অনলাইন ডেস্ক : এবার ফাল্গুনের শুরু থেকেই দোকানে দোকানে ঠাণ্ডা পানীয়ের খোঁজ পড়ে গেছে। মাথার ওপর হাল্কা করে ফ্যানও চালাতে হচ্ছে। এদিকে ফাগুন হাওয়ায় অচিনপুরের ডাক। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আর সমতলের গরম থেকে রক্ষা পেতে কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসা যায় কাছে পিঠের পাহাড়ি অঞ্চলে। এ সময় পাহাড়ের আবহাওয়া খুবই মনোরম; প্রকৃতিও নব পত্রালিকায় প্রসাধিত হয়ে পথের দু পাশে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের স্বাগত জানায়। বরাক উপত্যকার মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য হল মেঘালয়ের ছোট-বড় হিল ষ্টেশনগুলো। তার মধ্যে ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম মাওলিনং এখন দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। ২০০৩ সালে এটি এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসাবে স্বীকৃতি পায়। গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১৯০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রামে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করা ছাড়া উপায় নেই। চাইলে শিলং থেকেও ক্যাব বুক করেও ঘুরে আসা যায় একদিনের জন্য। শিলং থেকে মাওলিনং এর দুরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং এই যাত্রাপথটি অপূর্ব সুন্দর। গ্রামে ঢোকার ২ কিলোমিটার আগে দেখে নিন বিখ্যাত লিভিং রুট ব্রিজ। একটি বিশালাকৃতির রবার গাছের অসংখ্য শেকড়ের সাহায্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে ব্রিজটি। মাওলিনং গ্রামটি ভালো করে ঘুরে দেখতে হলে এখানে এক রাত থাকতে হবে। থাকার জন্য রয়েছে একাধিক হোমস্টে। বড় দল নিয়ে গেলে অগ্রিম বুকিং করে নেওয়াই ভালো। এখানকার স্থানীয়রা অত্যন্ত অতিথিবৎসল এবং আন্তরিক। মাওলিনং-এ দ্রষ্টব্য স্থানগুলি হল– দুটো চার্চ, স্কাই ভিউ পয়েন্ট, মেঘালয়ের ওয়াটার এন্ড সয়েল কনজার্ভেশন। বাঁশ ও দড়ি দিয়ে তৈরি স্কাই ভিউ পয়েন্ট থেকে ওপারে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। পরদিন সকালে পায়ে হেঁটে গ্রামের জীবনযাত্রা ও পরিচ্ছন্নতার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ভুলবেন না। ভোরের নির্মল বাতাসে হাল্কা ঠাণ্ডার আমেজ আর পথের দুপাশে ফুলের সমাহার দেখে মন ভরে যাবে। এ গ্রামের প্রত্যেক বাসিন্দারা নিজ নিজ দায়িত্বে গ্রামকে পরিষ্কার রাখেন। খাসিয়া রমণীরা ঝাড়ু হাতে রাস্তায় ঝরা পাতা বা টুকটাক আবর্জনা তুলতে ব্যস্ত—এ দৃশ্য গ্রামের সবখানেই চোখে পড়ে। সারা গ্রামে কিছুদূর পর পর বাঁশের তৈরি ত্রিকোণাকার ডাস্টবিন রাখা আছে।
কোথাও এক টুকরো কাগজও পড়ে থাকলে তা তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেন স্থানীয় লোকেরা। গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ এবং সুপারি হল আয়ের প্রধান উৎস। তাই সারা গ্রামে প্রচুর সুপারি গাছের সারি দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামে শিক্ষার হার ৯০ শতাংশ এবং প্রায় সকলেই ইংরেজি বোঝেন। এ গ্রাম শুধু দেখার নয়, অনেক কিছু শেখারও আছে মাওলিনং এর কাছ থেকে। তাই আর দেরি না করে দু দিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন মাওলিনং।