অনলাইন ডেস্ক : গ্রেফতার হলেন সাহাদত হোসেন ও মনোজ অধিকারী। কাটিগড়া সহকারী ভু-বাসন অফিসের ঘুষকান্ডে জড়িত এই দু’জনকে সোমবার ডিসি অফিসেই আটক করে পুলিশ। বস্তুত, অভিযুক্ত দু’জনকে নিজেই পুলিশের হাতে তুলে দিলেন জেলা আয়ুক্ত স্বয়ং! রাতে কাটিগড়া পুলিশ গিয়ে এঁদেরকে থানায় গিয়ে আসে। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় সাহাদত ও মনোজকে। সাহাদত হোসেন ও মনোজ অধিকারী দু’জনই কাটিগড়া সহকারী ভু-বাসন অফিসের কর্মচারী। সাহাদত লট পাটোয়ারী আর মনোজ সুপারভাইজার কানুনগো। দু’জনই গত কয়েকদিন ধরে ভাইরাল নিজস্ব কর্মকুশলতায়! দু’জনকেই ঘুষের টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল পৃথক পৃথক দুই ভিডিও-য়। প্রথম ভিডিও ভাইরাল হয় ২৫ জুলাই। যেখানে পাটোয়ারী সাহাদত হোসেনকে ঘুষের টাকা আদান-প্রদান করতে দেখেছিলেন কাটিগড়া তথা বরাক উপত্যকার মানুষ। ওই ভিডিও-তে সাহাদতবাবু পর পর দু’জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিলেন সদর্পে। করছিলেন দর-দামও। একজনের নিকট থেকে অফিসের ভেতর অন্যজনের কাছ থেকে পাশ্ববর্তী গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিচ্ছিলেন টাকা। এনিয়ে শুরু হয় হল্লা। কী করে একজন পাটোয়ারী এভাবে বুক উঁচিয়ে টাকা গ্রহন করতে পারেন, এপ্রশ্নও অনেকে তুলেছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তীব্র গতি পাওয়া ওই ভিডিও যখন তুঙ্গে, তখন অন্য দুই ভিডিও চোখে পড়ে অনেকের। যেখানে সাহাদতকে টাকা প্রদানকারী দু’জন ভাইরাল ভিডিও-র স্বপক্ষে সাফাই দিচ্ছিলেন। তবুও সাহাদতের কুকান্ড চাপা পড়েনি। বরং আস্ত কাটিগড়া থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গণক্ষোভ আছড়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। একের পর এক ব্যক্তি সাহাদতের ‘শিকার’ হয়েছিলেন বলে স্বীকার করতে থাকেন। এরইমধ্যে অনেকে সহকারী ভু-বাসন আধিকারিক তথা সার্কল অফিসারের দ্বারস্থ হয়ে সাহাদতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি রাখেন। জমা পড়ে কয়েকটি স্মারকপত্রও। একসময় সাহাদতকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন সহকারী ভু-বাসন আধিকারিক। এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিপোর্ট করেন জেলা আয়ুক্তের দরবারে।
এদিকে, সাহাদতের এই কীর্তি যখন কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসছিল, তখন সামনে আসে আরেক ভিডিও। যেখানে সেই একই অফিসের সুপারভাইজার কানুনগো মনোজ অধিকারীকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছিল। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে পয়লা আগষ্ট। ভিডিও-তে দেখা যায়, নিজের চেম্বারে বসেই টাকা নিচ্ছেন মনোজবাবু। সেই একই কায়দায়, একই দাপটে। একেবারে সাহাদতের কপি-পেস্ট! ওই ভিডিওটিও ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। নেটিজেনরা এনিয়ে সরব হন আরেকবার। কাটিগড়ার আম মানুষও সহকারী ভু-বাসন অফিসের এই নগ্ন চিত্র নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ওই অফিসে টাকা ছাড়া কোনও কাজ হয় না, এমন অভিযোগ করে ক্ষুব্ধ মানুষ বলেন, নুন্যতম কোনও কাজে গেলেও ঘুষ দিতে হয়। সাহাদত ও মনোজের ভিডিও এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে যে যথেষ্ট, তা বিলক্ষণ অনুভব করতে পারেন সহকারী ভু-বাসন আধিকারিক ড. রবার্ট টৌলর। ফলে দ্বিতীয় ভিডিও ভাইরালের পর মনোজ অধিকারী পরদিন বিন্দাস মুডে অফিস করলেও বসে থাকেননি এএসও। ওই ভিডিও-রও সবিশেষ জানান জেলা আয়ুক্তকে।
জানা যায়, এরপর সাহাদত ও মনোজকে নিজের অফিসে তলব করেন ডিসি। এতে মনোজ গেলেও সাহাদত যাননি। অসুস্থতার কথা বলে নিজের ছেলেকে ডিসির কাছে পাঠান। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সোমবার ফের দু’জনকে অফিসে ডাকেন জেলা আয়ুক্ত রোহন কুমার ঝাঁ। তারা ডিসি অফিসে পৌঁছলে শিলচর সদর পুলিশ ডেকে সাহাদত ও মনোজকে নির্দেশ দেন। সেই মতে সদর পুলিশ অভিযুক্ত দু’জনকে থানায় নিয়ে আটক করে রাখে। এরইমধ্যে কাটিগড়ার সার্কল অফিসার তথা সহকারী ভু-বাসন আধিকারিককে থানায় মামলা দিতে নির্দেশ দেন তিনি। ফলে সোমবার অফিসে এসেই থানায় মামলা করেন এএসও ড. রবার্ট টৌলর। সন্ধ্যায় কাটিগড়া থানা থেকে এএসআই আয়ুব আলি বড়ভুইয়া দলবল নিয়ে সদরে হাজির হয়ে সাহাদত ও মনোজকে কাটিগড়া থানায় নিয়ে আসেন। পরে ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ওসি যোশেফ কেইভম। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পাটোয়ারী সাহাদত ও কানুনগো মনোজ অধিকারীকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে এ সংবাদ জানিয়ে ওসি যোশেফ কেইভম আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্ত শেষে এদেরকে গ্রেফতার করা হলো। কাটিগড়া থানায় প্রিভেনশন অব করাপশন এক্ট-এর ধারা ৭ এবং ৮ অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে। এবং ওই মামলার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতারও হতে পারেন। কারণ ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া সমান অপরাধ। এ সংবাদ তৈরি করা পর্যন্ত পাটোয়ারী সাহাদত ও কানুনগো মনোজ কাটিগড়া থানায় রয়েছেন।