রূপচর্চার টিপসে পাকীজা মঞ্জরী চৌধুরী
বৈজ্ঞানিক নাম সেসামাম ইন্ডিকম। আমরা সবাই একে তিল নামে জানি। শীতকালে তিলের নাড়ু কে না পছন্দ করে? নাড়ু ছাড়াও আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশে এই তিল বীজকে নানারকম ভাবে খাদ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে শুধু এর বীজই নয়, অতি প্রাচীন কাল থেকে ভোজ্য হিসেবে এবং রূপচর্চায় তিল তেলের ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। সারা পৃথিবী জুড়ে যদিও এই তেল পাওয়া যায়, তবে সবচেয়ে বেশি তিল তেল উৎপাদক দেশ হচ্ছে মায়ানমার। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় মালিশের তেল হিসেবে এর প্রয়োগ করা হত। এই তেল শরীরকে উষ্ণ করে তোলে; তাই শীতকালই হল এই তেল ব্যবহারের উপযুক্ত ঋতু।
তিল তেলে রয়েছে একাধিক ভিটামিন; যেমন ভিটামিন কে, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এছাড়াও আছে ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক, পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। তাই ভোজ্য তেল রূপে তিল তেলের নিয়মিত ব্যবহার আমাদের হৃৎপিণ্ড ও হাড়কে সুস্থ সবল রাখতে সহায়ক। এছাড়াও এই তেলে রান্না করলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে মনে করা হয়।
তবে শুধু রান্নার তেল হিসেবেই নয়, তিল তেলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়কর গুণাগুণ আমাদের ত্বক ও চুলের জন্যও বিশেষভাবে উপকারী। উষ্ণ প্রকৃতির এই তেল যেহেতু শীতকালেই বেশি আরামদায়ক, তাই শীতে চুল ও ত্বকের যত্নে এই তেল কীভাবে আমাদের সহায়ক হতে পারে আসুন দেখে নেওয়া যাক।
চুলের যত্নে —
১) তিল তেলে রয়েছে জীবাণু ও ছত্রাক প্রতিরোধী গুণ, যা বাইরের দূষণ ও নানা ছত্রাক সংক্রমণের হাত থেকে চুল এবং মাথার ত্বককে রক্ষা করে।
২) এই তেল চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা খুস্কির সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা তিল তেল চুলের গোড়ায় সপ্তাহে দুদিন ম্যাসেজ করলে ভালো ফল পাবেন। তবে এই তেল যেহেতু কিছুটা ভারি, তাই অল্প নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে সুবিধা হয়।
৩) চুলকে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে বাঁচিয়ে চুলের স্বাভাবিক রঙ ও ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে তিল তেলের জুড়ি নেই। তাছাড়া এই তেল চুলের অকালপক্কতা রোধ করতেও সাহায্য করে।
৪) উকুনের সমস্যা থাকলেও তিল তেল ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। বাজার-চলতি উকুন-নাশক শ্যাম্পু চুলকে রুক্ষ ও নিস্তেজ করে দেয়। তিল তেল ব্যবহারে এ ধরণের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে পরিমাণমত তিল তেলে দু তিনটে নিমপাতা নিয়ে একটু গরম করে চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করতে হবে ভালো করে। গোটা মাথায় সমানভাবে লাগাতে হবে, না হলে উকুনের সমস্যা দূর হবে না। দু ঘণ্টা এভাবে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দু বার এরকম করলে উকুনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
ত্বকের যত্নে –
১) এই তেলে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি অসাধারণ ময়শ্চেরাইজারের কাজ করে। তাই প্রতিদিন স্নানের আগে এই তেল সারা শরীরে ভালোভাবে ম্যাসেজ করে নেবেন। এভাবে নিয়মিত করলে শীতকালীন রুক্ষতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে নরম ও মসৃণ। বিশেষ করে মৃত কোষ দূর করতে তিল তেল চমৎকার কাজ করে।
২) ত্বকের বলিরেখা দূর করতে তিল তেল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই তেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের বার্ধক্যকে রোধ করে। রাতে ঘুমনোর আগে এই তেল কয়েক ফোঁটা নিয়ে সারা মুখে হাল্কা ভাবে ম্যাসেজ করুন। তারপর গরম জলে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ মুছে ফেলুন।
৩) অ্যাকনের সমস্যা দূর করতে অ্যালোভেরা জেলের সাথে তিল তেল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে পনেরো মিনিট মিশ্রণটি মুখে রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪) রোদের পোড়া ভাব দূর করা বা ত্বকের কোন রকম কালো দাগছোপ দূর করতে তিল তেল খুব উপযোগী। তাছাড়া ত্বকের যে কোন রকম ক্ষতেও এই তেল লাগালে উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ কমাতেও তিল তেলের ব্যবহার হয়ে থাকে।