অনলাইন ডেস্ক : বহু টালবাহানার পর শেষমেষ শহরের রাঙ্গিরখাঁড়ি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালালো জেলা প্রশাসন। এই উচ্ছেদ না হওয়ার ফলে এবছর এলাকায় নেতাজীর নতুন মূর্তি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিকদের কথাবার্তায় একসময় মনে হয়েছিল, এটা আটকাতে কিছুটা রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। তবে এবার কোনও বাধা ছাড়াই তারা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলেন এবং ভেঙে দেওয়া হল এলাকার এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর বড়সড় অট্টালিকার একটা কিছুটা অংশ।
জেলা প্রশাসনের আধিকারিক অরুণজ্যোতি দাস জানিয়েছেন, আগে থেকেই এলাকায় তারা জরিপ করেছেন এবং কতটুকু এলাকা ভাঙতে হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বায়োমেডের নতুন বিল্ডিং নিয়ে মূল সমস্যা ছিল। এলাকার বাকি ব্যবসায়ীরা আমাদের সহায়তা করেছেন এবং কেউ কেউ নিজেই তাদের অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকান ভেঙে দিয়েছেন। বায়োমেডের নতুন বিল্ডিংয়ের সামনে ৪.৯ ফুট জায়গা অবৈধভাবে দখল করা হয়েছিল, আমরা সেটাই এবার ভেঙ্গে দিচ্ছি। ওই এলাকায় সরকারি জমির উপর একেবারে কংক্রিট ব্যবহার করে সিঁড়ি সহ বেশ কিছু জিনিস গড়ে তুলেছিলেন বায়োমেডের মালিক। সেগুলো ভাঙতে আমাদের সময় লাগছে কারণ এর ভেতর রড ইত্যাদি রয়েছে। সোমবার গোটা দিন কাজ চলার পরেও এলাকা পরিষ্কার হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার শুরু হবে উচ্ছেদ অভিযান। নির্ধারিত এলাকা পরিষ্কার হওয়ার পর্যন্ত চলবে কাজটি।’ গতবছর রাঙ্গিরখাঁড়ি পয়েন্টে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ব্রোঞ্জের নতুন মূর্তি স্থাপনের লক্ষ্যে এক অভিযান শুরু করেছিলেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। কথা ছিল এবছর ২৩ জানুয়ারির আগে মূর্তি স্থাপন হবে, সেই অনুযায়ী মূর্তি বানানোর কাজও শেষ হয়। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তি বসানোর আগে এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যে কাজ হওয়ার কথা, সেটা হয়নি শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায়। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী ভুবাসন, বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারি জমি দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে রাঙ্গিরখাঁড়ি সেতু থেকে একদিকে গোপালের আখড়ার গলি এবং অন্যদিকে তরণী রোড পর্যন্ত ডিমার্কেশন সম্পন্ন হয়। তবে ওই জমি দখল মুক্ত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাঁধা ছিল। শোনা গেছে, বায়োমেডের স্বত্বাধিকারী এটা আটকাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের কাছে গেছেন এবং আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টাও করেছেন। তবে এবার সব বাঁধা কাটিয়ে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে। সোমবার সকালে যখন উচ্ছেদ শুরু হয়, বায়োমেডের নতুন বিল্ডিং এর আশে পাশে থাকা দোকানের মালিকরা নিজে থেকেই তাদের দোকানের সামনের দিকের অংশ খালি করে দেন। উচ্ছেদ অভিযানের আগে তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, সেখানে বলে দেওয়া হয়েছিল কতটা জায়গা সরকারের। এমনকি এই অভিযান শুরু করার আগে প্রশাসনের বিশেষ দল সেখানে গিয়ে এলাকা নির্ধারণ করে স্থানীয় লোকেদের জানিয়ে আসে। তবে শুধুমাত্র বায়োমেডের মালিক ছাড়া বাকি সবাই প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন, বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। কাকতলীয় ভাবে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ কুমার পালের বিজেপিতে প্রত্যাবর্তনের ঠিক পরের দিন। তিন বছরে আগে লকডাউন চলাকালীন বায়োমেডের মালিক গুজব ছড়িয়ে ছিলেন, পত্রিকার মাধ্যমে সমাজে করোনা ছড়াচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোক। ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক মহলে তার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির সহায়তায় তিনি বেঁচে যান। তখন রাঙ্গিরখারী এলাকায় তার বিরাট অট্টালিকা গড়ে তোলার কাজ চলছিল। এলাকার অনেকেই তখন অভিযোগ করেন, এটা অবৈধভাবে গড়ে উঠছে, তবে তখন এব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করেছিলেন প্রশাসনের আধিকারিকরাও।