গত সংখ্যার পর
অনলাইন ডেস্ক : সেই ১৭৬২ সালের কথা। যখন প্রথমবারের মত উপত্যকায় পা রেখেছিল ব্রিটিশরা। আসলে তখনই শিলচরে আশ্রয় নেয় ব্রিটিশ সেনারা। পরবর্তীতে শেষ কাছাড়ি রাজা গোবিন্দচন্দ্র নারায়ণের সঙ্গে যুদ্ধে জিতে ১৮৩২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কাছাড়ের দখল নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় গোরা সাহেবরা। আর ব্রিটিশ অধীনস্ত কাছাড়ের প্রথম শাসক ছিলেন ক্যাপ্টেন থমাস ফিশার। ১৮৩৩ সালে শিলচরে কাছাড় জেলার প্রশাসনিক কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। তাই বলতে হয় কাছাড়ই আসামের সবচেয়ে পুরাতন জেলা। ১৯৫৪ সালে এন সি হিলস, হাইলাকান্দি এবং কাছাড় জেলা ব্রিটিশ শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সেইসঙ্গে ১৮৭৪ সালে আসামের অঙ্গ হয় কাছাড় এবং এর মহকুমার তকমা পায় শিলচর।
ইতিহাসবিদ রামেন্দ্র দেশমুখ্য-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টায় উধারবন্দ এবং শিলচরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা একেবারেই ভালো ছিল না। নদীপথই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। লোকেরা নৌকা করে আসা যাওয়া করত। এতে কম করেও তিন চার ঘন্টা লেগে যেত। পরে সড়ক নির্মাণ করা হয়। এই পথে প্রথম বাস পরিষেবা চালু করেছিলেন প্রয়াত ব্রজমোহন সিংহ। একটিই বাস ছিল। তা সকালে উধারবন্দ থেকে ছাড়তো সাড়ে দশটায়। আর বিকেল আড়াইটায় শিলচর থেকে ছেড়ে উধারবন্দে ফিরে আসত। দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন আগে অর্থাৎ ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ প্রশাসন এক ফরমান জারি করে জানায় যে বিশ্বযুদ্ধের এয়ারবেস তৈরির জন্য জায়গা চাই। সেজন্য রাতারাতি উধারবন্দ এলাকাটা খালি করে দিতে হবে। উল্লেখ্য ১৯৩৯ সালেই ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল। সেনার আদেশ অনুযায়ী কুম্ভীরগ্রাম বাগানে জায়গা খালি করে বিমানবন্দর তৈরি করা হয়। মাত্র কয়েকদিনেই কর্দমাক্ত মাটিকে এয়ারবেসে রূপান্তর করে ফেলেন এলাকার কয়েক হাজার শ্রমিক। সেইসঙ্গে শিলচর – উধারবন্দ সড়ককেও রাতারাতি উন্নত করা হয়। তখন আজকের মত যন্ত্রপাতি ছিল না। হাতি দিয়েই যাবতীয় কাজ করানো হতো। হাতেগোনা কয়েকদিনের মধ্যেই রাস্তাটি যাতায়াতের উপযোগী হয়ে উঠে। রাস্তার কাজ এবং এয়ারবেস নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন লারসিং চা বাগানের ম্যানেজার দুচার সাহেব। এই সময়টায় ব্যাটেলফিল্ড হয়ে উঠেছিল কাছাড়। আর শিলচর ছিল সেনার হেডকোয়ার্টার। শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকারি আবাসন এবং স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সেনাকে।
স্বাধীনতার আগে এবং পরের উধারবন্দকে তুলনা করলে অনেক আশ্চর্যজনক তথ্যই বেরিয়ে আসবে। স্বাধীনতার পর সিলেটের একটা অংশ কাছাড়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। নাম দেওয়া হয় করিমগঞ্জ মহকুমা। তাছাড়া এনসি হিলসও ১৯৫০ সালে কাছাড় থেকে বিভক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে আসাম সরকার এক নির্দেশিকায় করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দিকে আলাদা জেলার স্বীকৃতি দেয়। সেইসময় উধারবন্দে একটি ছোট্ট পুলিশ স্টেশন তৈরি করা হয়। লোকেরা বাজারের পাশ্ববর্তী অঞ্চলে জমি কিনে ঘর তৈরি করতে থাকে। আর ১৯৬৬ সালে বরাক নদীর উপর সেতু নির্মাণ হয় এবং সেইসঙ্গে চালু হয় শিলচর – উধারবন্দ ট্যাক্সি পরিষেবা।
(সমাপ্ত )