অনলাইন ডেস্ক : জনগণের তোপের মুখে পড়ে রা কাড়তে পারলেন না কাটিগড়ার বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদার। ভাগ্যিস, প্রাক্তন বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন ছিলেন সঙ্গে, তিনিই ‘বাঁচিয়ে’ আনলেন বর্তমানকে। প্রথমে নিজের লোক দিয়ে আক্রমণ করিয়ে পরে মলম লাগাতে এসেছেন? এমন তীর্যক মন্তব্যও হজম করতে হয়েছে ‘বেচারা’ খলিলকে ! পশ্চিম কাটিগড়ার কুশিয়ারকুলে গত সোমবার ঘটে এক অনভিপ্রেত ঘটনা। দুই স্কুল পড়ুয়ার মারধরকে কেন্দ্র করে একসময় এলাকায় সম্প্রতি নষ্টের শংকা দেখা দিয়েছিল। কাছাড় পুলিশের সময়োচিত পদক্ষেপে আস্ত উপত্যকা এক বড় ধরনের ‘দাঙ্গা’ থেকে সেদিন রেহাই পেয়েছিল। ওই ঘটনা নিরসনে বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে খলিল উদ্দিন মজুমদারের ভুমিকা ছিল নগন্য, এমন অভিযোগ সর্বত্র। সেদিন গভীর রাতে প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া কুশিয়ারকুল ছুটে গিয়ে পুলিশকে সর্বতো সাহায্য করেছেন। পরদিন সকাল সকাল আরেক প্রাক্তন বিধায়ক অমরচাঁদ জৈনও গিয়েছিলেন সেখানে। তাঁরা উভয়ই সম্প্রতি অক্ষুণ্ণ রাখতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু বেপাত্তা ছিলেন বর্তমান বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদার। জাতীয় স্থরের নেতাদের কায়দায় ফেসবুকে এক ভিডিও ছেড়ে শান্তি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। ব্যস, এটুকুই! ওই ভিডিও-তে বিধায়ক জানান, বিধানসভা অধিবেশন থাকায় তিনি ঘটনাস্থলে আসতে পারছেন না। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে বিধায়কের ওই ভিডিও আরও ক্ষোভের সঞ্চার করে। ক্ষুব্দ, নিপিড়ীত লোকদের মতে, নিজের বিধানসভায় এতো বড় ঘটনার পর বিধায়ককে পড়িমরি করে ঘটনাস্থলে আসা উচিত ছিল। নিজে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি শান্ত করার কথা ছিল। জরুরি কাজে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা পর্যন্ত অধিবেশন ছাড়তে পারলে খলিল কেন পারবেন না?
এদিকে, এক সপ্তাহ পর যখন কুশিয়ারকুল শান্ত হয়েছে তখন পরিস্থিতি বুঝে ওখানে হাজির হয়েছেন খলিলবাবু। রবিবার বিধায়ক সেখানে পৌঁছে ঘটনায় আহত কনক নাথের বাড়ি গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। পরে কুশিয়ারকুল বাজারে এসেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি। এদিকে, বিধায়ক আসার খবর পেয়ে জড়ো হন স্থানীয় কিছু ভুক্তভোগী। কীভাবে উৎকণ্ঠায় দিন গেছে তাদের, তা জানাতে চান খলিলকে। জানতে চান, এতোদিন কোথায় ছিলেন বিধায়ক? কেন ঘটনার পরপরই আসলেন না? ইত্যাদি। বিধায়ক খলিল যখন তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে সাফাই দিতে যান, তখন ঘটে বিপত্তি! তিনি গুয়াহাটি ছিলেন, অধিবেশন চলছিল ইত্যাদি যখন নিজের বয়ানে আওড়াতে ছিলেন, তখন উত্তেজিত একদল লোক তাঁকে রীতিমতো ঘিরে ফেলেন। একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকেন। কিন্তু কোনও প্রশ্নেরই যুঁথসই জবাব ছিল না কাটিগড়ার বিধায়কের কাছে। এক সময় তিনি নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন।
ক্ষুব্দ মানুষরা বলতে থাকেন, ঘটনা ঘটিয়ে এখন এসেছেন মলম লাগাতে? কনক নাথকে যে ব্যক্তি আক্রমণ করে মাথা ফাটিয়েছে, সেই আব্দুল আলিম বড়ভুঁইয়া ওরফে সাবু তো আপনারই ঘনিষ্ঠ লোক! কনক নাথ কি হজ্ব করে এসেছেন যে এখন ফুল-গামছা দিয়ে তাঁকে বরন করতে হবে? কুশিয়ারকুলের বাসিন্দারা আরও বলেন, কাটিগড়ায় মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হলেই কেন বারবার দাঙ্গা হয়, থানা ভাঙচুর হয়? এখানে তো হিন্দু ব্যক্তিও বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন কেন এসব ঘটেনি? খলিল তখন নিশ্চুপ! ক্ষোভের পারদ চড়িয়ে এমন একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়া হয়। বলেন, কাণ্ড ঘটিয়ে এখন এসে মায়াকান্নার দরকার নেই। তখন বিধায়ককে বড় অসহায় দেখাচ্ছিল। একসময় কিছু প্রশ্নের উত্তর তিনি দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি আঁচ করে সাইলেন্ট মুডে চলে যান খলিল।
এদিকে, ঘটনাচক্রে তখন ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক অমরচাঁদ জৈনও। বর্তমানকে যখন তুলোধুনো করা হচ্ছে, তখন সাক্ষী প্রাক্তন। একসময় ‘বেচারা’ খলিলকে বাঁচাতে মাঠে নামেন অমর জৈন। প্রাক্তন বিধায়ক উত্তেজিত লোকদের প্রথমে শান্ত করতে তদ্বির চালান। পরে তিনি বলেন, গত সোমবারের ঘটনায় সকলের মতো বিধায়ক খলিলও মর্মাহত। ঘটনার বিস্তারিত জানতে এবং দোষীদের শাস্তির দাবি নিয়েই খলিল এসেছেন এখানে। তিনি কোনও বিশেষ দল বা ধর্মের হলেও এখন আমাদের বিধায়ক। তাই আমাদের দাবি-দাওয়া তিনিই উত্থাপন করবেন। অমর জৈনের কথা শুনে কিছু লোক শান্ত যেমন হোন তেমনি গলায় জল আসে খলিলেরও। তখন অবশ্য খলিলবাবুর সফরসঙ্গী কালাইন কংগ্রেসের জাকির খান, দীপন রায় প্রমুখও কথা বলেন। একসময় খলিল সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হন। আসার আগে বলেন, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হতে হবে, যে বা যারা ভুয়ো খবর প্রচার করেছিল, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এনিয়ে তিনি পুলিশের উপর মহলে কথা বলবেন। তবে সর্বাবস্থায় কুশিয়ারকুল ও সংলগ্ন অঞ্চলে সম্প্রতি বজায় রাখতেও অনুরোধ করেন কাটিগড়ার বিধায়ক।