অনলাইন ডেস্ক : শান্তিপূর্ণ ভোটে রক্তের ছাপ লাগলো কাটিগড়ায়। তা-ও একেবারে শুরুতে। বুথ দখলের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দু’টি সেন্টারে দু’পক্ষের মারপিটে জখম হয়েছেন মোট ৮ জন। প্রচন্ড গরমে ভোটকেন্দ্রে অসুস্থ হয়েছেন দুই ভোটকর্মী সহ ৩ জন। পুলিশের এলোপাতাড়ি লাঠি চালনায় আহত হয়েছেন দুই মহিলাও। তাছাড়া একাধিক ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহন চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। ভোট বয়কটও করেছেন একটি ওয়ার্ডের দুশোর মতো ভোটার।কাটিগড়া বিধানসভা কেন্দ্রে এবারের পঞ্চায়েত ভোট ছিল নানা উপাদানে ভরা। কোথাও মারপিট তো কোথাও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে দিন গুজরান করেন গণদেবতা। বাদ যায়নি কাটিগড়ার বুকে থাকা শ্রীভুমির অংশও। সমানতালে পাল্লা দিয়েছেন রাজারটিলা-উমরপুর জেলা পরিষদ কেন্দ্রের এই ভোটাররা। জানা যায়, কাটিগড়ার প্রথম অঘটন ঘটে ফুলবাড়ি-তারিনীপুর জিপির ৮৭৬ নং বোয়ালিপার এলপি স্কুলে। বুথ দখলের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মারপিট বাঁধে। মহিলা সংরক্ষিত ওই ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থীদের স্বামী, ভাই, দেওর, ভাসুর, শ্বশুর সবাই মিলে তুমুল মারপিট করেন। এতে আহত খালেদ আহমদ তালুকদারের অভিযোগ, ভোট শুরু হওয়ার পরপরই ছাপ্পা ভোট দিতে শুরু করেন অপর প্রার্থীর স্বামী। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক এরপর মারপিট। এক সময় আস্ত বুথ রণক্ষেত্রের রূপ নেয়। এতে মাথা ফেটে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট লেগে গুরতর জখম হন কম করে তিনজন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে এদেরকে উদ্ধার করে কাটিগড়া মডেল হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। জখম ব্যক্তিরা হলেন নুর উদ্দিন তালুকদার(৭২), সাহাব উদ্দিন তালুকদার (৫৭) এবং খালেদ আহমদ তালুকদার (৪০)। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ঘন্টাখানেক পর ফের ভোট গ্রহন শুরু হয়। তড়িঘড়ি ছুটে যান ম্যাজিস্ট্রেট অন্তরা পালও।
কাটিগড়ায় মারপিটের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে নাজাতপুরে। এলাকাটি শ্রীভুমি জেলার রাজারটিলা-উমরপুর জেলা পরিষদের অন্তর্ভুক্ত। এখানেও সেই একই অভিযোগে রক্তারক্তি ঘটে। অভিযোগ, স্থানীয় আব্দুল কাদির ছাপ্পা ভোট দিতে শুরু করায় তাকে বাধা দেন কিছু ব্যক্তি। এর এতেই ঘটে বিপত্তি। শুরু হয় মারপিট। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের ৫ জন। এরা হলেন সাহাব উদ্দিন, নুর আলম, লাকি আলম। অপর পক্ষের জখমরা হলেন ইমরান হোসেন ও দিলোয়ার হোসেন। আহতদের উদ্ধার করে কাটিগড়া মডেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করা হয়। এখানেও দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল ভোট গ্রহন। এই দু’টি লংকা কান্ড ছাড়া কাটিগড়ায় আর বড় কোনও অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তিনটিকরির ২৩ নং বুথেও ঠেলাধাক্কা সহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে খবর। এরকম মৃদু বিতন্ডার আরও কিছু খবর মিলেছে। এদিকে, কাতিরাইল জিপির নুননগর ১৭৮ নং ভোটকেন্দ্রে পুলিশি দৌরাত্ম্যের অভিযোগ তুলেছেন ভোটাররা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বিনা প্ররোচনায় এক এএসআইর নেতৃত্বাধীন এক বাহিনী এসে বেদম প্রহার করেছে মহিলাদের উপর। এতে দুই মহিলা জখম হয়ে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে।
অন্যদিকে, প্রচণ্ড গরম এবং কাজের চাপে কালাইন এলাকার সেন্ট ভিয়ানি স্কুলে ১২নং বুথে কর্তব্যরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই ভোটকর্মী। এরা হলেন সানি গোস্বামী এবং তাজিম উদ্দিন। একইভাবে গরমের জেরে অসুস্থ হন গুমড়া এলাকার ৬৫ নং ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট রহিম উদ্দিন বড়ভুইয়া। এঁদের ভর্তি করা হয় কালাইন হাসপাতালে। জানা গেছে, রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত কাটিগড়ার একাধিক বুথে ভোট গ্রহন হয়েছে। এরমধ্যে কাটিগড়া জিপির ৮ নং ওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য। ওই এলাকার ৩৮ নং পোলিং স্টেশনে সন্ধ্যার পরও শতাধিক ভোটদাতাকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এদিকে, পূর্ব সিদ্ধান্ত মতে শুক্রবার ভোট বয়কট করেন সিদ্ধেশ্বর জিপির ৮ নং ওয়ার্ডের ভোটাররা। ভোটকেন্দ্র ১০/১২ কিমি দূরে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে এই ভোট বয়কট বলে জানালেন তাঁরা। ভোটের দিন এলাকার মানুষ সাংবাদিক ডেকে বলেন, বাড়ির পাশে একাধিক ভোটকেন্দ্র থাকার পরও যোগাযোগবিহীন ৬৮০ নং মরইউরা এলপিতে তাদের ভোট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গংগাপুর, সুকৃতিপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকার এসব বাসিন্দারা এতদিন গংগাপুর হাই স্কুলে ভোট দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এখন নদী-নালা, খাল-বিলের ওপারে থাকা মরইউরায় নেওয়া হয়েছে সেন্টার। যার প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা আয়ুক্তের কাছেও আর্জি পেশ করেছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়াতে এই এলাকায় থাকা ১৮৯টি ভোট বয়কট করেছেন তারা। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আলতাফ হোসেন, জৈন উদ্দিন, জাকির হোসেন, আব্বাস উদ্দিন প্রমুখ।