অনলাইন ডেস্ক : একদিনের জন্য শিবসাগরের ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার (জেলাশাসক)-এর দায়িত্ব সামলেছেন চা বাগানের জনৈক শ্রমিকের ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র ভাগ্যদীপ রাজগড়। অনিল কাপুর অভিনীত জনপ্ৰিয় হিন্দি চলচ্চিত্ৰ ‘নায়ক’ নয়। অসমের বাস্তব ঘটনা। শিবসাগরের ডিমৌ এলাকার বাকতা বারবাম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র দেওরিটিং চা বাগানের এক শ্রমিক-পুত্র ভাগ্যদীপ রাজগড় ৩১ জুলাই প্রতীকী আমলা জেলাশাসকের চেয়ারে বসে প্রশাসনের কাজ করেছে। অসম সরকারের উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘আরোহন’-এর বলে এই সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে ভাগ্যদীপ।
এদিন সকাল প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ দেউরিটিং চা বাগানে যান শিবসাগরের জেলাশাসক আইএএস আদিত্য বিক্ৰম যাদব। মূল রাস্তায় তাঁর সরকারি গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে এবড়ো-থ্যাবড়ো রাস্তায় বড়লাইনে ভাগ্যদীপ রাজগড়দের ছোট্ট ঘরে যান জেলাশাসক। সেখানে বাগানের বহু কৌতূহলি মানুষ ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হতে জড়ো হন। জেলাশাসকের জন্য ঘরে রাখা ছিল একটি চেয়ার। কিন্তু ওই চেয়ারে ভাগ্যদীপকে বসিয়ে আরেকটি চেয়ার টেনে বসেন আদিত্য বিক্ৰম। ভাগ্যদীপের বাসায় আদিত্য বিক্ৰমকে গামোছা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান তার বাবা-মা-ভাই-বোনেরা।
মা-বাবাকে প্রণাম করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় ভাগ্যদীপ। আদিত্য বিক্ৰম যাদব সহ সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে জেলাশাসকের গাড়িতে ওঠে ডিস্ট্রিক্ট কমিশনারের সরকারি কাৰ্যালয়ে যায় ভাগ্যদীপ রাজগড়। কার্যালয়ে অন্য আধিকারিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে একদিনের জেলাশাসকের পরিচয় করিয়ে দেন আদিত্য বিক্রম যাদব। এর পর অসম সরকারের ‘আরোহন’ প্রকল্প অনুযায়ী জেলাশাসকের চেয়ারে বসে প্রতীকী প্রশাসনিক কাজকর্ম করেছে একদিনের ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার ভাগ্যদীপ রাজগড়। একদিনের জেলাশাসকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্ৰ ভাগ্যদীপের মেন্টর হিসেবে ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার আদিত্য বিক্ৰম যাদব।
ব্যতিক্রমী ঘটনা সম্পর্কে ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার আদিত্য বিক্ৰম যাদব বলেন, অসম সরকারের উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘আরোহণ’-এর বলে এই সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছেন ভাগ্যদীপ রাজগড়। মূলত রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে অনুপ্রেরণা জোগাতে এই প্রকল্প চালু করেছে সরকার। দশ বছর পর তিনি ভাগ্যদীপকে আক্ষরিক অর্থেই আইএএস অফিসার হিসেবে জেলাশাসক পদে দেখতে চান তিনি। আদিত্য বিক্ৰম বলেন, ‘আরোহণ’ হল মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নত করা এবং প্রত্যন্ত, গ্রামীণ ও দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের তাদের শিক্ষাজীবনের মেন্টরিং ও পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে চিহ্নিত করা।
প্রসঙ্গত, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন অসম মন্ত্রিসভা গত বছর ‘অরোহণ’ প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছিল। এই প্রকল্পের বলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৮,৭৫০ জন সহজাত প্রতিভা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীকে চার বছরের জন্য এ ধরনের উদ্ভাবনী কার্যক্রমে নিয়োজিত করবে সরকার। বিভিন্ন সরকারি এবং প্রাদেশিক স্কুলের এই সব ছাত্রকে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হবে।