অনলাইন ডেস্ক : কিছুদিন আগের কথা চেম্বারে বসে আছি।তখন মা-বাবার সঙ্গে ভেতরে এল অত্যন্ত মায়াবি এক ছোট্ট সোনামনি।ভাবলাম হয়তো মা বা বাবার কোনোও অসুবিধা হয়েছে, পরামর্শ নিতে এসেছেন।কিন্তু আমার ভাবনার বিপরীত হল।শিশুকন্যাটির বাবা বলে উঠলেন, রোগী কিন্তু সেই শিশুকন্যাই।আমি মনে মনে আশ্চর্য হলাম, যেহেতু আমি একজন ‘গ্যাস্ট্রোলজি ফর এডাল্টস’। আমার কাছে সাধারণত অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েরা চিকিৎসার জন্য আসেননা।তাই আমি মা-বাবাকে বললাম,এই শিশুকন্যা বয়সে অনেক ছোট,তাই একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের (পেডিয়াট্রিয়াশিয়ান) কাছেই যাওয়া প্রয়োজন ছিল।এবার শিশুটির মা বললেন, আমরা খুব বিপদে পড়ে এসেছি,এবংইতিমধ্যে আমরা দুই তিনজন শিশুর ডাক্তারকে দেখিয়ে এসেছি।আমি আরও আশ্চর্য হলাম, বললাম,ভালভাবে বলুন, ঠিক কি আসুবিধা হয়েছে?এই শিশুকন্যার মারাত্মক গ্যাসের সমস্যা,মা-বাবা দুজনে প্রায় একই সঙ্গে বলে উঠলেন,মোটেই কিছু খেতে চায় না,ঢেকুর উঠে।মাঝে মধ্যে বমিও করে।তারপর প্রায় আধঘন্টা আমি দুজনের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিলাম। এই শিশুকন্যাকে সকালে প্রায় সাড়ে পাচটায় ঘুম থেকে উঠতে হয়।কারণ স্কুলের বাস এসে পড়ে সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার মধ্যে।বিছানা থেকে ওঠার পর প্রায়ই ঘুম পেয়ে থাকে। এই অবস্থায়ই মা তাকে স্কুলের ইউনিফর্ম পরিয়ে তৈরি করে দেন।এর ফাকে কখনও একটি বিস্কুট ,কখনও একটুকরো ব্রেড আর কখনও কিছু না খেয়েই স্কুল বাসে ওঠে।এমনকি ব্যেগে দেওয়া টিফিনটাও অনেক সময় না খেয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।এসব কথা বলতে বলতে এক সময় মা-র চখের কোণ বেয়ে জল নেমে এল।এত আদরের শিশুটি যদি কিছু না খেয়েই খালিপেটে থাকে বা বমি করে তাহলে তাঁর স্বাস্থ্য কি করে ভাল থাকবে?বাবা বলে উঠলেন সকাল ছয়টার সময় বড়োদেরও কিছু খাওয়ার ইচ্ছা থাকেনা,আর এই ছোট্ট মেয়েটির কিকরে খাওয়ার ইচ্ছা হবে? যাক, বিধিসম্মতভাবে ওষুধ লিখে মা-বাবাকে চিন্তা না করতে বলে বিদায় দিলাম।এখানেই শেষ নয়, এরপর প্রায় পক্ষকালের মধ্যে একই ধরনের অসুবিধা নিয়ে আরও দুই-তিনজন শিশু আমার চেম্বারে এল মা-বাবার সঙ্গে।ভাবতে বাধ্য হলাম।কি কারণে এই সোনামনিদের নিয়ে একজনের পর একজন ডাক্তারের কাছে ছুটতে হল।এসময়ে কতজন শিশু জাঙ্ক ফুড খায়না,তা আমাদের ভাবতে হবে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বিছানা থেকে জোর করে উঠিয়ে কোনোও কিছু না খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়ে আমরা তাদের ভবিষ্যৎ সত্যিকার অর্থে কতটুকু সুরক্ষিত করছি,না তাদের সুস্বাস্থ্য ভেঙ্গে দিচ্ছি।
কলমে ডা. ভাস্কর জ্যোতি বরুয়া