অনলাইন ডেস্ক : সিংলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধের নামে রাতাবাড়ি কেন্দ্রের চামটিলা, অলিভিয়াছড়া ও নিভিয়া বাজারে জল সম্পদ বিভাগের বরাদ্দ কয়েক কোটি টাকার প্রকল্পে অবাধ দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বছর বছর ধরে খরস্রোতা সিংলা নদীর তীব্র প্রবাহে বাস্তুহারা হয়ে আসছেন নিভিয়া বাজার, অলিভিয়াছড়া, ফানাইরবন্দ, চামটিলা এলাকার মানুষ। তার মধ্যে নদীতীরে অবস্থিত নিভিয়া বাজারের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ৮০ দশকে তৎকালীন মন্ত্রী লীলাময় দাসের প্রচেষ্টায় নিভিয়া বাজার কে ভাঙ্গন হতে রক্ষা করতে সিংলা নদীর তীরে পাথর বসানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর পর সেই পাথরের ও অধিকাংশ নদীর গহ্বরে তলিয়ে যায়। এতে নদীতীরে বাঁশ ও অন্যান্য গাছপালা লাগিয়ে নিজের ভিটেমাটির রক্ষা করার প্রয়াস চালাচ্ছিলেন স্থানীয়রা। ফলে নিভিয়া বাজার সহ সিংলা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো কে নদীর করাল গ্রাস হতে রক্ষা করার জন্য সময়ে সময়ে দাবি তুলে আসছিলেন ভুক্তভোগী মানুষ। আর এতে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক বিজয় মালাকারের তৎপরতায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য জলসম্পদ বিভাগের তহবিল হতে ৩ কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। গত বছরের মাঝামাঝিতে রাজ্যের জল সম্পদ মন্ত্রী পিজুষ হাজারিকা এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাজের শিলান্যাস করে যান। নিভিয়া বাজার, অলিভিয়ছড়া ও চামটিলা এই তিনটি স্থানের নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য জিও ব্যাগ সংস্থাপনের বরাত পান তিন জন ঠিকাদার। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন দীর্ঘ ছয় মাস পরে তাঁরা নির্মাণ কাজে হাত দিলেও কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ধীরলয়ে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বুধন এইচ এস স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবাশীষ দাস, নিভিয়া বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শ্যামনারায়ণ যাদব, সচিব রজত ভট্টাচার্য, শিক্ষক অলক ভট্টাচার্য, ব্যবসায়ী অমলেন্দু পুরকায়স্থ, শংকর পাল, চিন্ময় নাথ প্রমুখরা নদীতীরে দাঁড়িয়ে বলেন নিভিয়া বাজার এলাকায় জিও ব্যাগ সংস্থাপনের জন্য দু মাস আগে বরাত প্রাপ্ত ঠিকাদার এস্কেভেটর লাগিয়ে খোদাই করে রেখেছেন কিন্তু কাজ আর এগোচ্ছে না। শুধু তাই নয় যে দিকে কাজ আরম্ভ হয়েছে সেদিকে লাগানো হচ্ছে অতি নিম্ন মানের ইটের টুকরা। তাঁদের বক্তব্য সেটাকে ইটের টুকরো না বলে ইটের গুঁড়ো বললেও অত্যুক্তি হবে না। ১৯৮৪ সালে যে স্থানে পাথর বসিয়েও সিংলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি সেই স্থানে এখন এই গুঁড়ো ইটের ভরসায় আমাদের বাড়ি ঘরকে সুরক্ষিত রাখতে চাইছে জলসম্পদ বিভাগ বলে মন্তব্য বাজার বাসী জনগণের। সেই সঙ্গে কাজের গতি ও রয়েছে মন্থর। নদীর তীরে অবস্থিত নিভিয়া বাজারের প্রতিজন বাসিন্দাদের বাড়ির পেছনে ভাঙ্গন রোধের জন্য লাগানো বাঁশঝাড় এস্কেভেটর দিয়ে উপড়ে নদী তীর খোদাই করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্ষার মরশুমের আগে ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ সম্পূর্ণ না হলে হিতে বিপরীত হয়ে অনেকর বাড়ি ঘর নদীতে তলিয়ে গিয়ে বাস্তুহারা হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন নিভিয়া বাজার বাসী। আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলেই দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উবে যাচ্ছে নদীর তীরের বাসিন্দাদের। তথাপি কুম্ভনিদ্রায় রয়েছেন মন্ত্রী পীযুষ হাজারিকার নেতৃত্বাধীন করিমগঞ্জ জেলার জলসম্পদ বিভাগের আধিকারিকরা। বিভাগীয় কর্তাদের সাথে গোপন বোঝাপড়া থাকায় নির্মাণ কাজে অবাধ দূর্নীতির পাশাপাশি কচ্ছপের গতিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বরাত প্রাপ্ত ঠিকাদার বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কাজের এই গতি যদি অব্যাহত থাকে তবে এই বর্ষার মরশুম নিভিয়া বাজারের জন্য বিপদ ডেকে আনবে এবং বাজারের বহু ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন দেবাশীষ দাস, রজত ভট্টাচার্য, অমলেন্দু পুরকায়স্থ প্রমুখ।