অনলাইন ডেস্ক : রামনগর এলাকায় বাইপাস থেকে উদ্ধার হল গৃহবধুর মৃতদেহ। অপর্ণা দাস (২৫) নামে ওই গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি সেখান থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে সুবল দাস (২৩) নামে এক যুবককেও। অপর্নার বাবা শহরের ন্যাশনাল হাইওয়ে এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দ দাসের অভিযোগ তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে অভিযোগ এনে তিনি জামাতা অম্বিকাপুর জিপির সভাপতি সুরাট দাস ওরফে রাজা, তার বাবা সন্তোষ দাস এবং তাদের এক সঙ্গী দীপক সরকারকে অভিযুক্ত করে থানায় দায়ের করেছেন এজাহার। অরবিন্দ দাস হত্যার অভিযোগ আনলেও পুলিশ অবশ্য প্রাথমিকভাবে ঘটনাটাকে পথ দুর্ঘটনা বলেই মনে করছে।
ঘটনা গত ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতের। রামনগর বাইপাস এলাকায় অপর্ণা দাসকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কাছেই আহত অবস্থায় পড়েছিল সুবল দাস, সুবলও ন্যাশনাল হাইওয়ে এলাকার বাসিন্দা। সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি বাইকও। সুবল বর্তমানে এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অপর্নার বাবা অরবিন্দ দাসের অভিযোগ, জামাতা সুরাট দাস ও তার বাবা সন্তোষ দাস সহ তাদের সঙ্গীরা মিলে চক্রান্ত করে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরে হত্যা করেছেন তার মেয়েকে। অরবিন্দর বয়ান অনুযায়ী বিয়ের পর থেকেই সুরাট সহ তার পরিবারের লোকেরা অপর্নার উপর শুরু করেন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। এতে বাধ্য হয়ে অপর্না কয়েকবার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে সুরাটরা সামাজিক বিচারের মাধ্যমে অত্যাচার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। যদিও তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবে প্রতিফলিত হয় নি। এসবের মাঝে সুরাট জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া সম্পর্কে। অন্য এক যুবতীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়ে অপর্ণাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। এই অবস্থায় কিছুদিন আগে অপর্ণা ফের আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। কিন্তু সুরাট এরপরও তার প্রেমিকাকে বিয়ের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়ে অপর্ণাকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি না হলে অপর্ণাকে হত্যার হুমকি দেন সূরাট। এরপর ১৩ এপ্রিল ঘটনার দিন রাতে কোনওভাবে অপর্ণাকে তার বাড়ি (বাবার বাড়ি) থেকে বের করে নিয়ে রামনগর বাইপাস এলাকায় গাড়ি ধাক্কা দিয়ে হত্যা করেন। অরবিন্দ এজাহারে এভাবে অভিযোগ আনলেও এই ঘটনায় সুবলের আহত হওয়া সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি।
এদিকে সুরাট দাসের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সুরাট ছিলেন গুয়াহাটিতে। এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আসলে অজানা কারণে অপর্না সুরাট ও তার পরিবারের লোকেদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে তটস্থ করে রাখতেন। তার বিভিন্ন অনৈতিক দাবি সূরাট না মানায় রেগে মেগে অপর্ণা চলে যান বাবার বাড়িতে। আর এর সূত্র ধরে এবার অপর্নার মৃত্যুকে হাতিয়ার করে রেশ মেটানোর জন্য বাবা অরবিন্দ সূরাট ও তার পরিবারের লোকেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদের ফাসিয়ে দিতে চাইছেন। কিভাবে ঘটনাটা ঘটেছে এ নিয়ে সুরাট বা তার পরিবারের লোকেরা কিছুই জানেন না। হয়তো অন্য কোনও রহস্য চাপা দিতে অরবিন্দ এভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।
উভয়পক্ষের এমন পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের মাঝে পুলিশ অবশ্য প্রাথমিকভাবে ঘটনাটাকে দুর্ঘটনা বলেই মনে করছে। ট্রাফিক পুলিশের সিটি ইন্সপেক্টর কমলেশ সিং জানান, নিজেদের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করে কয়েকজন যে বয়ান দিয়েছেন সে অনুযায়ী, সুবল ও অপর্না একটি বাইকে চড়ে যাচ্ছিলেন। তখন একটি লরির সঙ্গে বাইকের সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বাইকও। কমলেশবাবু সঙ্গে অবশ্য একথাও বলেন, প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও এর সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার পেছনে অন্য কোনও রহস্য লুকিয়ে রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও।