জম্মু, ২২ ডিসেম্বর : অবিলম্বে কাজে যোগ না দিলে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে না বলে কাশ্মীর উপত্যকায় চাকরিরত হিন্দু পণ্ডিতদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর সেটা আর কেউ দেয়নি, খোদ জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা জম্মুতে এই হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত মে মাস থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় নিযুক্ত পণ্ডিতেরা কাজে যাচ্ছেন না। তা সত্ত্বেও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তাঁদের সবাইকে বেতন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে আর চলবে না। কাজে যোগ না দিলে বেতনও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
উপরাজ্যপাল এদিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ কর্মসংস্থান প্রকল্পে যেসব পণ্ডিতকে উপত্যকায় চাকরি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কোনও অবস্থাতেই জম্মুতে বদলি করা হবে না। পণ্ডিতদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা প্রশাসন করছে ও করবে। তাঁদের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের বন্দোবস্তও সরকার করছে। কিন্তু জম্মুতে বদলি করা হবে না। ঘরে বসে থাকলে তাঁদের বেতনও আর দেওয়া হবে না। এই স্পষ্ট বার্তা তাঁদের বুঝতে হবে।
সন্ত্রাসবাদী উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হিন্দু হত্যা শুরু হলে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় কাশ্মীর উপত্যকা থেকে হিন্দুরা অন্যত্র চলে যেতে থাকেন। এ সময় সাড়ে তিন থেকে পাঁচ লক্ষ হিন্দু উপত্যকা ত্যাগ করেন। অধিকাংশ আশ্রয় নেন হিন্দু প্রধান জম্মুতে। বাকিদের কেউ কেউ দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ ও পঞ্জাবের বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নেন। পণ্ডিতদের উপত্যকায় ফিরিয়ে নেওয়ার একাধিক উদ্যোগ কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সেই উদ্যোগে সামিল হন। ছয় হাজারের মতো পণ্ডিতকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে চাকরি দেওয়া হয়। কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলা শহর ও শ্রীনগরে তাদের জন্য আবাসনও তৈরি করা হয়। ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের পর নতুন করে শুরু হয় হিন্দু বিতাড়ন। নতুন করে শুরু হয় বাছাই করে হিন্দু হত্যা।
গত মে মাসে দুই কাশ্মীরি পণ্ডিত রাহুল ভাট ও রজনী ভাল্লা খুন হওয়ার পর দলে দলে হিন্দু সরকারি কর্মীরা জম্মুতে চলে যান। সেই থেকে এই সরকারি কর্মীরা জম্মু ও কাশ্মীরে কাজে যোগ না দিয়ে তাঁদের বদলির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলন ভাঙতে এবার উপরাজ্যপাল তাঁদের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিলেন। তিনি বলেন, তাঁদের প্রতি সরকার ও প্রশাসন সহানুভূতিশীল। কিন্তু বুঝতে হবে, তাঁরা সবাই কাশ্মীর ডিভিশনের কর্মী। তাঁদের নিযুক্তি কাশ্মীর উপত্যকার জন্য। কোনওভাবেই তাঁদের জম্মুতে বদলি করা যায় না। বদলি করা হবেও না।
কাশ্মীর উপত্যকায় রাজধানী শ্রীনগর ছাড়াও পণ্ডিতদের বিভিন্ন জেলা সদরে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কিছু মানুষের নিয়োগস্থল গ্রাম হলেও দেখা হয়েছে তাঁরা যেন দ্রুত জেলা সদরে যাওয়া-আসা করতে পারেন। হিন্দু কর্মীদের পদোন্নতির দাবিও অনেক ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া হয়েছে বলে উপরাজ্যপাল জানিয়েছেন।
আন্দোলনরত কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা উপরাজ্যপালের ওই হুমকির জবাবে বলেন, ‘তাঁরা দাবিতে অনড় থাকছেন। প্রশাসন চাইলে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করুক। চাকরির চেয়ে জীবনের দাম তাঁদের কাছে বেশি।’ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উদ্দেশে উপরাজ্যপালের এই হুমকি প্রমাণ করে, উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে সরকার দাবি করলেও হিন্দুরা তাদের আদৌ নিরাপদ মনে করছেন না। উপত্যকা ছেড়ে জম্মুতে ফেরার দাবিতে তারা অনড়। জম্মু-কাশ্মীরে ৭০ হাজার কোটি টাকা নতুন লগ্নির যে দাবি সরকার করে আসছে, তা এখনও কাগজে-কলমে। উপরাজ্যপাল এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘মিডিয়ার এই খবর আমিও দেখেছি। এটুকু আশ্বাস দিতে পারি, সব লগ্নি শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে।’