অনলাইন ডেস্ক : নদীপথে অবৈধ চেরাই কাঠ পাচার হচ্ছে বলে পাকাপোক্ত খবর ছিল বনবিভাগের কাছে। কিন্তু লক্ষীপুরে জিরিঘাট রেঞ্জ অফিস থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অভিযান চালিয়েও কাঠ বোঝাই সেই মোটরবোট আটকাতে পারলেন না জিরিঘাটের রেঞ্জ ফরেস্ট অফিসার ও অন্য বনকর্মীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতের এই ঘটনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে কাছাড় বন ডিভিশনের অভ্যন্তরে। আর এই গুঞ্জনে সন্দেহের আবর্তে ঢুকে পড়েছেন জিরিঘাট রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত অফিসার রাওয়েল রাংফার।
বনবিভাগ সূত্রের খবর, বরাক উজানে (অধুনা বরাক অভয়ারণ্য) শাল, সুন্দি, রামডালা, কড়ই ইত্যাদি যেসব মূল্যবান গাছ রয়েছে তা অতীতে যতটা মূল্যবান ছিল, এখনও চাহিদায় ভাটা পড়েনি। তাই বনমাফিয়ারা তা কেটে ভাটি অঞ্চল যেমন লক্ষীপুর, সিঙ্গেরবন্দ থেকে শুরু করে করিমগঞ্জ ও বাংলাদেশ অবধি পাচার করতেন। অতীতে তা ছিল খুল্লমখুল্লা। কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাতে রাশ টেনে দেওয়া হয়। সূত্র বলছে, ইদানিং নতুন পদ্ধতিতে তা শুরু হয়েছে। আগে গাছের লগগুলো চালি বানিয়ে নদীর ভাটিতে পাচার করা হত। এখন অভয়ারণ্যেই বৈদ্যুতিক সো-মেশিন নিয়ে গিয়ে তা নিজস্ব মাপে কেটে মোটরবোটের সাহায্যে ভাটির দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে তিনটি মোটরবোটের সাহায্যে প্রায় ৯০০ সিএফটি চেরাই কাঠ দিলখুশে বরাক নদীর তীরে আনলোড করা হচ্ছিল। জনৈক ফটিক চাষা নামের এক ব্যক্তি তা নিয়ে এসেছিলেন। যদিও বনবিভাগের জিরিঘাট রেঞ্জ তা দেখেও দেখেনি বলে অভিযোগ।
সূত্রটি জানিয়েছেন, গতরাতে বরাক নদীতে বিশাল পরিমাণের চেরাই কাঠ আগমনের খবর স্থানীয়রা বনকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিলেও তারা এতে আগ্রহ দেখাননি। পরে দক্ষিণ অসম রেঞ্জের সিসিএফ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে দৃষ্টিগোচর করানোর পর লক্ষীপুর থেকে রেঞ্জার রাওয়েল রংফার দিলখুশ ছুটে যান। পেছন পেছন যান অন্য বনকর্মীরাও। যদিও রেঞ্জার পৌঁছার আগেই দু’টি মোটরবোট রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দেয়। এনিয়ে বনবিভাগের অভ্যন্তরেই ফিসফিসানি শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, অভিযানের খবর আগেভাগেই কিভাবে পেয়ে গেল পাচারকারীরা? আর এক্ষেত্রে রাংফারের ভূমিকা আতসকাচের তলায়। তেজশ মারিস্বামী কাছাড়ের ডিএফও থাকা সময় থেকেই রাংফার বেপরোয়া, এখন ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও সমপরিমাণ রয়ে গেছেন বলে বিভাগের অভ্যন্তরেই গুঞ্জন। অথচ রাংফার হাওয়াইথাঙ এফরেস্টেশন রেঞ্জের রেঞ্জার। কিন্তু তাঁকে কোন অঙ্কে জিরিঘাট (লক্ষীপুর) রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জার করে কাজ চালানো হচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না বিভাগের লোকদেরই।
জিরিঘাট রেঞ্জের অধীন দু’টি বালু খাদান থেকেও অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। কোনও ধরনের টিপি ছাড়াই বালু উত্তোলন করে তা পাচার হচ্ছে বলেও অভিযোগ। স্বভাবতই এসব ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে যে বনবিভাগকে কেন্দ্র করে অতীতের দিন কী ফিরে আসছে?