অনলাইন ডেস্ক : উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিকশিত ভারতের ইঞ্জিন হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা। অরুণাচল প্রদেশে বিশ্বের দীর্ঘতম টুইন-লেন ‘সেলা টানেল’ উদ্বোধন করে ‘বিকশিত ভারত বিকশিত উত্তর-পূর্ব’ কর্মসূচির অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হাজারো জনতার সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘গোটা ভারতে বিকশিত রাজ্য থেকে বিকশিত দেশ গড়তে জাতীয় উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। বিকশিত উত্তরপূর্বের এই উৎসবে আজ আমি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের সাথে একযোগে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছি। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের দৃষ্টি ছিল অষ্টলক্ষ্মী।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সাথে ভারতের বাণিজ্য, পর্যটন এবং অন্যান্য সম্পর্কের একটি শক্তিশালী সংযোগ হতে চলেছে। আজ এখানে ৫৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আজ অরুণাচল প্রদেশের ৩৫ হাজার দরিদ্র পরিবার তাঁদের স্থায়ী ঘর পেয়েছেন।’
মোদি বলেন, ‘অরুণাচল প্রদেশ এবং ত্রিপুরার হাজার হাজার পরিবার জলের নল সংযোগ পেয়েছে। তাছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে সংযোগ সম্পর্কিত বহু কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করা হচ্ছে।’ শনিবার ইটানগরের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুকে সঙ্গে নিয়ে অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলায় সাগরস্তর থেকে প্রায় ১৩,৭০০ ফুট উচ্চতায় বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) কর্তৃক কৌশলগতভাবে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ সেলা টানেল জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন। টানেলটি মোট ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এই টানেল অসমের শোণিতপুর জেলার অন্তর্গত বালিপাড়া-চারিদুয়ার থেকে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সংযোগকারী সড়কে অবস্থিত।
টুইন লেনের টানেল-১-এ একটি একক-টিউব কাঠামো যা ৯৮০ মিটার কভার করে। টানেল-২ ১,৫৫৫ মিটার দীর্ঘ। টুইন-লেনের একটি যাতায়াত এবং অন্যটি জরুরি পরিষেবার জন্য। ১,২০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা এই টানেলকে সংযুক্ত করেছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সেলা টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। টানেলটি নতুন অস্ট্রিয়ান টানেলিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ মানের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করেছে বিআরও। প্রকল্পটি শুধুমাত্র এই অঞ্চলে একটি দ্রুততর এবং আরও দক্ষ পরিবহণ রুট প্রদান করবে না বরং দেশের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বহন করবে।
এদিন ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি যে সব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী সেগুলির মধ্যে অন্যতম লোয়ার দিবাং ভ্যালি জেলায় ৩১,৮৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮৮০ মেগাওয়াট দিবাং বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, ‘ভাইব্রেন্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম’-এর অধীনে বেশ কিছু রাস্তা, পরিবেশ ও পর্যটন প্রকল্প, ৫০টি স্কুলকে সুবর্ণ জয়ন্তী স্কুলে উন্নীত করা যেখানে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো সুবিধার মাধ্যমে সামগ্রিক শিক্ষা প্রদান করা হবে, ডনি-পোলো বিমানবন্দর থেকে নাহরলগুন রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সংযোগ প্রদানের জন্য ডাবল লেনের রাস্তা, জল জীবন মিশনের প্রায় ১,১০০টি প্রকল্প, ইউনিভার্সাল সার্ভিস অবলিগ্যাশন ফান্ড (ইউএসওএফ)-এর অধীনে ১৭০টি টেলিকম টাওয়ার (৩০০-র বেশি গ্রাম উপকৃত) প্রভৃতি। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (শহুরে ও গ্রামীণ) অধীনে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৫ হাজারের বেশি ঘর সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দিয়েছেন৷
এদিন প্রধানমন্ত্রী উত্তরপূর্বের জন্য একটি নতুন শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প, ‘উন্নতি’ (ইউএনএনএটিআই বা উত্তর পূর্ব ট্র্যানস্ফর্মেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন স্কিম) চালু করেছেন। এই স্কিম উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিল্প বাস্তুতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, নতুন উৎপাদন ও পরিষেবা ইউনিট স্থাপনে সাহায্য করবে এবং উত্তরপূর্বীয় রাজ্যগুলিতে কর্মসংস্থান বাড়াবে। ১০ হাজার কোটি টাকার এই স্কিম সম্পূর্ণরূপে ভারত সরকারের অর্থানুকূল্যে বাস্তবায়িত হবে। এটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যকে কভার করবে।