সামাজিক মাধ্যমে ভারত-বিরোধী পোস্টে লাইক করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ থেকে এসে শিলচরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)-য়ে পড়াশোনা করা এক ছাত্রী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক প্রাক্তন ছাত্র সম্প্রতি বেশকিছু ভারত-বিরোধী পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়া তুলে ধরেছিল এবং সেই পোস্টগুলো লাইক করে ওই ছাত্রী এতে সমর্থন জানিয়েছিল। এর ফলে পরিস্থিতি খারাপ হয় এবং হস্তক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে। সোমবার সকালে পুলিশের সহায়তায় ছাত্রীটিকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শিলচর এনআইটির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক অসীম রায় জানিয়েছেন, ২০২১ সালে ছাত্রীটি এই প্রতিষ্ঠানে আসে এবং এখন বি-টেক চূড়ান্ত বর্ষে রয়েছে সে। ছাত্রীটি রবিবার তাদের কাছে এক লম্বা ছুটির জন্য আবেদন জানায় এবং বাড়ি যাওয়ার জন্য পুলিশের সহায়তা চায়। এরপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাছাড় জেলার পুলিশ সুপার নুমাল মাহাত্তার কাছে বিষয়টি জানানো হয়। সঙ্গে ছাত্রীর ছুটিও মঞ্জুর করা হয়। সোমবার সকালে পুলিশের পাহারায় তাকে করিমগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয় এবং চুড়াইবাড়ি সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পুলিশ সুপার জানান, তারা শনিবার রাতেই গোটা বিষয়ের তদন্ত শুরু করেছেন এবং তিনি নিজেও শিলচর এনআইটিতে গেছেন।
মাহাত্তা বলেন, ‘আমাদের সাইবার মনিটরিং সেল গোটা বিষয়ের উপর নজর রাখছে। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং তারা জানিয়েছেন, যে ছেলেটি ভারত-বিরোধী কথা লিখেছে সে প্রাক্তন ছাত্র। এখন সে বাংলাদেশেই থাকে। স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংগঠন আমাদের কাছে এব্যাপারে আরও কিছু তথ্য তুলে ধরে। তারা জানায়, শিলচর এনআইটিতে থাকা কিছু ছাত্র-ছাত্রী ভারত বিরোধী মন্তব্যের সমর্থন করছে। এদিকে যখন এনআইটি কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান, একটি ছাত্রী বাড়ি যেতে চায় এবং এতে আমাদের সহায়তা প্রয়োজন। তাদের কথামতো আমরা ছাত্রীটিকে নিরাপদে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ সে তার নিজের দেশে প্রবেশ করেছে।’ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শুভাশিস চৌধুরী ২২ আগস্ট বিষয়টি জনসমক্ষে এনেছিলেন। তিনি জানান, সাদাত হোসেন আলফি নামের এক ছাত্র ভারত বিরোধী কথাবার্তা লিখছে এবং তার প্রোফাইলে লেখা রয়েছে শিলচর এনআইটি। সুভাষ বলেন, ‘শিলচর এনআইটি দেখে আমরা চমকে উঠি এবং সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানাই। সবাইকে সচেতন করতে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমেও তুলে ধরা হয়। পরে জানা যায়, সাদাত হোসেন আলফি প্রাক্তন ছাত্র এবং সে এখন ভারতে থাকে না। বিষয়টি নিয়ে আরো ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আমরা লক্ষ্য করি, দুজন ছাত্রী আলফির পোস্টে লাইক করেছে, অর্থাৎ তারা তার কথাগুলো সমর্থন করে। আমরা জানতে পারি, এরা দুজনেই শিলচর এনআইটিতে রয়েছে। আমরা পুলিশ এবং এনআইটি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, এদের যেন অতিসত্বর নিজের দেশে পাঠানো হয়।’ এনআইটির কিছু ছাত্র-ছাত্রীরা নাম প্রকাশ না করে প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের কার্যকলাপ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তারা জানান, বাংলাদেশের কিছু ছাত্র-ছাত্রী ক্যাম্পাসের থেকেই ভারত বিরোধী কথাবার্তা বলে। কোনও ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তান জিতলে সেটা নিয়ে হৈ-হুল্লোড় হয় আর ভারত জিতলে তাদের মন খারাপ হয়। কিছু ছাত্র ছাত্রী বারবার স্থানীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার চেষ্টাও করে। তারা জানান, যেখানে হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা সরস্বতী পূজা করে ঠিক তার ওপরেই ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পড়ার জায়গা গড়ে তোলা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে একদিন বড়সড়ো সংঘাত দেখা দিতে পারে।