অনলাইন ডেস্ক : ফের বরাক উপত্যকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাইক আরোহী ছিনতাইবাজরা। বুধবার শিলচরে দু’দফায় ছয় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার করিমগঞ্জ শাখায়ও সন্দেহভাজন এক ছিনতাইকারীকে দেখা যায়। ছিনতাইকারীদের এমন তৎপরতার দরুন অর্থ খোয়ানোর পাশাপাশি প্রাণ নিয়েও সংশয়ে ভুগতে শুরু করেছেন উপত্যকাবাসী।
ছিনতাইকারীরা অর্থ হাতিয়ে নিতে যেভাবে শিকারদের দিকে তীব্রগতিতে ধেয়ে এসে বেপরোয়াভাবে টেনে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এমন আশংকার। বুধবার শিলচরে ছিনতাইবাজদের শিকার হয়েছেন বাগপুরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বড়ভূঁইয়া ও তার সঙ্গী নুরুজ্জামান লস্কর এবং শহরের হাইলাকান্দি রোড মদনমোহন পার্ক (লেন)-এর বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কর্মকার নামে এক ব্যক্তি। প্রথম শিকার হন নজরুল ইসলাম ও নুরুজ্জামান। দুপুর দেড়টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে সোনাই রোডে পেস্কার জাঙ্গালের কাছে। নজরুল ইসলামরা জানান, বিগত দিনে তারা সোনাই রোডের আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের শাখা থেকে গোল্ড লোন নিয়েছিলেন। বুধবার লোনের টাকা মিটিয়ে দিয়ে স্বর্নালঙ্কার ফেরত নিয়ে নেন। স্বর্ণালংকার ব্যাগে ঢুকিয়ে এরপর যান স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নিউ শিলচর শাখায়। ওই ব্যাংক থেকে তিন লক্ষ টাকা উঠিয়ে একই ব্যাগে রেখে বাইকে চড়ে রওয়ানা হন সোনাই রোড হয়ে। পেশকার জাঙ্গালের কাছে পৌঁছার পর হঠাৎ করে পেছন দিক থেকে দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসে একটি বাইক। ওই বাইকে ছিল দুজন আরোহী। ধেয়ে আসা বাইকটির একজন আরোহী তাদের হাতে থাকা টাকা ও সোনার ব্যাগটি চলন্ত অবস্থায়ই ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ছিনতাইকারীরা ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার মাঝে তারা ঢাল সামলাতে না পেরে বাইক সহ ছিটকে পড়ে আহত হন।
এই ঘটনার প্রায় দু’ ঘন্টা পর বিকেল তিনটে নাগাদ হাইলাকান্দি রোডে মদন মোহন পার্কের মুখে একইভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয় বিশ্বজিৎ কর্মকারের টাকার ব্যাগ। বিশ্বজিৎ বাবু জানিয়েছেন, তিনি এইচডিএফসি ব্যাংকের হাসপাতাল রোড শাখা থেকে তিন লক্ষ টাকা উঠিয়ে স্কুটিতে চড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। মদনমোহন পার্ক-এর কাছে পৌঁছে বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাওয়ার সময় পেছন থেকে আসা বাইকের আরোহী দুষ্কৃতীরা তার টাকার ব্যগটি ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় টানাটানিতে তিনিও স্কুটি সহ ছিটকে পড়ে আহত হন।
শুধু নজরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান বা বিশ্বজিৎ কর্মকার এই তিনজনই যে আহত হয়েছেন এমন নয়। বিগত দিনে শহরে এমন ছিনতাইকারীদের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শহরের প্রেমতলা এলাকায় ডলুর বাসিন্দা সমরু নায়েক নামে এক বৃদ্ধ ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ টাকা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা তার হাত থেকে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়।
হ্যাচকা টান মেরে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় সমরুবাবুকেও রাস্তার উপর অনেকটা ঘষটে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। সেই ঘটনায় সমরুবাবু বেশ আহত হয়েছিলেন। একইভাবে ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি তারাপুরে ছিনতাইবাজরা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে বেশ আহত হন উকিল বাজার এলাকার বাসিন্দা শঙ্কর পাল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। এমন ঘটনার সংখ্যা খুব কম নয়। বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার বেলা যে কোনও মায়া মমতার ধার ধারবে না, তা খুবই স্বাভাবিক। তবে তাদের এই বেপরোয়া মনোভাবের দরুন জনমানসে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট আতঙ্কের।
লিংক রোড এলাকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী সুনীল দেব বলেন, বুধবারের দুটি ঘটনা, তার মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। তিনিও মাঝে মাঝে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নিউ শিলচর শাখায় টাকা উঠাতে যান। বর্তমানে তার মনে আশঙ্কা জেগে উঠেছে, এই ছিনতাইবাজদের দৌলতে টাকার সঙ্গে সঙ্গে না প্রাণটাও বিসর্জন দিতে হয়। সমাজকর্মী সাধন পুরকায়স্থও আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, যেভাবে ঘটনাগুলো ঘটছে এতে বড় ধরনের অঘটনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি ছিনতাইবাদদের সনাক্ত করতে শহরের মোড়ে মোড়ে এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে সিসিটিভি লাগানোর উপর জোর দেন। সঙ্গে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে যাতে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয় এই দাবিও জানান তিনি। এদিকে বুধবারের দুটি ঘটনা নিয়ে থানায় এজাহার দায়ের করা হলেও এ পর্যন্ত ধরপাকড়ের খবর নেই। প্রসঙ্গত বিগত দিনে এধরনের ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে পুলিশ শনাক্ত করেছিল পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ির বরুন গ্যাং কে। ধরাও পড়ে ওই গ্যাং-এর একজন রবি সিং ওরফে রাজেন্দ্র গোয়ালা। এরপর আরেক দফা ছিনতাই শুরু হলে গ্রেফতার করা হয় লক্ষ্মীপুরের উজান তারাপুর এলাকার রকিবুল হোসেন ওরফে রকি ও তার সঙ্গীদের। তবে এবার কারা নতুন করে ছিনতাই শুরু করেছে তা এখনও স্পষ্ট হয়ে উঠেনি।