অনলাইন ডেস্ক : বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওডিশার বালেশ্বরের কাছে লাইনচ্যুত চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হাওড়ার শালিমার স্টেশন শুক্রবার দুপুরে ট্রেনটি ছাড়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর স্টেশন ছাড়ে বিকেল সওয়া ৫টায়। সন্ধ্যে সাড়ে ৬টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছয় বালেশ্বরে। বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। জানা গিয়েছে, ট্রেনটির একাধিক কামরা বেলাইন হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে শতাধিক যাত্রী নিহত হয়েছেন।
ওড়িশার একচিলতে গঞ্জ। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তারই মাঝে প্রায় লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে বিশাল দুটো ট্রেন। যার একটা, হাওড়ার শালিমার থেকে চেন্নাই-গামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। কৌলীন্যের বিচারে একেবারে সবার ওপরে, প্রায় রাজধানী-দুরন্তর সমতুল। দক্ষিণ ভারত যাওয়ার জন্য বাঙালির সবার আগে প্রথম পছন্দ। টিকিট পাওয়াটাই যেখানে ভাগ্যের ব্যাপার। সেই ট্রেনের ঝাঁ চকচকে ‘লিঙ্ক-হফম্যান-বুশ’ কামরাগুলো একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে ছিটকে পড়ে আছে চারপাশে।
ঘটনার পর উদ্ধারকাজে প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্থানীয়রাই। অন্ধকারের মাঝে আলো জোগাড় করে, মই এনে উল্টে যাওয়া বগির ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন তাঁরা। ততক্ষণে অল্প আলোতে ছবিটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছেন যাত্রীরা। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কেউ কেউ, কারোর শরীর স্থির, প্রাণ আছে কিনা বোঝা দুষ্কর। রেললাইনের পাশে, পাথরে, স্ল্যাবের ওপরে খেলনার মত ছড়ানো দেহগুলি। কার্যত এরকমই ভয়ানক ছবি উঠে আসছে প্রত্যক্ষদর্শীদের তোলা ছবি বা ভিডিওতে। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে কেউ কেউ এগিয়ে দিচ্ছেন জলের বোতল।
ততক্ষণে কাছাকাছির রেলগেট থেকে তীব্র হতে শুরু করেছে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন। স্থানীয়রাই একে একে আহতদের উদ্ধার করতে শুরু করেন। খবর যায় রেলে। খড়্গপুর থেকে রওনা হয়েছে উদ্ধারকারী দল। কিন্তু তার আগে স্থানীয় বাসিন্দারাই হতাহতদের নিয়ে যেতে শুরু করেছেন হাসপাতালে। এক যাত্রী জানালেন, কার্যত সত্তরভাগ আহতকে স্থানীয়রাই উদ্ধার করে পাঠান চিকিৎসার কাজে। মৃতদের সংখ্যা নিয়ে কোনও তথ্য এখনও জানাতে পারেনি রেল। লাফিয়ে বাড়তে পারে সংখ্যাটা, আশঙ্কা করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। অসমর্থিত সূত্রের খবর, এখনও অবধি ১০০ জনের মৃত্যুর খবর আসছে।
করমণ্ডলের বেশিরভাগ কামরাই ধারণক্ষমতার চাইতে অনেক বেশি যাত্রী নিয়ে যায়। এমনিতেই স্লিপার কামরাতে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি ভিড় হয় কোনও কোনও দিন। যাত্রীদের অভিযোগ, রেলের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই একশ্রেণির টিকিট পরীক্ষক নানাভাবে অতিরিক্ত যাত্রীদের জায়গা করে দেন। অনেকেই বসে পড়েন সিটের মাঝে প্যাসেজে, কেউ কেউ শৌচাগারের সামনেও ভিড় জমান। অসংরক্ষিত কামরায় কার্যত ‘অফিস টাইমের’ মত বাদুড়ঝোলা ভিড় হয়। ফলে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা শেষ অবধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, চূড়ান্ত শঙ্কায় রেল।