অনলাইন ডেস্ক : গত দুদিন ধরেই বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। এসবের পর শুক্রবার শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চণ্ডীচরণ রোডের বাসিন্দারা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ক্ষোভ উজাড় করে দিয়ে বলেন, সরকারি কাজের নামে তাদের জলে ডুবানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, চণ্ডীচরণ রোডের মুখে সদর রাস্তার উপর যে কালভার্ট রয়েছে তা চওড়া করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর জন্য বর্তমানে জল সরবরাহের পাইপ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক পাশে। এই কাজের দরুন কিছু খোঁড়াখড়ি করতে হয়েছে। চণ্ডীচরণ রোডবাসী অবশ্য জানিয়েছেন, ঠিক কিসের জন্য খোড়াখুড়ি করা হয়েছে তা তারা জানেন না। কারণ কাজের কোনোও ফলক নেই। তবে যেভাবে কাজ হচ্ছে তা দেখে তারা শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিকভাবে খোঁড়াখুড়ির দরুন, আগামী বর্ষায় তাদের জলে ডুবে মরতে হবে।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে চণ্ডীচরণ রোডের বাসিন্দা শ্যামল পাল, প্রশান্ত পাল, বাবুল দেব সহ অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংলগ্ন শিবকলোনীর বাসিন্দা আইনজীবী সৌমেন চৌধুরীও। তারা বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার তাদের কোনও অভিপ্রায় নেই। কিন্তু সরকারি কাজের নামে অবৈজ্ঞানিক পন্থা নিয়ে যদি তাদের ডোবানো হয়, তবে তো এর প্রতিবাদ করবেনই। তারা বলেন এমনিতেই অল্প বৃষ্টি হলে তাদের ঘরবাড়ি ডুবে যায়। কারণ বৃহত্তর বিলপার এলাকার জল নেমে আসে তাদের গলি দিয়ে। কিন্তু জল যে বেরিয়ে রাঙ্গিরখালে যাবে সেই ব্যাবস্থা যথাযথ নেই। একটা স্লূইসগেট থাকলেও তার ঠিক কাজ করে না। তাই জল বের হয় খুব ধীরগতিতে। এতে বৃষ্টির পর দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন হয়ে থাকে এলাকা।আর এবার যেভাবে খোড়াখোড়ি হচ্ছে এতে আরও তীব্র আকার ধারণ করবে এই সমস্যা। তাদের কথায়, পাবলিক স্কুল রোড দিয়ে বৃহত্তর বিলপার এলাকার জল বেরিয়ে আসার পর তা মেইন রোডের সংলগ্ন নালা দিয়ে অদূরে রাঙ্গিরখালে যাওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এতে চণ্ডীচরণ রোডে জমা জলের সমস্যাটা অনেক কমে যাবে। কিন্তু দেখা গেছে পাবলিক স্কুল রোড থেকে মেইন রোড হয়ে অদূরে রাঙ্গিরখাল পর্যন্ত অংশে নালা তৈরীর কাজ অনেকটা হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে এক ক্ষুদ্র অংশ দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে এমনিতেই। এই ক্ষুদ্র অংশে নালা তৈরি করাই হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, তাদের জমা জলের সমস্যা নিয়ে বারবার অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু বর্তমান সাংসদ রাজদীপ রায়, বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তী থেকে ধরে প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ পাল কেউই এসবে কর্ণপাত করেননি। উল্টে বৃহস্পতিবার রাতে কাজ চলাকালীন তারা যখন আপত্তি জানিয়েছিলেন,তখন দ্বীপায়ন চক্রবর্তী সেখানে হাজির হয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করেন বলেও অভিযোগ করেন শ্যামল পালরা। সঙ্গে ক্ষোভের সুরে বলেন, বিলপার এলাকায় রয়েছে দুই হাজার ভোট, এবং চণ্ডীচরণ রোডে রয়েছে দু’শত ভোট। খুব সম্ভবত ভোটের সংখ্যার এই তারতম্যের
দরুনই বিলপারকে জমা জলের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে তাদের বিপাকে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লব পাল, সিদ্ধার্থ শংকর পাল, রাধা দত্ত ও মাফি পাল প্রমুখ।
এদিকে চণ্ডীচরণ রোডের কাজ নিয়ে বিতর্কের মাঝে মুখ খুললেন বিধায়ক দীপায়ণ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, কাজ হচ্ছে চণ্ডীচরণ রোডবাসীকে জমা জলের সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি দিতেই। কিছু লোক এতে অনর্থক বাধা সৃষ্টি করতে চাইছেন। তবে যতই চেষ্টা চালানো হোক না কেন, সরকারি কাজ চলবে তার নিজস্ব গতিতেই। এক্ষেত্রে কোনও সমঝোতা করা হবে না।
দীপায়ন বলেন, নালার পরিসর সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া সহ দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা জমে থাকার দরুন জমা জলের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে চন্ডীচরণ রোড বাসীকে। তাই বর্তমানে নালা খোদাই করা হচ্ছে। এরপর মাপঝোঁক করে নালার জমি জবরদখল হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে তাও। যদি জবরদখল হয়ে থাকে তবে সেসব জমি উদ্ধার করে সেই হিসেবে তৈরি করা হবে নালা। এসবের পাশাপাশি পাকা নালা তৈরির জন্য আগামী ১৮ জানুয়ারি টেন্ডার ডাকা হবে। শুধু চণ্ডীচরণ রোড নয় উল্টোদিকে সঞ্জয় মার্কেটের সামনে যে অংশে এখনও নালা তৈরি হয়নি, সেই অংশেও একইসঙ্গে নালা তৈরির জন্য ডাকা হবে টেন্ডার। সঙ্গে সদর রাস্তায় যে কালভার্ট রয়েছে তাও চওড়া করা সহ চণ্ডীচরণ রোডের নালা হয়ে জল যাতে সহজে রাঙ্গির খালে পড়তে পারে তারও ব্যাবস্থা করা হবে। কালভার্ট চওড়া করার জন্যই বর্তমানে সরবরাহের পাইপ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একপাশে। আর এই কাজ শুরু করতেই কিছু লোক শুরু করেছেন হৈ-চৈ। তার কথায় এসব কাজ হয়ে গেলে, চন্ডি চরণ রোড সহ বৃহত্তর বিলপার এলাকার জমা জলের সমস্যা কমে যাবে অনেকটাই। সঙ্গে তিনি এও দাবি করেন, চণ্ডীচরণ রোড সহ সংলগ্ন এলাকার সিংহভাগ বাসিন্দাই চাইছেন কাজটা হোক। কিন্তু কিছুলোক ক্ষীনস্বার্থে এক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে চাইছেন। তা কোনও অবস্থায়ই মেনে নেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, বিলপার, চণ্ডীচরণ রোড দুটো এলাকাই শিলচরের অন্তর্ভুক্ত। আর তিনি শিলচরের বিধায়ক। দুই এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিই তিনি সমানভাবে দায়বদ্ধ। তিনি বিলপারের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।