অনলাইন ডেস্ক : নিযুক্তি সহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে কাছাড়ে সাম্প্রতিককালে জালিয়াতি করে বিভিন্ন সার্টিফিকেট তৈরির বেশকিছু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল এসবের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাদের নামে সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে, তাদের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে শিলচর থানা এলাকার তোপখানা জিপির শিবাচল। যেভাবে গোটা ব্যাপারটা ঘটছে এথেকে সন্দেহ করা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে খুব বড় মাপের কোনও চক্র।
এবার প্রকাশ্যে এসেছে চা ও প্রাক্তন চা জনজাতির সার্টিফিকেট নিয়ে জালিয়াতির কাহিনী। এঅঞ্চলে চা ও প্রাক্তন চা জনজাতির সার্টিফিকেট ইস্যুর ক্ষেত্রে যাচাইয়ের পর সুপারিশ করে থাকে বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সম্প্রতি ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের নজরে আসে, একজনের নামে ইউনিয়নের প্যাডে সিল-স্বাক্ষর বসিয়ে সার্টিফিকেট ইস্যুর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে করা হয়নি তা। এ ধরনের সুপারিশের ক্ষেত্রে স্বাক্ষর করে থাকেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। এই সুপারিশ পত্রে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ গোয়ালার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। ইউনিয়নের এক সূত্র জানান, জালিয়াতি হলেও আশ্চর্যজনকভাবে সবকিছুই করা হয়েছে একেবারে নিখুঁতভাবে। আপাতদৃষ্টিতে তা বোঝা খুবই মুশকিল। আর এতে আবেদনকারীর ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাঘাট পোস্ট অফিসের অধীন শিবাচল গ্রাম। জালিয়াতির ব্যাপারটা নজরে আসার পর রাজদীপ গোয়ালা ইতিমধ্যে এনিয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ব্যাপারটা জানানো হয়েছে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদেরও। সন্দেহ করা হচ্ছে হয়তো এধরনের জালিয়াতি আরও হয়েছে। শিবাচলের ঠিকানা লিখিয়ে জালিয়াতি করে সার্টিফিকেট তৈরী নতুন কিছু নয়।
জানা গেছে, বিগত দিনে শিবাচলের বাসিন্দা সেজে বিভিন্ন সার্টিফিকেট তৈরি করিয়ে সেসবের দৌলতে সরকারি পদে নিযুক্ত অনেকেরই কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি ওই গ্রামে। আর এমন ব্যাপার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটেছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনীতে নিযুক্তির ক্ষেত্রে।জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে জানা গেছে, নিযুক্তির পর সংশ্লিষ্ট বাহিনী থেকে নিয়মমাফিক “ভেরিফিকেশন”-এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নথিপত্র এজেলায় পাঠানোর পর শিবাচলে সেসব প্রার্থীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনের সূত্রটি জানান, শিবাচলের বাসিন্দা হিসাবে যেসব নিযুক্তিপ্রাপ্ত প্রার্থীর তথ্য যাচাই করতে বলা হয়েছে বা হচ্ছে, এদের মধ্যে অনেকেরই পদবী এমন যে এসব পদবীর কোনও লোকই নেই ওই গ্রামে। আর তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, সার্টিফিকেটগুলোতে ইস্যুকারী সার্কল অফিসার বা অতিরিক্ত জেলাশাসকদের স্বাক্ষরও জালিয়াতি করে অনেক ক্ষেত্রে প্রায় হুবহু মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রটির কথায়, সবকিছু দেখে শুনে মনে হচ্ছে এই জালিয়াতির পেছনে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা কোনও বড়সড় চক্র। কারণ যাদের নামে সার্টিফিকেট রয়েছে মনে হচ্ছে এরা ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। তবে এই চক্রে নিশ্চিতভাবে জড়িত রয়েছে এজেলারও কেউ কেউ। অন্যথায় এখানকার কোন আধিকারিক
বা কোন সংস্থার কোন কর্মকর্তা কোন দায়িত্বে রয়েছেন এবং তার স্বাক্ষর কেমন, এতোটা জানা সম্ভব হতো না বাইরের কারোও পক্ষে।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরে সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে দুই পাকিস্তানি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত। এর সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে নিযুক্তির ক্ষেত্রে বহু জালিয়াতির কাহিনী। খবরের সূত্র অনুযায়ী, এতে বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং অসমে থাকা চক্রের সংযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এই চক্রের সঙ্গে শিবাচল পর্বের সংযোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না । এ জেলায় যথাযথ তদন্ত হলে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক কিছুই।