অনলাইন ডেস্ক : শিলচর উইমেন্স কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তৃপ্তি দাস নিজেকে অনুসূচিত জাতির লোক হিসেবে প্রতিপন্ন করতে যে সার্টিফিকেট পেশ করেছিলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে তা সংগ্রহ করা হয়েছিল। জেলাশাসকের তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে একথা। তদন্ত রিপোর্টে একথা উল্লেখ করে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঞ্চালককে। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে গত মার্চ মাসে জেলাশাসক তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করার পরও এ পর্যন্ত সেই অর্থে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তৃপ্তি দাসের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে সিডিউল কাস্ট (এসসি) সার্টিফিকেট সংগ্রহের পর তা ব্যবহার করে চাকরি ক্ষেত্রে সুবিধা আদায়ের অভিযোগ অনেক পুরনো। তিনি চাকরিতে থাকাকালীনই এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এরপর অবসর গ্রহণ শেষে এই অভিযোগের সূত্র ধরে আটকে রাখা হয় তার পেনশন।
জানা গেছে এ নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন হলে তৃপ্তি দাস অবসর গ্রহণের সময় কলেজের গভর্নিং বডি থেকে উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঞ্চালকের কাছে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল তাতে এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয় । এতে তার পেনশন আটকে দেওয়া হয়। এরপর উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঞ্চালকের পক্ষ থেকে ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্তক্রমে রিপোর্ট পেশ করতে কাছাড়ের জেলা শাসককে চিঠি লিখা হয়। সঞ্চালকের চিঠি পেয়ে কাছাড়ের জেলাশাসকের পক্ষ থেকে এনিয়ে তদন্ত করে উচ্চ শিক্ষা সঞ্চালকের কাছে পাঠানো হয় রিপোর্ট । রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত পর্বে সার্কল অফিসার এবং অসম অনুসূচিত জাতি পরিষদের জেলা শাখার পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী, তৃপ্তি দাসের বাবা প্রয়াত যোগেন্দ্র চক্রবর্তী, তার স্বামী প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ দাস। স্বামী ইন্দ্রজিৎ বাবু, অনুসূচিত জাতির লোক হলেও
তৃপ্তি দাস নিজে জন্মসূত্রে সাধারণ শ্রেণীর (ব্রাহ্মণ)। কিন্তু সাব ডিভিশনাল এস সি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহের সময় তিনি শুধু স্বামীর নামই উল্লেখ করেছেন । স্বামীর নাম উল্লেখ করে তিনি নিজেকে “পাটনি” সম্প্রদায়ের লোক বলে জাহির করে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নেন। যদিও এক্ষেত্রে তার বাবার নাম উল্লেখ করা ছিল বাঞ্চনীয়। এভাবে তিনি সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে সংগ্রহ করেছিলেন এস সি সার্টিফিকেট।
তদন্ত রিপোর্টে এভাবে বিস্তারিত উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, এসব তথ্য জানার পর তৃপ্তি দাসকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নথিপত্র পেশ করার সুযোগ দিতে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে উপস্থিত হননি।
উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঞ্চালকের কাছে এই তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে জেলাশাসকের পক্ষ থেকে এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
খবর অনুযায়ী জেলা শাসকের পক্ষ থেকে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে গত ২১ মার্চ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এরপর এতদিন পার হয়ে গেলেও এ নিয়ে কোনও নড়াচড়া টের পাওয়া যাচ্ছে না। তৃপ্তি দাসের পেনশন বন্ধ করে রাখা হলেও তিনি যে অপরাধ করেছেন, এর বিপরীতে তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। নিজের জন্ম পরিচয় লুকিয়ে এস সি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে এতদিন ধরে ব্যাপারটা চেপে রাখা হয়েছে।