অনলাইন ডেস্ক : স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার উইমেন্স কলেজ শিলচরের মালতি শ্যাম উইমেন্স স্টাডি সেন্টারের পক্ষ থেকে ষান্মাসিক পত্রিকা উত্তরণের প্রথম সংখ্যা উন্মোচিত করা হয়। কলেজের গ্রন্থাগারিক ও মালতি শ্যাম উইমেন্স স্টাডি সেন্টারের কনভেনর ডঃ সরিতা ভট্টাচার্যের সম্পাদিত এই ষান্মাসিক পত্রিকা উত্তরণের উন্মোচন করেন কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফাল্গুনী দে ও দুই প্রাক্তন অধ্যাপক গীতা দত্ত, অরুন্ধতী মজুমদার এবং মালতি শ্যামের পৌত্রী চন্দ্রিমা শ্যাম। তার সাথে, কলেজের রিসার্চ এবং পাবলিকেশন সেলের সম্পাদিত একটি বই “সময় সমাজ ও সাহিত্যের” ও উন্মোচন করা হয়। বইটির সম্পাদনা করেছেন ডক্টর সুস্পিতা দাস।
দুটি বইয়ের উন্মোচন লগ্নে উপস্থিত ছিলেন কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডক্টর দেবশ্রী দত্ত, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর সুস্পিতা দাস ও আই কিউ এ সি কোঅর্ডিনেটর ডক্টর শান্তনু দাস। উল্লেখ্য, ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট ও এক্রেডিটেশন কাউন্সিল উইমেন্স কলেজ শিলচরে একটি উইমেন্স স্টাডি সেন্টার খোলার জন্য সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশ মেনে, বিগত ২৮/৬ /২০০২৩ ইং তারিখে উইমেন্স কলেজে খোলা হয় উইমেন্স স্টাডি সেন্টার এবং সেন্টারটি উৎসর্গকৃত করা হয় বিংশশতকে বরাক উপত্যকায় নারী স্বাধীনতার অন্যতম কারিগর মালতি শ্যামের নামে। কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর দেবশ্রী দত্ত তাঁর প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন এই স্টাডি সেন্টার খোলার উদ্যোগ বহুদিন ধরে চলছিল এতে বিশেষ ভূমিকা ছিল কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের। পরবর্তী সময়ে কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একান্ত প্রচেষ্টায় স্টাডি সেন্টারের যাত্রা শুরু হয় এবং এই ষান্মাসিক পত্রিকা উন্মোচন সেন্টারের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। মালতি শ্যামের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ডক্টর দত্ত বলেন তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করলেও তার চিন্তাধারা ছিল কয়েক যুগ এগিয়ে। পরাধীন ভারতে শিলচরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে মহিলাদের রাজনৈতিক, মানসিক ও সর্বোপরি সর্বাঙ্গীন উন্নতির ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম উদ্যমী ব্যক্তিত্ব ছিলেন মালতি শ্যাম। ডক্টর দত্ত উল্লেখ করেন মালতি শ্যাম কিভাবে প্রথমবারের মতো মহিলাদের নিয়ে শিলচরের এনআরডিআই হলে একটি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেছিলেন।
কলেজের স্মৃতি রোমন্থন করে প্রাক্তন অধ্যাপক গীতা দত্ত বলেন এই অঞ্চলের মহিলাদের সুস্থ শৈক্ষিক পরিবেশ ও শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে কলেজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে এবং তিনি এই কলেজে যোগদান করেন ১৯৬৬ সালে। সেই সময় থেকেই কলেজের পরিবেশ একটি পরিবারের মতো হয়ে আসছে এবং বর্তমান সময়ও তার ব্যতিক্রম নেই বলেই তিনি মনে করেন। কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ফাল্গুনী দে বলেন বর্তমান সমাজে বিশেষ করে নারীদের এক বিরাট নিরাপত্তা হীনতার পরিবেশে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। তাই তাদের উচিত নিজেদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। নিজের কর্মস্থানকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি উল্লেখ করে তিনি বলেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক শিক্ষিকাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কঠিন সময়ও পাশে দাঁড়িয়েছে তাই এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মনের টান চিরদিন জড়িয়ে থাকবে। প্রাক্তন অধ্যাপক অরুন্ধতী মজুমদারের কথায়, বহুদিন পর কলেজের কোন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত হতে পেরে এক বিশেষ আনন্দের অনুভূতি হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে এই মালতি শ্যাম উইমেন্স স্টাডি সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়েছে সেই উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে যাতে সার্থক হয় তার জন্য তিনি শুভেচ্ছা ও আশা ব্যক্ত করেন। নিজের ঠাকুমার স্মৃতি উল্লেখ্য করে চন্দ্রিমা শ্যাম ব্রিটিশ শাসন কালে তাঁর ঠাকুমার অসীম বীরত্বের কথা ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন। কলেজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চন্দ্রিমা বলেন কলেজের উন্নতির স্বার্থে তিনি সব সময় পাশে থাকবেন।
আই কিউ এ সি কোঅর্ডিনেটর ডক্টর শান্তনু দাস ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য দিনের শুরুতে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকা ও অফিস কর্মচারীদের উপস্থিতিতে যথাযথ মর্যাদায় ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ দেবশ্রী দত্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন যে এই দিনটি অনেক আত্মত্যাগ ও পরিশ্রমের ফলস্বরূপ ভারতবাসী দেখতে পেয়েছিলেন এবং দেশের সেই বীর সন্তানদের জীবনী ছাত্রীদের প্রতিদিন স্মরণ করা উচিত। দিনের অপর একটি অনুষ্ঠানে, অমৃত বৃক্ষ আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষক শিক্ষিকা সহ ছাত্রীরা বৃক্ষ রোপন করেন।