অনলাইন ডেস্ক : ডিলিমিটেশনের খসড়াকে সরকারের বরাক বিরোধী মানসিকতার প্রতিফলন বলে আখ্যায়িত করে তীব্র প্রতিবাদ জানালো, শিলচর জেলা কংগ্রেস। এ নিয়ে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস উপত্যকার স্বার্থ রক্ষায় এ অঞ্চলের বিজেপি বিধায়কদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। এই আহ্বান জানিয়ে সঙ্গে এও বলা হয়েছে, উপত্যকার বিজেপি বিধায়করা পদত্যাগ করলে কংগ্রেসী বিধায়করাও সেই পথে এগিয়ে যাবেন।
শিলচর জেলা কংগ্রেস কার্যালয় ইন্দিরা ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পাল, বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর, প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভূইয়া ও প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মকর্তা শরিফুজ্জামান লস্কর সহ অন্যান্যরা বলেন,১৫ লক্ষ জনবসতির বি টি এ ডি এলাকায় বিধানসভা আসন বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। আর ৪২ লক্ষ জনবসতির বরাক উপত্যকায় আসন সংখ্যা ১৫ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১৩। অথচ জনসংখ্যার নিরিখে বর্তমানে বরাক উপত্যকায় বিধানসভা আসন ১৫ থেকে বেড়ে ১৯-২০টি হওয়াই ছিল যুক্তিযুক্ত। এমনকি বাড়ানো যেত লোকসভা আসনও।
তারা আরও বলেন, সেই ১৯৭৬ সালে বরাক উপত্যকায় বিধানসভা আসন সংখ্যা ১৩ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১৫। এরপর এই উপত্যকায় জনসংখ্যা অনেকটা বাড়লেও সেই অনুপাতে আসন বাড়ানোর বদলে কমিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১৯৭৬-এর আগের অবস্থায়। আসলে এভাবে বিধান সভায় বরাকের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে এই উপত্যকাকে রাজনৈতিকভাবে শেষ করে দেবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অভিজিৎবাবুরা, বরাক উপত্যকার বিজেপি বিধায়কদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উপত্যকার প্রতি যদি সামান্যতম দরদও থেকে থাকে তবে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। বিজেপি বিধায়করা পদত্যাগ করলে উপত্যকায় কংগ্রেসের যে তিনজন বিধায়ক রয়েছেন তারাও পদত্যাগ করতে পিছপা হবেন না।
অভিজিৎবাবুরা এ প্রসঙ্গে ১৯৬১ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় দুই বিধায়ক নন্দকিশোর সিংহ ও মহিতোষ পুরকায়স্থের পদত্যাগের উদাহরণ টেনে বিজেপি বিধায়কদের এভাবেই উপত্যকার প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শনের আহ্বান জানান। এই আহ্বানের সূত্র ধরে তারা আরও বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার শিলচরের এক বিলাসবহুল হোটেলে সমবেত হয়ে ডিলিমিটেশন ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। তবে এসব প্রতিবাদ লোকদেখানো নাটক ছাড়া আর কিছু নয়। উপত্যকার প্রতি সত্যিই দরদ থেকে থাকলে, বিজেপি নেতা-কর্মীরা বিলাসবহুল হোটেল ছেড়ে পথে নেমে প্রতিবাদ জানাতেন। আসলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এসে প্রতিবাদ জানানোর মতো সাহসই নেই বিজেপির এউপত্যকার নেতা-কর্মীদের।
অভিজিৎবাবুরা যেভাবে ডিলিমিটেশনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে অভিহিত করে বলেন এমন অযৌক্তিকভাবে একেকটি বিধানসভা আসনের এলাকা কাটছাট করা যায় না মোটেই। এ নিয়ে কংগ্রেস আইনি লড়াইয়ের পথে এগিয়ে যাবে। গোটা ব্যাপারটার পেছনে বরাক বিরোধী মানসিকতার পাশাপাশি বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডাও কাজ করেছে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন এসব কোনও অবস্থায়ই মেনে নেওয়া হবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐক্য মঞ্চ গড়া হয়েছে, সেই মঞ্চের সভা হবে আগামী ২৫ জুন। সেই সভায় সম্মিলিতভাবে ডিলিমিটেশন ইস্যুতে কি করা যায় এনিয়ে আলোচনা করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মকর্তা সঞ্জীব রায়, দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদার, পাপন দেব, আনসার আহমদ লস্কর ও দেবদীপ দত্ত প্রমুখ।