অনলাইন ডেস্ক : বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন আট জোড়া যুবক-যুবতী, এরমধ্যে ৪ জোড়াই উধারবন্দের নগর চা বাগান এলাকার। সঙ্গে আবার অন্য এক জোড়ার বর-যুবকও ওই বাগানের বাসিন্দা। রবিবার শিলচর লায়ন্স ক্লাবের গণবিবাহে দেখা গেছে এই চিত্র। পাঁচপুত্র ও চারকন্যার বিয়েকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই বাগানে বইছে খুশির হাওয়া।
এদিন লায়ন্স ক্লাবের পক্ষ থেকে শিলচরের নরমাল স্কুল চত্বরে আয়োজন করা হয় গণবিবাহের। ক্লাবের এই অনুষ্ঠান এবার পা দিলো ১৯তম বছরে। এবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন নগর বাগানের সঞ্জয় উরাং (২৫) ও দীপ্তি উরাং (২৫), রামু মোড়া (২৫) ও কল্যাণী মোড়া (১৮), মমিত ভূমিজ ,(২৩) ও বাসন্তী গঞ্জু (২৪), তরুণ মোড়া (২১) ও মাম্পি সাঁওতাল (২০), নগর বাগানেরই বিভাস উরাং (২১) ও বড়শিঙ্গা বাগানের শুকুরমনি মুন্ডা (২৪), শালগঙ্গার সঞ্জিত বিকিয়াসন (৩১) ও দয়াপুর বাগানের লালি রিকিয়াসন (২৪), ঠালিগ্রামের চন্দন বিকিয়াসন (২৫) ও ভুবনভহর বাগানের রত্না রিকিয়াসন (২১) এবং ডলুগ্রাম বাগানের লক্ষণ মির্ধা (৩৭ ) ও অমরানগর বাগানের শুক্লা মির্ধা (২৩)।
এই ৮ জোড়ার মধ্যে সঞ্জয় উরাং ও দীপ্তি তাঁতি এবং মমিত ভূমিজ ও বাসন্তী গুঞ্জূর জীবনের গাঁটছড়া বেঁধেছে প্রেমের সূত্র ধরে। বাকিদের সামাজিকভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে। সমবয়স্ক সঞ্জয় ও দীপ্তি জানিয়েছেন দুজনেই নগর বাগানের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রায় আড়াই বছর আগে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক। তবে জাতপাতের বেড়াজালে দীপ্তির বাবা এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তবে তারা দুজন বিয়ের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত মত বদলে রাজি হতে হয় দীপ্তির বাবাকে। যার ফলশ্রুতি এদিন লায়ন্সের গণবিবাহ দুজনের চার হাত এক হয়ে যাওয়া। সঞ্জয় পেশায় লরিচালক, সাত পাকে বাঁধা পড়ার পর প্রেমিকাকে পত্নীরূপে পাওয়ার স্বপ্ন সাকার হওয়ার খুশিতে ডগমগ হয়ে তিনি বলে উঠেন, এবার সংসার নামক গাড়িটা যাতে তিনি ঠিকমত চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তার আর্জি এটাই।
একই বাগানের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে মমিত ভূমিজ এবং বাসন্তী ভুমিজের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও সঞ্জয়দের মতো এই সম্পর্কে কোনও বাধার সৃষ্টি হয়নি । দুপক্ষের অভিভাবকদেরই কোনও আপত্তি ছিল না বিয়েতে। এমনকি কাগজেপত্রে বছর ২৩ এর বর মমিতের তুলনায় কনে বাসন্তী এক বছরের বড় হলেও উদারতার পরিচয় দিয়ে কেউ কোনও আপত্তি তোলেন নি। কাগজপত্রের হিসেবে আটজোড়ার মধ্যে নগর বাগানেরই চম্পক উরাং (২১)-এর তুলনায় তার নববিবাহিতা পত্নী শুকুরমনি মুন্ডা তিন বছরের বড়, পত্নীর বয়স ২৪। এক্ষেত্রেও উদারতার পরিচয় দিয়ে সমাজ বা অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি উঠেনি।
এদিন গণবিবাহ অনুষ্ঠান স্থলে বর ও কনেযাত্রী হয়ে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বেশি ছিল নগরবাগানবাসীর সংখ্যা। বর ও কনেদের নিয়ে তাদের হাসি- ফুর্তির মাঝেই সঞ্জয়কর্মকার নামে যুবক জানান, বাগানেরই ৫ যুবক এবং ৪ যুবতীর একদিনে বিয়ে হচ্ছে, তাই তাদের খুশির মাত্রাটা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি। গত কয়েকদিন থেকেই এই বাগানে চলছিল এই যুবক-যুবতীদের বিয়ে কেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান। এদিন লায়ন্স ক্লাবের উদ্যোগে মূল বিয়ের অনুষ্ঠানের পর সবার পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক দিনে বাগানে সাধ্যমতো আয়োজন করা হবে ভোজের। সঞ্জয় সহ তার সঙ্গীরা এভাবে ধুমধাম করে যুবক-যুবতীদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় ধন্যবাদ জানান লায়ন্স ক্লাবের কর্মকর্তাদের।
এদিন গনবিবাহ আয়োজক লায়ন্স ক্লাব অব শিলচর সেন্ট্রাল এর পক্ষ থেকে নবদম্পতিদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী সহ তুলে দেওয়া হয় এক মাসের রেশন সামগ্রী। এছাড়া রোটারি ক্লাব অব শিলচর , ক্লাব অনন্যা, লায়ন্স ক্লাব অব করিমগঞ্জ, চার্চ রোড মহিলা সমিতি, শিবসুন্দরী নারী শিক্ষাশ্রম, আদর্শ ভক্ত মন্ডল সহ অন্যান্য সংস্থা সংগঠন এবং ব্যক্তি বিশেষের পক্ষ থেকেও নবদম্পতিদের উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় নগদ অর্থ এবং বিভিন্ন সামগ্রী।
লায়ন্স ক্লাবের এক কর্মকর্তা জানান, বিয়েকে ঘিরে যাতে পরবর্তীতে কোনও সমস্যার সৃষ্টি না হয় এর জন্য তারা আগে বর -কনে সহ তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নেন। সব পক্ষ রাজি হলে তবেই গণবিবাহের আসরের জন্য নাম নথিভুক্ত করা হয়।