অনলাইন ডেস্ক :এলেন, দেখলেন, আর জয় করলেন। বর্ষাপাড়ার ব্যাটিং প্যারাডাইসে বিরাট জয়। অনন্য এক শতরানে অসমবাসীকে বিহুর উপহার দিয়ে ভারতকে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজে এগিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি। আর কোহলির আগ্রাসনের মধ্যে ফেয়ার প্লে ভরা শতরান দাসুন সানাকার। ঘড়ির কাটা ধরলে তখন সময়টা তিনটেই হবে। আউট হয়েছেন শুভমান গিল (৭০)। আচমকাই কানে ভেসে উঠল মাঠের চেনা পরিচিত সেই ‘চিয়ারটা ‘। হ্যাঁ!! বিরাট, বিরাট। রাজকীয় মেজাজেই তখন বর্ষাপাড়ার ২২ গজের পাড়ায় প্রবেশ কিং কোহলির। হিটম্যানের সঙ্গে নিজেকে খুঁজে বেড়ানো গিলের ১৪৩ রানের দারুণ একটা পার্টনারশিপে ‘চাপটাপ’ কে গিলে খেয়ে টিমইন্ডিয়ার রানের অজগরটা হাঁসফাঁস করছে শুধু। তারপরও ফ্যানদের আশা প্রত্যাশা। নিন্দুকদের শকুনের দৃষ্টি। তবে বিরাটের এসবে নজর নেই। হয়তো জানেন কিংবদন্তী হতে গেলে সমালোচনা সহ্য করতে হবে একটু -আধটু। লোকে ঈশ্বরকে ( পড়ুন শচীন তেন্ডুলকর ) বাদ দেয়নি, আর তিনি তো মানুষ। অবশ্যই বর্ষাপাড়ায় আবেগে ভরা স্টাইলিস্ট শতরানটা বিরাটের এক্সক্লুসিভ কেরিয়ারটাকে আরও উদ্ভাসিত করবে। তাই না।ব্যাটিং প্যারাডাইসে টস হেরে যখন টসে হেরে প্রথমে প্যাড লাগানোর ডাক পেলেন, ব্লু আর্মির কমান্ডার রোহিত শর্মা হতাশ হননি কিঞ্চিৎ পরিমাণও। বরং ধারাভাষ্যকারকে হেসেই বলে দিলেন টসে জিতলে ব্যাটই নিতেন। কথায় বার্তায় রোহিত বুঝিয়ে দিতে চাইছিলেন টিম ইন্ডিয়া একটা বিশেষ ‘মিশনে”‘ রয়েছে। অর্থাৎ দেশে খেলতে যাওয়া বিশ্বকাপের এভাবেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হবে। যাতে টাফ একটা টিম তৈরি করা যায়, যারা দুদে দেশগুলোকে হারিয়ে দিতে পারে নির্দ্বিধায়। যেমন শেষ একদিনের ম্যাচে দ্বিশতরানকারী ঈশান কিষান, টি ২০’র সুপারস্টার সূর্যকুমার যাদবকে না রেখে দ্রাবিড় প্লেয়ার লিস্টে নাম লিখলেন শুভমান গিল, হার্দিক পান্ডিয়া, শ্রেয়াস আয়ারদের। আসলে বড় আসরের জন্য ডিফারেন্ট একটা কম্বিনেশণ তো লাগবেই। শুভমান গিল (৭০) শুরুর দিকে যেভাবে হিটম্যানের প্রেসার কমিয়ে দেন, বুঝাই যায়নি এই ছেলেটা সম্প্রতি কয়েকটা সিরিজে একেবারেই খেলতে পারেনি। ব্যাকফুটে গিলের অসাধারণ পাঞ্চগুলি ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মত ছিল। সত্যিই সুখের স্বর্গে রয়েছে টিম ইন্ডিয়া। দ্বিশতরান করেও ঠাই হচ্ছে না কিষানের। গিলের নান্দনিক ব্যাটিং দেখে আরেকটা ছেলের কথা মনে পড়ছিল। পৃথ্বী শ, কি ছিল আর কি হয়ে গেল ছেলেটার। ট্যালেন্ট নিয়েও আজ নো হোয়ার। রোহিত (৮৩) ছিলেন সহজাত মেজাজে। হুক, পুল সবই মারলেন, শুধুই শতরান করতে পারেননি। গিল – রোহিত পার্টনারশীপে চাপের কাজটা শেষ করে দিয়েছিল। একেবারে সাজানো প্লাটফর্মের উপর ব্যাট করতে আসেন কিং কোহলি (১১৩)। বর্ষাপাড়াকে তাঁতিয়ে রাখতে এক্কা দুক্কা নিলেন। আবার সুযোগ পেলেই দৃষ্টিনন্দন চার মারলেন। হাঁকালেন ছয়ও। চিয়ারে শিয়ারে বর্ষাপাড়া বুঝিয়ে দিয়েছিল, বিরাটের ব্যাটিং দেখে সেকেন্ডের জন্যও বোরিং ফীল হয়নি। আলোচনা সমালোচনায় বারবার তাঁর ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, এক পরিণত বিরাটকে কিন্তু পেয়ে গেছে টিম ইন্ডিয়া। যা অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অনেককিছুই দিতে পারে ভারতকে। শ্রেয়াস (২৮), লোকেশ রাহুলরা (৩৯) সামান্য ধৈর্য দেখাতে পারলে ৪০০ আর দূর ছিল না মঙ্গলবার। রাজিতা, হাসারঙ্গা শ্রীলংকার কোনো বোলারকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাজিতা তিন উইকেট পেলেন বটে, রান দিলেন দু হাত ভরে। হিসেবের পাটিগণিতে সামান্য হেরফের হলে রান দেওয়ার শতরান করে ফেলতেন রাজিতা। প্রতিপক্ষ যখন ৩৭৪ রানের টার্গেট ছুড়ে দেবে তখন প্রতিপক্ষের তেমন কিছু একটা করার থাকে না। রানের ধসতলে আপনি চাপা পরবেন, এটাই বুঝি ভবিতব্য। এক দুটি বড় শট ছাড়া মিরাকেল কিছুই করতে পারেনি শ্রীলংকা। আত্মসমর্পণ করেছে এক ক্রিকেটিয় পাওয়ার হাউসের কাছে। লজ্জা নেই, দাপুটে একটা ঝড় তছনছ করে দিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রের ক্রিকেটিয় সভ্যতাকে। মূলত বিরাট শতরান ম্যাচটাকে ‘কিল’ করে দেয়। দ্বিতীয় হাফে ডিজে বাবুর গুনগুননি ছাড়া কিছুই ছিল না। সিরাজদের বিরুদ্ধে তো ‘নিয়মরক্ষার ‘ ব্যাটিংই করেছে সাঙ্গাকারার দেশ। তারপরও তাদের প্রাপ্তির ভাড়ার সমৃদ্ধ করেছে অধিনায়ক দাসুনের ১০৮ রানের ইনিংস। তারপরও শ্রীলংকা ম্যাচ হেরে যায় ৬৫ রানে। উল্লেখ্য আট উইকেটে ৩০৮ রান করে অতিথিরা।