অনলাইন ডেস্ক : রক্তাল্পতার ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগেন বহু রোগীই। সাধারণত আয়রনের অভাবের জন্যই মানবদেহে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু একাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আয়রণ ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরও এই সমস্যা মেটে না। তখন এমন অসুস্থ ব্যক্তিদের ফের সুস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। আর এই জটিল সমস্যা সমাধানের উত্তরই খোঁজার প্রয়াস করেছেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ তনুশ্রী দেবগুপ্ত।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগকে রিফ্রেক্টরি অ্যানিমিয়া বলা হয়। চিকিৎসক তনুশ্রী এ বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন এবং আহমেদাবাদে একটি বার্ষিক কনফারেন্সে তা নিয়ে একটি পেপার প্রেজেন্ট করেছেন। ‘অ্যাপিকন’ নামে চিকিৎসকদের একটি বড় আলচনাচক্র প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন শহরে হয়ে থাকে। গত বছর জয়পুরে হয়েছিল। এবার আহমেদাবাদে। চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতি থেকে রবিবার পর্যন্ত চলেছে এই কনফারেন্স।
এদিন আহমেদাবাদ থেকে ফোনে তনুশ্রী জানিয়েছেন, রিফ্রেক্টরি অ্যানিমিয়া নিয়ে তাঁর অধ্যয়ন কনফারেন্সে উপস্থিত বহু অভিজ্ঞ মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। শুক্রবার তাঁর প্রেজেন্টেশনের পর অনেকেই এ বিষয়ে আরও বিশদে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বললেন, ‘অত্যন্ত ভাল লাগছে যে বর্ষীয়ান চিকিৎসকরাই আমার অধ্যয়ন নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন।’
চিকিৎসক তনুশ্রী দেবগুপ্ত বললেন, ‘এই বিষয়ে আমার বরাবরই অধ্যয়ন করার ঝোঁক ছিল। আগে পোস্ট গ্রায়জুয়েশনের সময় থ্যালসেমিয়া রোগ নিয়ে অধ্যয়ন করেছি। থিসিস জমা দিই। পাশাপাশি এমন সমস্যায় ভোগা বেশ কিছু রোগীদের চিকিৎসাও আমার করতে হয়েছে। সেখান থেকেই রিফ্রেক্টরি অ্যানিমিয়া সংক্রান্ত অধ্যয়নের চিন্তা জাগে আমার।’ এদিকে পেপার প্রেজেন্ট করার সঙ্গে কয়েকটি সেশন চেয়ারও করেছেন তনুশ্রী। তাঁর কথায়, ‘দারুণ অভিজ্ঞতা। অনেক সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের প্রেজেন্টেশনের সময় আমি চেয়ার করেছি। এর সঙ্গে পিজি পড়ুয়াদের কাজও নিরীক্ষণ করতে হয়েছে। বদোদরা, কটক ইত্যাদি বহু স্থানের পিজি পড়ুয়াদের সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের কনফারেন্সে বেশ কিছু বিরল অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।’
আগামি বছর এই বার্ষিক কনফারেন্স দিল্লিতে আয়োজন করা হবে। চিকিৎসক তনুশ্রী জানাচ্ছেন, তখনও অংশ নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। এবারের রক্তাল্পতার মত চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্য কোনও জটিল বিষয় নিয়ে অধ্যয়নের কথা ভাবছেন তিনি।
এদিকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অমিত কালোয়ারও এই অনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন। তিনি রবিবার শিলচর ফিরেছেন।অমিতবাবু জানাচ্ছেন, ‘কিডনি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমি পেপার উপস্থাপন করেছি আহমেদাবাদে। কিডনি বিকল হলে কীভাবে সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, তা নিয়েই অধ্যয়ন করেছি আমি।’ এই বার্ষিক কনফারেন্সে অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ান্স অব ইন্ডিয়ার ফেলো সম্মানও লাভ করেছেন চিকিৎসক অমিত কালোয়ার। এ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘নিঃসন্দেহে এ এক বড় প্রাপ্তি। আগামীতে আরও পরিশ্রম করার অনুপ্রেরণা পেলাম।’