অনলাইন ডেস্ক : নাবালিকা পাচার! তা-ও কালাইন বাজারের প্রাণকেন্দ্রে বসে চালানো হচ্ছে এই আস্ত নেটওয়ার্ক। অভিযোগ, এ পর্যন্ত একাধিক কিশোরী, তরুণী ওই নেটওয়ার্কের খপ্পরে পড়ে রয়েছেন নিখোঁজ। খবর মতে, কাজের প্রলোভন দেখিয়ে সেই চিরাচরিত ফর্মুলায় জোগাড় করা হয় মেয়ে। কালাইনেও হয়েছে তা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এই কিছুদিন আগে। গুমড়া এলাকার এক ব্যক্তি কালাইন থানায় অভিযোগ করে জানান, তাঁর ষোল বছরের মেয়েকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যান কালাইন বাজারের বাসিন্দা এক মহিলা। কালাইন হাসপাতালের বিপরীতে ওই মহিলার চায়ের স্টল রয়েছে। গুমড়ার মেয়েটিকে নেওয়ার সময় কালাইনের মহিলারটির সঙ্গে ছিলেন বাটুলমারার আরেক মহিলা। গুমড়ার এজহারকারী ব্যক্তির অভিযোগ, অভিযুক্ত দুই মহিলা তার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৫ জানুয়ারি বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। একইভাবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে একই গ্রাম থেকে নেওয়া হয় বছর পনেরোর আরেক কিশোরীকেও। কিন্তু এখন আর ওই দুই কিশোরীর কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। কালাইন পুলিশের কাছে আর্জি জানিয়ে মেয়েকে উদ্ধারের দাবি রাখেন এই নিরূপায় পিতা। এ বিষয়ে খবরাখবর নিতে গিয়ে পাওয়া গেল চাঞ্চল্যকর কিছু অভিযোগ। জানা যায়, নাবালিকা মেয়ে পাচার চক্রটি বছর দেড়েক ধরে কালাইনে সক্রিয় রয়েছে। কালাইন হাসপাতালের বিপরীতে থাকা চা স্টলের মালকিন এবং তার যুবতী মেয়ে হচ্ছেন আস্ত নেটওয়ার্কের খুঁটি। তাদের ছাই রয়েছে কালাইন, কাটিগড়া, বদরপুর সহ বরাক উপত্যকার আরও কিছু এলাকায়। ওই ছাই মারফত জোগাড় করা হয় নাবালিকা। শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি শহরে বাবুদের ঘরে কাজের লোক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে মেয়েগুলোকে নেওয়া হয় বাড়ি থেকে। গরীব, অশিক্ষিত এবং নানাভাবে অবহেলিত পরিবারগুলোই তাদের টার্গেটে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এসব চলছে। মাঝেমধ্যে কিশোরী হারানোর খবর মিললেও মেয়েগুলোকে কেউ পাচার কিংবা বিক্রি করছে, এমনটা ভাবা হয়নি।
কিন্তু পক্ষকাল আগের এক ঘটনা চোখ খুলে অনেকের। জানা যায়, কালাইনের ওই চা স্টল মালকিনের হাত ধরে অন্য একটি মেয়ে গিয়েছিল কাজের সন্ধানে। পরবর্তীতে ওই মেয়েটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল রাজস্থানে! তবে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি মেয়েটিকে গুয়াহাটি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। খবর মতে, রাজস্থানে বিক্রি হয়ে যাওয়া মেয়েটি একদিন সূযোগ বুঝে পালিয়ে আসে গুয়াহাটি। সেখান থেকে সে তার বাড়িতে যোগাযোগ করে। বাড়ির লোকরা স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে গুয়াহাটি থেকে উদ্ধার করেন তাকে। ওই মেয়েটিই জানায় যাবতীয় ঘটনা। সে জানায়, কালাইনের চা স্টল মালকিন এবং তার যুবতী মেয়ে আদপে নারী পাচারকারী। দিল্লি, রাজস্থান, কলকাতা ইত্যাদি স্থানে দফায় দফায় কিশোরী, নাবালিকাকে সাপ্লাই দেন তারা। কালাইন, কাটিগড়া থেকে কাজের নাম করে নিয়ে মেয়েদেরকে বিক্রি করেন মা-মেয়ে। তবে সে পালিয়ে এলেও আরও মেয়ে রয়ে গেছে রাজস্থানে! আর ওই মেয়েটি পালিয়ে এসে বিস্তারিত জানানোর পরই টনক নড়ে অন্যান্য অভিবাবকের। ফলে গুমড়ার এক পিতা কালাইন থানায় তিন মহিলাকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। কিন্তু মামলার পক্ষকাল হতে চললেও পুলিশ এখনও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপি নেতা সুব্রত চক্রবর্তী। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নাবালিকা পাচার চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয়। এনিয়ে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ না নিলে কালাইন, কাটিগড়ার বহু নাবালিকার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে।