অনলাইন ডেস্ক : ভোটের মুখে শনিবার ত্রিপুরায় জনসভায় করলেন নরেন্দ্র মোদি। দু’টি স্থানে প্রচার চালান তিনি। সোমবার ওই রাজ্যে ফের যাবেন তিনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী দফতরে চরম ব্যস্ততা। এর মধ্যেই উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রক তথ্য দিয়ে জানাল, গত পাঁচ বছরে ৪৭ বার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিয়ে কার্যত এদিন দেশের ওই অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে মোদির গুরুত্ব দেওয়াকেই বোঝাতে চেয়েছে মন্ত্রক।
২০১৭ থেকে ২০২২ অবধি প্রতি বছরে কতবার মোদি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গিয়েছেন সে তথ্যও তুলে ধরেছেন মন্ত্রকের কর্তারা। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সর্বাধিক ন’বার উত্তর-পূর্ব সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছর আটবার গেছেন, আর ২০১৭ সালে মোদির উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফরের সংখ্যা ছিল চার। সবচেয়ে কম মোদি উত্তর-পূর্বে যান ২০২০ সালে, মাত্র একবার। তবে মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, ওই বছর কোভিডের প্রকোপের ফলে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল বলেই এত কম সফর হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। না-হলে গত পাঁচ বছরে তাঁর উত্তর-পূর্বে ভ্রমণের মোট সংখ্যা হাফ সেঞ্চুরি ছাড়াত।
সর্বানন্দ সোনোয়াল এদিন সাংবাদিকদের বলেছেন, আগের লুক ইস্ট নীতিকে আক্ষরিক অর্থেই অ্যাক্ট ইস্ট নীতিতে পরিবর্তন করেছেন নরেন্দ্র মোদি। সোনোয়ালের দাবি, ‘কংগ্রেসের ৬০ বছরের শাসনকালে কখনই উত্তর-পূর্বে উন্নয়নে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। উপেক্ষিত থেকেছে ওই অঞ্চল। লুক ইস্ট নীতি তৈরি করলেও তাতে আমল দেয়নি কংগ্রেস সরকার। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে উন্নয়নের গেটওয়েতে পরিণত হয়েছে উত্তর-পূর্ব। যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে।’
প্রসঙ্গত, বুধবার লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে উত্তর-পূর্বের উন্নয়নকেই হাতিয়ার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, বিরোধী দলের সদস্যরা অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাকি রাজ্যে ভ্রমণ করলেই উন্নতির নিরিখে ফারাকটা বুঝতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তুলনা করেন কংগ্রেস জমানার সঙ্গে বিজেপির শাসনকালের।
মোদির দাবি, ‘আপনারা (কংগ্রেস) ক্ষমতায় থাকাকালীন গোটা উত্তর-পূর্বের কী দশা ছিল। আর এখন ওইসব রাজ্যে কীভাবে আমুল পরিবর্তন হয়েছে তা স্বচক্ষে দেখুন। তাই এখানে উপস্থিত বিরোধী দলের সকল সাংসদের বলছি একবার অন্তত উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঘুরে আসুন। বুঝতে পারবেন আগের সরকারের সঙ্গে আমাদের শাসন ব্যবস্থার পার্থক্য।’
প্রধানমন্ত্রী এদিন উত্তর-পূর্বে কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, সড়ক-রেল ও বিমান, এই তিন যোগাযোগ ক্ষেত্রেই ব্যপক পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘদিন কংগ্রেস শাসনের পরও ওই অঞ্চল কার্যত অবহেলিত ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বল পরিকাঠামোয় ভুগতেন সাধারণ মানুষ। এখন সেসব দূর হয়েছে। আর এখন দেশের সব স্থানের লোকের কাছেই উত্তর-পূর্বে ভ্রমণ করা এক মসৃণ অভিজ্ঞতা।
উত্তর-পূর্বের উগ্রপন্থী সমস্যা নিয়েও বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি জানান, ‘স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তিতে ৭৫০০০ উগ্রপন্থী হিংসার পথ ছেড়ে শান্তির রাস্তা বেছে নিয়েছে। সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে তারা। কয়েক দশক ধরেই উগ্রপন্থী সমস্যায় ভোগা মানুষরা এখন নিরাপদ জীবন কাটাতে সক্ষম হচ্ছেন।’
এক সপ্তাহ পরেই ত্রিপুরায় ভোট। তাই সংসদে ভাষণের সময় এদিন ওই রাজ্যের প্রসঙ্গ টেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ওখানে কয়েক লক্ষ লোক পাকা ঘর পেয়ে অত্যন্ত খুশি। আর তাদের সেই খুশিতে সামিল হতে নিজেকে সর্বদা আনন্দিত মনে হয়।’ এরপরেই মোদির সংযোজন, ‘আমি ত্রিপুরার উন্নয়ন নিয়ে যখন হীরা শব্দ প্রয়োগ করেছিলাম ওই সময় সড়ক, রেল, বিমান ইত্যাদি যোগাযোগ পরিকাঠামোয় প্রভূত পরিবর্তন আনার কথাই বলেছিলাম। আজ ত্রিপুরার মানুষ সেই উন্নয়নের সুফল লাভ করছেন।’