অনলাইন ডেস্ক : গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী প্রিপেইড বিদ্যুৎ পরিমাপের স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবিতে রবিবার করিমগঞ্জে অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এক গণ-অবিবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অল আসাম ইলেক্ট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের অসম রাজ্য কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক হিল্লোল ভট্টাচার্য এবং অ্যাসোসিয়েশনের কাছাড় জেলা কোঅর্ডিনেশন কমিটির কো-চেয়ারম্যান নির্মলকুমার দাস।
বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রেখে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় গোটা দেশে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৮ সালে গৃহীত বিদ্যুৎ আইনে উল্লেখ ছিল, ‘নো প্রফিট নো লস’ নীতির ভিত্তিতে এই পরিষেবাকে গোটা দেশের জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। তাই জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে আজ যখন গোটা দেশে বিদ্যুতের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং দেশের জনগণের বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে, তখন দেশের কর্পোরেটরা এই ক্ষেত্রের বিতরণ ব্যবস্থায় ঢুকতে চাইছে তাঁদের মুনাফার লালসাকে চরিতার্থ করতে।
গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকের সূচনায় কেন্দ্রীয় সরকার উদারীকরণ বিশ্বায়নের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করে। তখন পরিষেবা ব্যবস্থাকে সরকার ধীরে ধীরে দুর্বল করে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দিতে, তখনই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় কর্পোরেটরা প্রবেশের ছাড়পত্র পেতে উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে এবং এর ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০০৩ সংসদে গৃহীত হয়। এই বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে কর্পোরেটদের ব্যাপকহারে অনুপ্রবেশ ঘটে এবং বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হতে শুরু করে। বর্তমানে যেহেতু বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই কর্পোরেটরা পূর্ববর্তী আইনে গ্রাহকদের স্বার্থ সংবলিত ধারাগুলো সম্পূর্ণ তুলে দিতে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করছে। কর্পোরেটদের চাপে সংসদে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২২ উত্থাপিত হয়েছিল। যদিও এই বিলের অন্যতম ধারা ‘প্রায়োর গ্যারান্টি অব রেভিনিউ’কে বেআইনিভাবে চাপিয়ে দিয়ে জনসাধারণকে লুণ্ঠনের লক্ষ্যে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা ইতিমধ্যে চালু করেছে।
২০২১ সালের কোভিড পরিস্থিতিতে গোটা দেশ যখন চরম সংকটের সম্মুখীন তখনই কেন্দ্রীয় সরকার একটি নোটিফিকেশন জারি করে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের নির্দেশ জারি করে। অসম সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এপিডিসিএল কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপন শুরু করে। কর্পোরেটদের স্বার্থে স্মার্ট মিটার চালু করে মানুষকে ক্রমান্বয়ে কালোবাজারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ পরিষেবাকে দ্রুত প্রাইভেট মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। বিদ্যুৎখণ্ডের বেসরকারিকরণ হলে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের কাছে তা দুর্লভ হবে অন্যদিকে হাজার হাজার কর্মচারী কর্মচ্যুত হবেন। গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা প্রত্যাহার এবং প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা বন্ধ করে পুনরায় পোস্টপেইড ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে, প্রিপেইড স্মার্ট মিটার গ্রহণে অনিচ্ছুক গ্রাহকদের কোনও ধরনের হুমকি দেওয়া চলবে না। এছাড়া দিন ও রাতের মাশুল আলাদা করে ধার্য করা চলবে না এবং গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২২ বাতিল করতে হবে বলে দাবি তুলেন তাঁরা।
অতিথিদের বক্তব্য শেষে অভিবর্তনের মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন সুজিতকুমার পাল এবং প্রস্তাবের সমর্থনে অভিবর্তনের আহ্বায়কদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন গৌতম চৌধুরী। তার পর কনভেনশনে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মূল প্রস্তাবকে সমর্থন করে একে একে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিয় দেব, অধ্যাপক নির্মলকুমার সরকার, নন্দনকুমার নাথ, জ্যোতিষ পুরকায়স্থ, করুণাময় শর্মা, রাহুল চক্রবর্তী, হরিকেশ ভট্টাচার্য, ফখর উদ্দিন, সুভাষ নন্দি প্রমুখ।
কনভেনশনে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব উত্থাপন করেন অরুণাংশু ভট্টাচার্য। সারা জেলা ব্যাপী সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলা এবং জায়গায় জায়গায় পথসভা, জনসভা ইত্যাদি ব্যাপকহারে সংগঠিত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান এবং ধরনা সংগঠিত করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। আন্দোলন কমিটিকে বৃহত্তর রূপ দিয়ে প্রতিবাদী আন্দোলন থেকে প্রতিরোধের স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয় আজকের গণ-কনভেনশনে। সুনীতরঞ্জন দত্তকে সভাপতি, গৌতম চৌধুরী, বদরুল হক চৌধুরী, বাসুদেব সেন ও সুবীরবরণ রায়কে উপ-সভাপতি এবং সুজিতকুমার পালকে সম্পাদক করে ৩০ জনের কমিটি গঠিত হয়।