অনলাইন ডেস্ক : মেজর ধ্যানচাঁদ ছিলেন একজন ভারতীয় হকি খেলোয়াড়।ধ্যানচাঁদের জন্ম ১৯০৫ সালের ২৯ আগস্ট উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের এক রাজপুত ব্রাহ্মণ পরিবারে। ভারতীয় হকি দলের এই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বিশ্ব হকির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ তারকা খেলোয়াড় হিসাবেই গণ্য হন। তিনি এমন ভারতীয় হকি দলের সদস্য ছিলেন যে দল পরপর তিনটি (১৯২৮ আমস্টারডাম, ১৯৩২ লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ১৯৩৬ এর বার্লিন ) অলিম্পিকেই বিশ্বজয়ীর জয়মাল্য (স্বর্ণপদক) লাভ করেন। তাঁর জন্ম তারিখটি ভারতে জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসাবে পালিত হয়।
ফুটবলে পেলে, ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের সমকক্ষ হিসাবে হকিতে ধ্যানচাঁদকেই গণ্য করা হয়। বল তার হকি স্টিকে এতটাই আটকে যেত যে, প্রতিপক্ষ প্রায়ই সন্দেহ করত যে সে জাদুর কাঠি নিয়ে খেলছে। ইংল্যান্ডে তাকে হকির জাদুকর বলা হতো। হল্যান্ডেও চুম্বক সন্দেহে তার হকি স্টিককে ভেঙে নতুন হকি স্টিক দেয়া হয়েছিল। জাপানে ধ্যানচাঁদের হকি স্টিকে যেভাবে বল লেগে থাকত, তা দেখেই বলা হত তাঁর হকি স্টিকে আঠা লাগানো আছে। ধ্যানচাঁদের ছন্দোময় হকি খেলা দেখে সারা বিশ্ব বিস্ময় প্রকাশ করত। তার ক্রীড়া নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে জার্মানির রুডলফ হিটলারের মতো একগুঁয়ে সম্রাট তাকে জার্মানির হয়ে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিংবদন্তি এই হকি তারকার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে, চার হাতে চারটি হকি স্টিক সহ একটি মূর্তি স্থাপন করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে যে ধ্যানচাঁদ কত বড় খেলোয়াড় ছিলেন।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার ভারতীয় হকির অবিস্মরণীয় প্রতিভার ধ্যানচাঁদকে ভারতের মর্যাদাপূর্ণ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে সম্মানিত করে। ভারতে ধ্যানচাঁদের জন্মদিনকে জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। ২০১২ সালে থেকে তার স্মৃতিতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আজীবন কৃতিত্বের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার মেজর ধ্যানচাঁদ পুরস্কার দেওয়া হয়। জাতীয় ক্রীড়া দিবসে রাষ্ট্রপতি খেলাধুলায় অসামান্য পারফরম্যান্সের জন্য মেজর ধ্যানচাঁদ পুরস্কার প্রদান করে থাকেন।
এই কিংবদন্তির শেষ জীবনটা ভাল যায়নি। উত্তর প্রদেশের ঝাঁসিতে জীবনের শেষ দিনগুলি কেটেছে অর্থকষ্টে। শেষের দিকের লিভারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসা চলছিল দিল্লির অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থানে। সেখানে ১৯৭৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ঝাঁসিতে ‘ঝাঁসি হিরোজ’ ময়দানে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের দেওয়া পূর্ণ সামরিক মর্যাদায়।