অনলাইন ডেস্ক : বলতে গেলে সামান্য বিরতি দিয়েছিল প্রকৃতি! আর এই বিরতির পরই ফের সেই ভয়ংকর রূপে পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড়। রবিবার যখন সমগ্র অসম ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল, তখনই সড়কপথেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দক্ষিন অসমের এই উপত্যকা। সঙ্গে ত্রিপুরা, মিজোরামও। সৌজন্যে, ধস! এবং এবারও ধস পড়লো সেই কুখ্যাত কুলিয়াঙে, বাদ যায়নি সোনাপুরও। এই প্রতিবেদন যখন তৈরি হচ্ছে, পরিস্থিতি তখন অপরিবর্তিত।
সোনাপুর, উমকিয়াং, কুলিয়াং, রাতাছড়া ইত্যাদি এলাকা নিয়ে নতুন করে কেচ্ছা শুনানোর কিছু নেই। আগে তো কেবল বরাক, ত্রিপুরার সচেতন মানুষই ওই কুখ্যাত স্থানগুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকতেন। এখন প্রায় সব লোকই মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড় ও তার দূর্গতির কাহিনি জানেন। মাস দেড়েক আগে নাকানিচুবানি খাইয়ে ওই পাহাড় কিছুটা বিরতি নিয়েছিল। বন্ধ রেখেছিল গড়িয়ে নীচে নামার প্রতিযোগিতা। তবে ৬নং জাতীয় সড়কের দূর্ভোগ অবশ্য কমেনি। প্রতিদিন যানজট কিংবা গর্তের মিছিল পেরিয়ে এপার-ওপারে পারাপার অথবা মাল বোঝাই লরি পাল্টে যাওয়া ইত্যাদি ঘটেছে বিরামহীন। তবুও পেটের তাগিদে, দায়িত্বের খাতিরে কিংবা গত্যন্তর না পেয়ে এই ভগ্নদশা জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে বরাকবাসীদের।
কিন্তু রবিবার ‘আফটার দ্য ব্রেক’ বড়সড় ধস পড়েছে কুলিয়াঙে। ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার পাহাড়ের আঁকাবাঁকা জাতীয় সড়কের যেখানে কেবল এ বছরই কমেও ধস নেমেছিল ১০ বার, এবারও সেই একই স্থানে পড়লো ধস। বলতে গেলে অন্যান্য বারের চাইতে এবার আরও মারাত্মক, আরও ভয়ানক! অন্যান্য বার জাতীয় সড়কের চিহ্ন চাক্ষুষ করা গেলেও এবার সেই জো নেই। পুরো সড়কজুড়েই কাদা-মাটি আর থৈ থৈ বিচ্ছিরি জল। রাজপথের উপর কোমর অব্দি কাদা। একটি মাল বোঝাই লরি তো পুরোপুরি কাদার কব্জায় চলে গিয়েছে। চালকরা কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়ে সরে পড়লেও লরি রয়ে গেছে ‘তৎকালীন’ জাতীয় সড়কে। ঘটনাস্থলের দু’পাশে যে কতো গাড়ির লাইন, তার ইয়ত্তা নেই। আছে এম্বুল্যান্স, মুমূর্ষু রোগীও। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, সোনাপুর সুড়ঙের মুখেও রবিবার পড়েছে ধস। তবে কুলিয়াঙের তূলনায় কম বিপজ্জনক। সোনাপুরের ধস কিছুটা হাল্কা পাহাড়ি মাটি আর জল মিশ্রিত। বেশ কিছু সময় গলগলিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে এগুলো নামার পর অবশ্য থেমে যায়। পরে যথারীতি এনএইচআইডিসিএল কর্মীরা এক্সেভেটর নিয়ে এসে সুড়ঙের মুখ পরিষ্কার করে দেন। তবে তা করতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। এর আগে সুড়ঙের উভয় দিকে থাকা লোকরা ইশ্বরের নামই নিচ্ছিলেন। কারণ তাঁরা জানেন, কোনও সরকার নয়, শিলচর-শিলং রোডের এই লাগাতার বিপদ থেকে তাঁদেরকে রক্ষা করতে পারেন কেবল ইশ্বর-ই!