সাময়িক প্রসঙ্গ, শিলচর, ২০ ডিসেম্বর : শিলচর পুর নিগম নির্বাচনে কংগ্রেস, ইউডিএফ, তৃণমূল, আম আদমি পার্টি সহ অন্যান্য অ-বিজেপি দলসংগঠনকে নিয়ে বিরোধী ঐক্যমঞ্চ গঠনের প্রয়াস চালাবে বরাক ডেমোক্রটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ)। শহরের ৪২টি ওয়ার্ডে-ই বিজেপির বিরুদ্ধে দেওয়া হবে প্রার্থী। এমনটাই জানিয়েছেন বিডিএফ-র মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।
শিলচর পেনশনার্স ভবনে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি দাবি করেন, এ ব্যাপারে বিরোধী দলনেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক স্তরে আলাপ আলোচনা সেরে নেওয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদী, বিজেপিকে প্রতিহত করতে সবাই এক মঞ্চে এসে যৌথ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করবেন। এর আগে খুব শীঘ্রই সর্বদলীয় বৈঠকে মিলিত হবেন সবাই। সেই বৈঠকেই স্থির হবে ঐক্য মঞ্চের পরবর্তী কর্মপন্থা। তিনি এ-ও শুনিয়েছেন, বিরোধী ঐক্যমঞ্চের হয়ে মেয়র পদে লড়বেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এবং দক্ষ প্রশাসক।
তিনি কি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য? উত্তরে অবশ্য খোলসা করে কিছু বলেননি প্রদীপ। শুধু বলেছেন, সময় এলে খোলসা হবে সবকিছু। তিনি বলেন, পুর নিগমের নির্বাচন কবে হবে, এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক রয়েছে। এবং নাগরিকদের সঙ্গে এই ব্যাপারে শাসকদলের তরফে কোনও মত বিনিময় করা হয়নি, যা প্রত্যাশিত ছিল। প্রস্তাবিত পুর নিগমের সীমানা ১০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি হবার কথা ছিল। কারণ, শিলচরকে আগামীতে স্মার্ট সিটি হিসেবে মনোনয়ন পেতে হলে তা জরুরী বলে শোনা গেছে। তা সত্বেও পুর নিগমের আয়তন তার চেয়ে কম রাখা হয়েছে বিজেপির দলীয় স্বার্থে। কাজেই বিজেপি দলের নেতাকর্মীরা যে প্রকৃতপক্ষে শিলচরের উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতে অনেক বেশি আগ্রহী এটা তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরও বলেন, বিগত বন্যায় শাসকদলের বিধায়ক ও সাংসদের অকর্মন্যতা ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা সমগ্র শিলচরবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন এবং জনগণের অপরিসীম ক্ষোভের আন্দাজ পেয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার এখানে এসে অবস্থা সামাল দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, এরপরও জনগনের সঙ্গে কোনও ধরনের আলাপ আলোচনা না করে একতরফাভাবে পুরকর ১০০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছিল শাসকদল। এবং এই মর্মে আবেদন পত্র নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জমা না দিলে আইনি নোটিশ জারি হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। প্রদীপবাবু বলেন, শিলচরের স্বাভিমানী নাগরিকরা তখন এই অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল সরকার ও প্রশাসন। তিনি বলেন, জনগন এসব কিছুই ভোলেননি। সবাই উচিত জবাব দেবার প্রতীক্ষায় রয়েছেন।
প্রদীপবাবু এদিন বলেন, সম্প্রতি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে বরাক তথা শিলচরের কর্মপ্রার্থীদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বনধ্ পালনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জনগন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদদের কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি। অবস্থা বেগতিক দেখে খোদ মুখ্যমন্ত্রী শিলচরে এসে এই ব্যাপারে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলেছেন, মোট উত্তীর্ণের কুড়ি শতাংশই নাকি বরাক থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বিডিএফ-এর পক্ষ থেকে বারবার সেই তালিকা প্রকাশের দাবি জানানোর পরও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। তাই বাধ্য হয়ে এই ব্যাপারে আরটিআই আবেদন করতে বাধ্য হয়েছে বিডিএফ। তিনি বলেন, এসব নিয়ে শিলচরের জনগন যে ক্ষুব্ধ তার প্রমান তারা বিভিন্ন ভাবে পাচ্ছেন। তাই তারা আগামী পুরনিগম নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, বহুমুখী নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে শতাংশের হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট না পেয়েও নির্বাচনে জয় হাসিল করে নেয় বিজেপি । তাই এবার কৌশল পাল্টাতে হবে। যেহেতু জনগন সাথে রয়েছেন তাই প্রতিটি ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে একক বিরোধী প্রার্থী দাড় করানো জরুরি এবং এই ব্যাপারে তাই উদ্যোগী হয়েছে বিডিএফ।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, শিলচরের নাগরিকদের বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। পুরকর্মীদের চাকরি প্রতিশ্রুতি স্বত্তেও স্থায়ীকরণ হচ্ছে না। সরকারি বদান্যতায় বিগত কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ হয়েছে অথচ এই নিয়ে শাসকদলের নেতারা নীরব। রয়েছে আবর্জনার সমস্যা, নিত্য যানজটের সমস্যা। তিনি বলেন যারাই আগামীতে পুরবোর্ড গঠন করুক, এসব সমস্যাকে গুরুত্ব দিতেই হবে। তিনি বলেন ইদানীং কাছাড় ওনজিসি এ্যসেট ম্যানেজারের সঙ্গে কথাবার্তার পর তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে শিলচরে প্রতিঘরে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে কোন সমস্যাই নেই। শুধু সরকারি অবহেলা ও প্রশাসনিক গাফিলতির জন্য ব্যাপারটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এই ব্যাপার নিশ্চিত করতে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। জয়দীপ আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এবার পুরসভায় তার দলের প্রার্থীরা দলের প্রতীক চিহ্ন ব্যাবহার করবেন না। তিনি বলেন, যদি দিল্লি পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি নিজ প্রতীক চিহ্ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে তবে অসমের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন ? এর অর্থ হচ্ছে বিজেপি জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। জনগণ যে তাদের সঙ্গে নেই দিল্লি পুরনিগম নির্বাচনে তা প্রমানিত হয়েছে। এবার শিলচর পুরনিগম নির্বাচনে এটা আবার প্রমানিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিডিএফ যুবফ্রন্টের মূখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত, কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খাইদেম কান্ত সিং, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে প্রমুখ।