উত্তমকুমার সী
কাছাড়ের জেলাশাসক কার্যালয়ে অনিয়ম এবং রদবদল নতুন কোনও বিষয় নয়। কিছুদিন পর পরই বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসে। জেলাশাসকের নজরে বিষয়টি আসার পর তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রদবদল ঘটানো হয়। একসময় জেলার সর্বময় কর্তাকে অন্ধকারে রেখে একাংশ কর্মী যে ‘বাবু সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছিলেন, আজও সেটা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। বিগত কয়েকমাস ধরে জেলা প্রশাসনের প্রতিটি শাখায় স্বচ্ছতা ফেরাতে কড়া নজর রেখে চলেছেন জেলাশাসক রোহন কুমার ঝা। বিভিন্ন অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে সার্কিট হাউস এবং ডিসির বাংলোয় ক্যাটারিং কন্ট্রাক্টরকে ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছেন। এবার মোট ৫৮ জন জেলার বরিষ্ঠ প্রশাসনিক সহকারীকে একযোগে রদবদল করেছেন জেলাশাসক। ২০ জুন, মঙ্গলবার জেলাশাসকের স্বাক্ষরিত নির্দেশের প্রতিলিপি তার পরদিন অর্থাৎ বুধবার প্রকাশ্যে আসে। আর এই খবর সামনে আসতেই প্রশাসনের কর্মীমহলে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলাশাসকের এই নির্দেশে জেলার প্রশাসনিক বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ওই ৫৮ ‘বাবু’র টেবিল এবং দফতর বদল করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এমনকি যারা স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছেন বা কয়েকমাস পর অবসরে যাচ্ছেন তাঁরাও রয়েছেন এই বদলির তালিকায়। কিন্তু রদবদলের তালিকায় নাম রয়েছে, কিন্তু আদৌ ‘বদলি’ হননি, এমন অনেক কর্মীও অবলীলায় ‘রেহাই’ পেয়ে গেছেন। বুধবার জেলাশাসকের কার্যালয় চত্বরে এই ব্যাপক রদবদলের জন্য কর্মীদের মধ্যে কার্যত গণ-অসন্তোষও লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই নিজের অজান্তে বলে ফেলেন, সেই ‘বাবু সিন্ডিকেট’-এর মূল কাণ্ডারীরা কিন্তু নিজেদের টেবিলে অনড় রইলেন। কেউ কেউ এদের ‘জি-১৮’ বা আঠারো জনের দল বলেও উল্লেখ করেছেন।
আসলে জেলাশাসকের জারি করা ৫৮ জনের রদবদলের নির্দেশ বিশ্লেষণ করে দেখা দেখা গেছে, মোট ১৯ জন এমন কর্মী রয়েছেন, যাদের বর্তমান কাজের স্থান এবং বদলিকৃত স্থান একই থেকে গেছে। এর মধ্যে ১৮ জনই নাকি ‘প্রবল ক্ষমতাবান’। সেই ‘জি-১৮’-র উল্লেখযোগ্য ‘বাবু’রা হলেন- তুষারকান্তি দে (পার্সোনাল), প্রবীরকুমার কুর্মী (নাজারত), প্রণয় চক্রবর্তী (ম্যাজিস্ট্রেসি এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ), সিদ্ধার্থশঙ্কর চক্রবর্তী (কাটিগড়া রাজস্ব), নেসলে শীলা (নাজারত), সুদীপ্ত নারায়ণ সিকিদার (ভূমি অধিগ্রহণ), তপোজ্যোতি দত্ত (পিএ শাখা), সুব্রত সরকার (সদর রাজস্ব তহসিল), স্বরূপ চক্রবর্তী (ম্যাজিস্ট্রেসি এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ), অতসী দত্ত তরফদার (হোমগার্ড কার্যালয়) প্রমুখ। এছাড়াও আরও কয়েকজন তালিকায় রয়েছেন যাদের ‘বদলি’ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রহস্যজনকভাবে একই টেবিল বা শাখায় থেকে গেছেন। সেটা কিভাবে সম্ভব হল, তা জানা যায়নি।
অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের অন্দরে থাকা ‘বাবু সিন্ডিকেট’ এই বদলির কোপ থেকে বেঁচে গেলেও কাজে অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন ঠিকই বদলি হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সত্যজ্যোতি দেব (এলএ শাখা থেকে কাটিগড়া রাজস্ব সার্কল), তারাশঙ্কর দাস (ট্রান্সফরমেশন এবং উন্নয়ন শাখা থেকে লক্ষীপুর এসডিও কার্যালয়), সত্যেন্দ্রকুমার যাদব (সদর রাজস্ব সার্কল থেকে লক্ষীপুর এসডিও কার্যালয়), কিশলয় ভট্টাচার্য (সদর রাজস্ব থেকে উধারবন্দ রাজস্ব সার্কল) প্রমুখ। এদিন ব্যাপক রদবদল হলেও কাছাড়ের প্রশাসনে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, এমন অনেকে ‘বাবু’ বহাল তবিয়তে তাদের সাম্রাজ্য চালিয়ে যাবেন, সেটা বলা বাহুল্য। জেলা প্রশাসনে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর জেলাশাসক রোহন কুমার ঝা আগামীতে আরও কোনও পদক্ষেপ করবেন কি না এটাই দেখার।