অনলাইন ডেস্ক : ডনবস্কো বিদ্যালয়ের শিলচর শাখায় তৃতীয় শ্রেণীতে বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রোমান হরফে লেখা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সকালে একটি পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন। অনেকে প্রতিবাদের ডাকও দেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা বাংলা ভাষার অবমাননা করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেননি, বরং ছাত্রদের বাংলা ভাষা শেখানো সহজ করে তুলতেই তাদের এই প্রয়াস।
বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি ফটো চিরঞ্জিত পাল নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে তুলে ধরেন। পেশায় শিক্ষক চিরঞ্জিতের সেই পোস্ট প্রায় দেড় হাজারের বেশি লোক শেয়ার করেছেন। আরও কয়েক হাজার লোক সেই প্রশ্নপত্রের ফটো ডাউনলোড করে নিজেদের অভিমত সহ সেটি ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেরা এনিয়ে নিজেদের অভিমত জানিয়েছেন। বেশিরভাগ লোকেরাই বলেছেন এটা এগারো শহীদের রক্তস্নাত বরাক উপত্যকার মাটির অপমান।
বরিষ্ঠ শিক্ষক দীপক সেনগুপ্ত চিরঞ্জিত পালের পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য’। অধ্যাপক স্বরূপা ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘সেই যে কবিতাটির লাইন আছে, বেঙ্গলীটা কেন পড়ায় না ইংলিশে? কোনো ধিক্কারই বোধহয় যথেষ্ট নয়। উনিশে মে শুধু লোক দেখানো সেলিব্রেশন।’ কেউ কেউ আবার প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি প্রশ্নপত্রের ছবিটি আদৌ ওই বিদ্যালয়ের কিনা। তবে পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর সত্যতা স্বীকার করেন এবং বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের মাতৃভাষা পড়ানো সহজ করতেই তারা কাজটি করেছেন।
বিদ্যালয়ের তরফে ফাদার সুরজিৎ টিক্কা বলেন, ‘আগে চতুর্থ শ্রেণীর পর বাংলা পড়ানো হতো, তবে আমরা সম্প্রতি তৃতীয় ক্লাস থেকেই বাংলা পড়াতে শুরু করেছি। ইংরেজি এবং হিন্দি সবাই পড়ে, তবে মাতৃভাষা নিতে অনেকের অনীহা রয়েছে। আমরা প্রায় জোর করেই তাদের বাংলা পড়তে বাধ্য করছি। তবে শুধু একটা বিষয় চাপিয়ে দিলে হয় না, ছাত্র-ছাত্রীদের দিকটাও দেখতে হয়। ক্লাসে বাংলা হরফেই পড়ানো হয় তবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে এত ছোট ছাত্রছাত্রীরা অনেক সময় ভয় পেয়ে যায়। তাই আমরা বিষয়টির সহজ করতে তাদের প্রশ্নপত্র রোমান হরফে করেছি। এটা শুধুমাত্র তৃতীয় শ্রেণীর জন্যই, চতুর্থ শ্রেণী থেকে তারা বাংলাতেই প্রশ্নপত্র পায় এবং বাংলাতে উত্তর দেয়। আগে উঁচু ক্লাসে বাংলা ছিল না, তবে আমরা এখন দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এই ভাষা পড়ানোর ব্যবস্থা করছি। আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেক ব্যক্তির মাতৃভাষা শেখা উচিত এবং বাংলা ভাষাকে আমরা যথার্থ সম্মান করি। যেসব অভিযোগ উঠেছে সেটা আমাদের চোখে পড়েছে, তবে আমার মনে হয় আমাদের ভুল বোঝা হচ্ছে।’