অনলাইন ডেস্ক : শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে স্পা থেকে লোক আনিয়ে শরীর মালিশ, একের পর এক শিষ্যকে ঠকিয়ে বাড়ি-জমি-অর্থ আত্মসাৎ, রসিদ ছাড়া লক্ষ লক্ষ টাকা সংগ্রহ, শিষ্যপত্নীকে স্বামীর পকেট কেটে সেই টাকা সেন্টারে দান করার প্ররোচনা, কথায় কথায় মিথ্যাচার, আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানে একনায়কতন্ত্র কায়েম, আস্থাকে হাতিয়ার করে ভক্তের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া-সহ বহু গুরুতর অভি্যোগ উঠল প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী শিলচর চাঁদমারি সেন্টারের প্রধান পরিচালিকা জেউতি কলিতার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিস্ফোরণ ঘটান প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী শিলচর (চাঁদমারি) সেন্টারের ভক্তদের একাংশ। ভক্ত রিপন নাথ, সুমন্ত পাল, পীযূষ চৌধুরী, রামানুজ ভট্টাচার্য, মুন্না দেবনাথ, সুব্রত নাথ এবং জয়া ভট্টাচার্যরা বলেন, যোগীর বেশে ভোগীর জীবন কাটাচ্ছেন জেউতি কলিতা। শিষ্যদের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে এ পর্যন্ত কত লক্ষ (পড়ুন কোটি) টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি, অনুমান করা মুশকিল। জেউতি কলিতার ফাঁদে পা দিয়ে এযাবৎ বহু ভক্ত নিঃস্ব হয়েছেন, ভিটেমাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ক্ষুব্ধ ভক্তদের কথায়, আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঁড়িয়ে চাঁদমারি সেন্টারকে কার্যত অর্থ সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন জেউতি। এই কাজে তাকে মদত যুগিয়ে যাচ্ছেন সুসীম নাথ, সৌমেন পালচৌধুরী সহ আরও কয়েকজন শিষ্য। যারা নিজেরাই জড়িয়ে রয়েছেন দুর্নীতিতে। শহরের দ্বিতীয় লিংকরোড এলাকায় জলজীবন মিশনের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দেদার অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে সুসীম নাথের বিরুদ্ধে। সৌমেন পালচৌধুরী এক অসহায় বিধবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে তা ফিরিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদের সঙ্গে গোপন সমীকরণ রয়েছে জেউতি কলিতার। তবে আর নয়। এসব অপকর্মের জন্য তাকে (জেউতি কলিতা) আর শিলচর সেন্টারের দায়িত্বে দেখতে চাইছেন না কেউ-ই। শিষ্যদের দাবি মেনে তাকে এবার সরতেই হবে। নতুবা শিলচর সেন্টার এমনকি প্রয়োজনে গুয়াহাটিতে গিয়েও অবস্থান ধর্মঘট পালন করবেন ভক্তরা। এই অধর্ম আর মেনে নেওয়া হবে না।
আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও সেবা-সংস্কৃতির আদর্শ নিয়ে পরিচালিত ঈশ্বরীয় প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী চাঁদমারি রোড শাখা বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিতর্কের সূত্রপাত জনৈক শিষ্যা কণিকা শর্মার এক অভিযোগকে ঘিরে। সম্প্রতি বাঙালি নবনির্মাণ সেনার সহায়তায় শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বছর পঁচাশির নিঃসন্তান বৃদ্ধা কণিকা শর্মা জানান, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তাঁকে দেখভাল করা হবে, এই শর্তে চাঁদমারি রোডের বাড়ির দ্বিতল তিনি দান করেছিলেন সেন্টারের জন্য। সে অনুযায়ী সেখানে সেন্টার গড়ে তোলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখভাল তো দূর, ২০২২-র বন্যায় তাঁকে বাড়ি থেকে বিতাড়ন করেন জেউতি কলিতা। সেই থেকে তিনি বাড়ির বাইরে। সাংবাদিক সম্মেলনের পরদিন সেন্টারে গিয়ে জেউতি কলিতাকে প্রশ্ন করেন নবনির্মাণ সেনার কর্মকর্তা সহ শহরের সচেতন মহলের একাংশ। সে সময় কয়েকজন বিক্ষুব্ধ ভক্তকেও অকুস্থলে ডেকে নেওয়া হয় এবং তারা তাদের মতামত পেশ করেন। পরবর্তীতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করেন জেউতি কলিতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পালটা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সেন্টারের প্রধান পরিচালিকা কলিতার বিরুদ্ধে বোমা ফাটান ক্ষুব্ধ ভক্তদের একাংশ।
তারা বলেন, আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে একের পর এক মিথ্যাচার করে চলেছেন জেউতি কলিতা। তিনি দাবি করেছেন, বাড়ি থেকে কণিকা শর্মাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। মাঝেমধ্যে তিনি তার বাড়িতে এসে বিশ্রাম নিয়ে যান। ভক্তদের দাবি, মিথ্যাচার করছেন জেউতি কলিতা। এতসব ঘটে যাওয়ার পরও কণিকা শর্মা এখনও বাড়ির বাইরে। এবং এই সত্যটা বুঝতে গেলে রকেট সায়েন্স জানার প্রয়োজন পড়ে না। উপায় না পেয়ে তিনি এই ঘটনার নেপথ্যে অসমীয়া বিদ্বেষের গালগল্পও ফেঁদেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারীর ভক্তরা সবাইকে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে বিশ্বাস করেন। এই সংস্থার সঙ্গে সবাই জড়িত। এমনকি ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আছেন। তাই এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। তাঁরা আরও বলেন , দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, স্বজনপোষণ এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ থাকলেও উপরমহলের কেউ এসরকানে তুলছেন না। জেউতি কলিতাকে নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও তদন্ত হয়নি। এখন তাঁরা চাইছেন, অবিলম্বে চাঁদমারি রোড শাখা থেকে তাকে অপসারণ করা হোক। কেননা, সংগঠনের অভ্যন্তরে এই ধরণের বিতর্ক ও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঈশ্বরীয় প্রজাপতি ব্রহ্মাকুমারী সংগঠনের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে আঘাত করছে। যেখানে আধ্যাত্মিকতার ছায়ায় মানুষ খুঁজে পান মানসিক শান্তি, সেখানে এমন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অত্যন্ত লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। সংগঠনের উচ্চপর্যায় এই অভিযোগের তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি না, বলবে সময়। তবে স্থানীয় স্তরে এই ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং সাধারণ মানুষের ভরসা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।