অনলাইন ডেস্ক : রাম মতাদর্শে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে দেশের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ আনলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রবিবার গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ভারতের ইতিহাস বিকৃত করেছে বামেরা। তাই দেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হিমস্তের দাবি, বাম আদর্শের অনুগামীরা বরাবরই অসমকে ভাষাগত ভাবে বিভাজন করার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা রাজ্যের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিপথে চালিত করেছে। এর পাশাপাশি গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময় অসম অশান্ত হওয়ার জন্যও বামেদেরই দায়ী করেছেন হিমন্ত। এদিন মুখ্যমন্ত্রী অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-র ২৮তম রাজ্য সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই বাম মতাদর্শে বিশ্বাসীদের নিশানা করেন। তিনি। তাঁর মস্তব্য, ‘বামেদের বহুদিনের প্রয়াসি ছিল যে ভারতের ইতিহাস বিকৃত করে আমাদের এক পরাজিত জাতি হিসাবে প্রতিপন্ন করা। মোগলদের বিরুদ্ধে যাঁরা বুক চিতিয়ে লড়েছিলেন ও পরাজিত করেছিলেন, সেই সব বীর সেনানীদের ইচ্ছে করেই ক্রমাগত উপেক্ষা করেছে বামেরা। কেবল মোগলদের হাতে পরাজয় স্বীকার করা ব্যক্তিদের উল্লেখই বাম আদর্শের অনুগামীরা করেছেন। “হিমস্ত এদিন মোগলদের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া বীর সেনানীদের উদাহরণ তুলে ধরে কটাক্ষ করেন বাম অনুগামীদের। শুরু গোবিন্দ সিং, ছত্রপতি শিবাজি, দুর্গা দাস রাঠোর ও লাচিত বরফুকনের কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বীরদের চরম উপেক্ষা করেছেন বামেরা। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, দেশের ইতিহাস নতুন করে লেখা উচিত। তাঁর কথায়, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে ফের ইতিহাস লেখার জন্য অনুপ্রেরণা দেওয়া উচিত। ওখানে আগের দাসত্ব ও পরাজয়ের কাহিনীর পরিবর্তে বীরত্ব ও জয়ের কথা চর্চিত হবে। এমনটা করলে আগামী দিনে দেশ গঠনেও সুফ মিলবে।’ এদিন বিভিন্ন সময় অশান্ত হওয়ার দায়ও বামেদের দিকেই ঠেলেছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর যুক্তি, ‘গত তিন দশক ধরে রাজ্যে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বসবাসের সুযোগ নিয়ে সবার মধ্যে অতি নিপুণভাবে বিরোধ সৃষ্টিতে মদত দিয়েছে বাম আদর্শের অনুগামীরাই। অসমের প্রাক্তন নেতারা যদি আগেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন, তাহলে রাজ্যে এত অশাস্তি দেখাই যেত না। হিমন্ত আরও বলেন, যদিও ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু এটি একটি সম্প্রদায়ের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না। ধর্ম এবং ইতিহাসও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরপরেই তাঁর সংযোজন, ‘ভাষা তখনই টিকে থাকবে যখন আমাদের ধর্ম ‘ও সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে।’ মুখ্যমন্ত্রী অসমিয়া মানুষদের রাজ্যের অন্যান্য ভাষা এবং সমস্ত উপজাতি সম্প্রদায়কে সমান গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। নিশ্চিত করার জন্য অসমিয়া ভাষাভাষীদের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি এদিন অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা এবং কৃষিতে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেন। একটি সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং রাজনৈতিক গর্ব প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যদি অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে না পারি, তাহলে আমরা যদি আত্মনির্ভর হতে না পারি তাহলে অর্থনৈতিক ভাবেও উন্নতি করতে ব্যর্থ হব। এ কথাই দেশের প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন’, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। হিমস্ত এদিন রাজ্যের যুবকদের নিজেরা কৃষিকাজ করতে এবং অন্যের কাছে জমি চাষের জন্য ছেড়ে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা যদি আমাদের জমিতে অন্যদের চাষ করতে দেই, তাহলে আমরা শুধু কাগজে-কলমেই মালিক থাকব এবং প্রকৃত মালিকানা অন্যের হাতে চলে যাবে। আমাদের জৈব এবং অন্যান্য কৃষি পণ্যের জন্য একটি বিশাল বাজার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই তা অন্বেষণ করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটি ধারণা ভুলভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে অসম ও উত্তর-পূর্ব ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অংশ নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের এই অংশে একটি ‘ভিন্ন চিন্তাধারার অত্যন্ত কৌশলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্রমশ সে ধারণার পরিবর্তন হয়েছে এবং আজকের দিনে অসম-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব দেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, উক্তি হিমন্ত বিশ্ব শর্মার।