মাদক পাচারের রমরমার দরুন কলম্বিয়া বা মেক্সিকোর সঙ্গে তুলনা হয়ে থাকে কাছাড়ের পূর্ব সোনাই এলাকার। এই তুলনা যে মোটেই অবান্তর নয় তা ফের প্রমাণিত হলো এবার। বৃহস্পতিবার সকালে মাদক পাচারের পথে পুলিশ পাকড়াও করে ওই এলাকার স্বাধীন বাজার জিপির প্রাক্তন সভাপতির স্বামী গোলাম ওয়াজিদ বড়ভূইয়া ওরফে টিঙ্কুকে।
জানা গেছে এদিন সকাল ৬টা নাগাদ সোনাই মতিনগর রোড হয়ে একটি বিলাসবহুল গাড়িতে করে মাদক পাচারের সময় পুলিশ পাকড়াও করে টিঙ্কুকে। তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৫টি সাবানের কেসে থাকা ৬০’০২ গ্রাম হেরোইন। ওয়াজিদ ওরফে টিঙ্কু বেশ বড় মাপের মাদকের কারবারি হিসেবেই পরিচিত। এলাকায় তার বিরাট প্রভাব রয়েছে। যার দরুন ২০১৮র পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বাধীন বাজার জিপির সভাপতি পদে জয়ী হয়েছিলেন তার পত্নী। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, পত্নী জিপি সভাপতি হলেও বাস্তবে টিঙ্কুর মারফই
চলতো পঞ্চায়েতের কাজকর্ম। পত্নীর সভাপতি পদের মেয়াদ পার হয়ে গেলেও এখনও টিঙ্কু এলাকায় পরিচিত “টিঙ্কু পঞ্চায়েত” হিসেবেই।
পূর্ব সোনাই এলাকায় মাদকের কারবারে জড়িত থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজে বা পত্নীকে দাঁড় করিয়ে জয় হাসিল করার ক্ষেত্রে টিঙ্কু অবশ্য প্রথম নাম নয়। এক্ষেত্রে পথিকৃৎ বলা যায় অন্য এক মাদকের কারবারি মমিনুল লস্কর ওরফে মুমিনকে। তবে এই দুজন মোটেই ব্যতিক্রম নয়।পূর্ব সোনাই এলাকার বিভিন্ন জিপিতে বিভিন্ন সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এমন অনেকেই মাদকের কারবারে জড়িত বলে খবর। জনপ্রতিনিধি তকমা লাগিয়ে পুলিশের নজর থেকে বাঁচার জন্যই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে এদের এতো আগ্রহ। যার দরুন নির্বাচনে জয়ী হতে দরাজ হস্তে এদের অর্থ ব্যয় করতে দেখা যায়। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল হলের অভিমত,এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা কাছাড়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে পূর্ব সোনাই এলাকারই কয়েকটি জিপিতে। বর্তমানে ওই এলাকার এক জিপিতে তো সভাপতি পদে আসীন হতে টাকার ফুলঝুরি উড়ছে বলে খবর। পরিস্থিতি এমনই যে এক দাবিদার সমর্থন ধরে রাখার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় করে অন্যান্য গ্রুপ মেম্বারদের নিয়ে চলে গেছেন ভিন রাজ্যে প্রমোদ ভ্রমনে। এর বিপরীতে আবার অন্য এক দাবিদার এদের ফুসলিয়ে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য ওই রাজ্যে লোক পাঠিয়ে দিয়েছেন টাকার ঝুলি দিয়ে। মাদকের কারবারের সূত্রে হাতে আসছে কাড়ি কাড়ি টাকা। জিপি সভাপতি তকমা লাগিয়ে নির্বিঘ্নে এই কারবার চালানোর জন্য অর্থ ব্যায়ে এদের কেউই কোনও কার্পণ্য করতে রাজি নয়।
এক বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, পূর্ব সোনাই এলাকার মাদকের কারবারিদের হাত এতটাই দীর্ঘ যে, এদের অনেকেরই সরাসরি মায়ান্মারের সরবরাহকারীদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে । উদ্বেগের ব্যাপার হলো, যত দিন যাচ্ছে এলাকায় টিঙ্কু ও মুমিনদের মত কিছু লোকের দ্রুত উত্থান দেখে একের পর একজন জড়িয়ে পড়ছে এই কারবারে। আর এদেরই অনুসরন করে পরবর্তীতে আত্মপ্রকাশ করছে পঞ্চায়েত রাজনীতিতে।
এদিকে, টিঙ্কু- মুমিনের পথ অনুসরণ করে এবারও কয়েকজন মাদকের কারবারি যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ময়দানে নেমে পড়েছিল, সেই খবর রয়েছে পুলিশের কাছেও। পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো জানিয়েছেন, এদের সম্পর্কে খোঁজ খবর চালানো হচ্ছে।