অনলাইন ডেস্ক : ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ বা কা) বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনের নামে বিক্ষোভ ও অশান্তি সৃষ্টির ঘটনায় অসমের শিবসাগরের বিধায়ক অখিল গগৈয়ের বিরুদ্ধে রুজু মামলা সংক্রান্ত গৌহাটি হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মনিয়াম এবং পঙ্কজ মিত্তালের ডিভিশন বেঞ্চ গৌহাটি হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে বহাল রেখে এই মামলায় গগৈয়ের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন বাতিল করেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সিএএ-র বিরুদ্ধে সংগঠিত বিক্ষোভে মাওবাদীর সঙ্গে কথিত যোগ সহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল বেসরকারি সংগঠন ‘কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতি’র নেতা তথা ‘রাইজর দল’-এর (অস্বীকৃত রাজনৈতিক দল) সভাপতি অখিল গগৈকে। তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন-১৯৬৭ (ইউএপিএ), ভারতীয় দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ (ধারা ১২৪-এ) এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ ও শত্রুতা প্রচার করা (ধারা ১৫৩-এ) এবং জাতীয় সংহতির বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান (ধারা ১৫৩-বি)।
গত ২০ মার্চ হাইকোর্টের এক নিৰ্দেশের বিরুদ্ধে অখিল গগৈয়ের আপিলের ওপর রায় সংরক্ষিত রেখেছিল সুপ্ৰিম কোৰ্ট। শুনানিতে গগৈয়ের কৌঁশুলি সিনিয়র অ্যাডভোকেট হুজেফা আহমাদি যুক্তি দিয়েছেন, তাঁর মক্কেল (অখিল গগৈ) জামিনে থাকাকালীন লিবার্টির অপব্যবহার করেছেন বলে কোনও অভিযোগ নেই।
অন্যদিকে, জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অখিল গগৈয়ের কৌঁশুলি হুজেফা আহমাদির যুক্তি খণ্ডন করে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, অখিল গগৈয়ের বিরুদ্ধে সিপিআই (মাওবাদী)-এর কাছে ওয়ারফেয়ার (যুদ্ধসদৃশ) প্রশিক্ষণের জন্য ক্যাডার পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়ে সহিংসতা ছড়ান। এছাড়া, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বরিয়া ভাটি অ্যাডভোকেট কানু আগরওয়ালের সহায়তায় জোর দিয়ে বলেন, বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে অভিযোগগুলি কেবল শান্তিপূর্ণ বনধ-এর সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কাৰ্যকলাপ প্রতিষ্ঠত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধসদৃশ অশান্তি ছড়ানোর আরও গুরুতর অপরাধজনিত অভিযোগ ছিল। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারাধীন এই মামলায় অখিল গগৈকে জামিন দিয়ে তাঁকে মুক্ত থাকার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে, আজ সুপ্রিম কোর্টের এই ঘোষণা শুনে ‘কা’ মামলায় বিচারাধীন বিধায়ক অখিল গগৈ তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ আমাকে এই মামলায় জামিন দিয়েছে। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন বিরোধী হিসেবে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করব।’
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অখিল গগৈকে এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে গুয়াহাটির বিশেষ এনআইএ আদালত সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। তবে তাঁকে এমন কোনও ধরনের বক্তৃতা পেশ না করতে, যা সহিংসতাকে উস্কে দেয়, তা থেকে বিরত থাকতে বলে দিয়েছিল এনআইএ আদালত।