অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন নিয়ে সরব হল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এ নিয়ে সরব হয়ে পরিষদ বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার শিলচরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দক্ষিণ প্রান্তের কর্মকর্তারা এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এভাবে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে হিংসায় জর্জরিত। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের পর নৈরাজ্যবাদীরা আধিপত্য বিস্তার করে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি অকার্যকর করে তুলেছে। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে সেখানকার চরমপন্থীরা হিন্দু সমাজের উপর ব্যাপক নিপীড়ন শুরু করেছে। সংগঠনের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তের সভাপতি শান্তনু নায়েক বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ঘটনার ফলস্বরূপ বাংলাদেশে ক্রমেই কমছে হিন্দুদের সংখ্যা। দেশভাগের সময় বাংলাদেশে হিন্দু ছিলেন ৩২ শতাংশ, বর্তমানে তা কমে ৮ শতাংশেরও নিচে চলে এসেছে। বর্তমানে যেসব কার্যকলাপ চলছে তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এই যে স্বল্প সংখ্যক হিন্দু বাংলাদেশের রয়েছেন তারাও সেখানে থাকতে পারবেন না।
শান্তনুবাবু আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া বিশ্ব সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব। সঙ্গে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে অনুপ্রবেশের বড়ধরনের চেষ্টা চালানো হতে পারে। তাই এব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর উচিত সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখা যাতে করে অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে।
সংগঠনের অন্য কর্মকর্তা পূর্ণচন্দ্র মন্ডল বলেন, প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হওয়া সংখ্যালঘুদের এদেশে আসার সুযোগ দিয়ে আশ্রয় দেওয়া হোক। এর জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আরও সংশোধনের প্রয়োজন করা হলে করতে হবে তাও। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামানিকের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে বলেন, উনি তো বিএনপি-‘র লোক। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচনেও লড়েছেন। এবার ব্যক্তি স্বার্থে হিন্দুদের উপর তেমনভাবে আক্রমণ হচ্ছে না বলে ভিডিও ভাইরাল করেছেন। গোবিন্দ প্রামাণিক সম্পর্কে মন্ডল আরও বলেন, উনি একসময় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ শাখার সভাপতি ছিলেন। কিন্তু তার ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্রবণতা দেখে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
কথার সূত্রে মন্ডল বলেন তারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পেয়েছেন, এবার আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের যে হিংসা চলছে শুরুতে তার লক্ষ্য শুধু হিন্দুরা ছিলেন না। যারা আওয়ামীলীগ করেন তাদেরই আক্রমণের লক্ষ্য করা হয়। কিন্তু এই সুযোগে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামাত ব্যাপারটার মোড় ঘুরিয়ে শুধু হিন্দুদেরই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে তুলতে চাইছে। তিনি বলেন শুধু আওয়ামীলীগের সদস্যদের যদি টার্গেট করা হয়ে থাকে তবে কেন হামলা হচ্ছে মঠ- মন্দিরে। এথেকেই তো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে জামাতের উদ্দেশ্য। এটা খুবই উদ্বোগের ব্যাপার। এনিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নীরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উদয় শঙ্কর গোস্বামী, দেবব্রত পাল, প্রদীপ বণিক ও বিধূভূষণ দেব।