জব্বারদের উত্তরাধিকারী বদর উদ্দিন, শরিফ উদ্দিন, রিনা বেগম, লায়লা বেগম সহ অন্যান্যদেরও খুশির সীমা নেই। তবে সঙ্গে রয়েছে আফসোসও। যদি এই সময় বেঁচে থাকতেন তাদের পূর্বপুরুষ আব্দুল জব্বাররা ,,,,,,,,,,,।