অনলাইন ডেস্ক : ডিলিমিটেশনের খসড়া ইস্যুতে কাছাড় বিজেপির সুখের সংসারে ক্রমেই যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অশান্তি। বৃহস্পতিবার শিলচরের এক হোটেলে দলীয় কর্মীদের সভায় উঠেছিল প্রতিবাদের ঝড়। আর এবার দলের একাংশ কর্মকর্তা দলীয় কাজকর্ম থেকে বিরত থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ধলাই এলাকার বাসিন্দা দলের এক বড় মাপের পদাধিকারীকে জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায় দলের মহাজনসম্পর্ক অভিযানের সম্পর্কিত কিছু কাজ করার জন্য বললে ওই কর্মকর্তা মুখের উপর মানা করে দেন। দলীয় এক সূত্র জানান, ওই কর্মকর্তা বিমলেন্দুবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নাম পরিবর্তন করে নরসিংপুর করা সহ ধলাই বিধানসভার কিছু এলাকা কাটছাঁট করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়, এতে গোটা এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভের। এলাকাবাসীর প্রশ্নের মুখে পড়ে তারা এসবের কোনও জবাব দিতে পারছেন না। তাই, নাম পরিবর্তন সহ এলাকা কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত দলের কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবেন তিনি। সঙ্গে এও বলে দেন, এর জন্য চাইলে বিমলেন্দু বাবু তাকে পদ থেকে সরিয়েও দিতে পারেন। এরপর ক্ষোভের সুরে এও বলে উঠেন, ‘ও যদি ভাবে একা দল চালাতে পারবে, তবে চালাক।’ তিনি কাকে ইঙ্গিত করে কথাটা বলেছেন তার নাম না নিলেও, দলীয় সূত্রটি জানান ক্ষুব্ধ ওই কর্মকর্তা, দলের জেলাস্তরের এক বিশেষ প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
দলীয় ওই সূত্রটি জানান, ধলাইয়ের ওই কর্মকর্তার মতো আরও কয়েকজনও বর্তমানে, দলীয় কাজকর্ম থেকে বিরত রয়েছেন। সবারই এক কথা, এলাকার লোকেদের প্রশ্নের মুখে পড়ে কোনও জবাব দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়কে এনিয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি দলে কোনও অশান্তি থাকার কথা উড়িয়ে দেন। তার কথায়, দলের তৃণমূল স্তর থেকে ডিলিমিটেশনকে ঘিরে কিছু কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব নিয়ে দলের বরাক উপত্যকা সমন্বয় কমিটির সদস্যরা আগামীকাল শনিবারই গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বাস শর্মা ও দলের রাজ্য সভাপতি ভবেশ কলিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সবকিছু তুলে ধরা হবে। এতে অবশ্যই সমাধানের একটা রাস্তা বের হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
বিমলেন্দুবাবু জানান, তিন জেলা থেকে সমন্বয় কমিটির কর্মকর্তারা গুয়াহাটিতে গিয়ে মিলিত হবেন। এরপর একসঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে। কমিটিতে কাছাড় থেকে যেসব সদস্য রয়েছেন তারা শনিবার গুয়াহাটি রওনা দিয়েছেন। প্রতিনিধিরা এ জেলার যেসব বিষয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন এর মধ্যে রয়েছে শিলচরের সাতটি ওয়ার্ড এবং ভজন্তিপুর জিপি শিলচর বিধানসভা এলাকায়ই বহাল রাখা, বদরপুর- মাছিমপুর জিপি, কুমারপাড়া এবং নিজ জয়নগর বড়খলা বিধানসভা এলাকায় বহাল রাখা,ধলাইর নাম বদলে নরসিংপুর না করা এবং কাটছাঁট করা অংশ বহাল রাখা, লক্ষ্মীপুর বিধানসভা এলাকার যেসব মনিপুরী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রাম সোনাইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেসব বহাল রাখা ইত্যাদি। তিনি জানান লক্ষীপুরের মনিপুরী জনগোষ্ঠী অধিষ্ঠিত গ্রামগুলোর সোনাইয়ে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের আপত্তির কথা তাকে জানিয়েছেন দলের নেত্রী রীনা সিংহ।
তিনি আরও জানান, সামগ্রিকভাবে করিমগঞ্জ লোকসভা আসন যাতে সংরক্ষণমুক্ত করা না হয় এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হবে। সঙ্গে আইন অনুযায়ী শিলচর লোকসভা আসনকেও যদি সংরক্ষণের বাইরে রাখা সম্ভব হয় এনিয়েও অনুরোধ জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। যাতে তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলে এসব নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেন। বিমলেন্দুবাবু বলেন, যেভাবে বিভিন্ন এলাকা কাটছাঁট নিয়ে আপত্তি উঠেছে, এতে করে নির্বাচন কমিশনের উচিত ম্যাপ নিয়ে সরেজমিনে এসে সবকিছু যাচাই করে দেখে এরপর ব্যবস্থা নেওয়া।