অনলাইন ডেস্ক : পোশাকি ভাষায় তাঁরা হলেন সন্দেহভাজন বিদেশি। এতদিন তাদের ঠিকানা ছিল রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারের ডিটেনশন সেন্টার। এবার তাদের সেখান থেকে নিয়ে তোলা হল এশিয়ার সর্ববৃহৎ ডিটেনশন ক্যাম্পে। অবশ্য সরকারি ভাষায় এর নাম ট্রানজিট ক্যাম্প। রাজ্যের গোয়ালপাড়ায় চালু হয়েছে প্রথম ট্রানজিট ক্যাম্প। সেই সঙ্গে ‘বিদেশি নাগরিক বাছাই বিতর্ক নয়া মাত্রা পেল। গুয়াহাটি থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোয়ালপাড়ার ট্রানজিট ক্যাম্প বা অস্থায়ী আস্থানায় শুক্রবার ৬৮ জন ‘বিদেশি নাগরিক’-কে ঢুকিয়ে ক্যাম্পটি বাস্তবে চালু করা হয়েছে।
অসমের বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে ফের মাথাচারা দিয়েছে সিএএ, এনআরসি এবং বিদেশি নাগরিক বাছাই সংক্রান্ত বিতর্ক। মানবাধিকার সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, গৌহাটি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট বিদেশি নাগরিক বাছাই সংক্রান্ত মামলায় বলেছে, বিদেশি সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের মধ্য যারা তিন বছরের বেশি সময় ডিটেনশন সেন্টারে আছেন, তাদের শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিতে হবে। বিদেশি নাগরিক বলে চূড়ান্ত ভাবে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল দ্বারা চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের মুক্ত জীবনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আটকে রাখা যাবে না।
কিন্তু অসম সরকারের শুক্রবারের সিদ্ধান্ত সেই রায়কে লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মহলের। ট্রানজিট ক্যাম্প অনেকটা মুক্ত কারার মতো। শর্তসাপেক্ষে সেখান থেকে দিনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বের হওয়া যাবে। কিন্তু ফিরে যেতে হবে ক্যাম্পেই। এতদিন বিদেশি নাগরিক হিসাবে সন্দেহভাজনদের ছয়টি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হত। সেগুলি সবই বিভিন্ন কারাগারের অংশ। জেলখানার কিছু অংশকে আলাদা করে আটক শিবির বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যদিও জেলখানার নিয়মকানুনের সঙ্গে ডিটেনশন সেন্টারের কোনও ফারাক নেই। আদালতে সরকারের এই সিদ্ধান্তও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আদালতের নির্দেশেই আলাদা জায়গায় ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সন্দেহের কারণে কাউকে আটকে রাখা যাবে না।
গোয়ালপাড়ার মাটিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পটি ২০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। সেখানে প্রায় তিন হাজার মানুষকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্য, মাটিয়াতে প্রথম পর্যায়ে নিয়ে আসা ৬৮ জনের অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অর্থাৎ প্রশাসন নিশ্চিত নয় তারা বিদেশি নাগরিক কিনা। তবু তাদের সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।