অনলাইন ডেস্ক : অচেনা হিসেবে এসেছিলো। আর নিজেদের অস্তিত্ব-র ঢাকডোল পিটিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরছে রেঙদাই এফ সি। রণকৌশলগত দাপট দেখিয়ে বিগ ফিশ কলকাতার ময়দানের অন্যতম প্রধান মহামেডান স্পোর্টিংকে হারিয়ে ক্যাপ্টেন গুপ্ত ট্রফিতে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা পেল গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মনিপুরের ক্লাব রেঙদাই এফ সি। হারজিতের ফয়সলাটা ২-১ -এ হলেও আসল জয়টা কিন্তু হল ফুটবলের। এস এম দেব স্টেডিয়ামের মাঠভর্তি দর্শক ফুটবলের এই উত্তরণের সাক্ষী রেখে গেল। বিষয়টা শুধুই সদচ্ছার।
সেই অন্যদিনের মত শুরুর দাপটটা ছিল না মহামেডান স্পোর্টিংয়ের। রাতের আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তেই ‘ আয়েশিপনা ‘ ভাব একটা জড়িয়ে ধরে সাদা কালো উর্ধিধারীদের। আসল কথা হল রেঙদাই কোচ জয়চন্দ্র সিংহ আগে থেকেই মার্কিংয়ের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। সোমবার কৃত্রিম আলোতে সেই রণকৌশলটা বাস্তবায়িত করেন রেঙদাই চাণক্য। টপার এবং সানিকে মার্ক করে মহামেডান আক্রমণের অক্সিজেনটাই শেষ করে দেন জয়চন্দ্র। উইং ছাড়া চিড়িয়াখানার বাঘে রূপান্তর হয়ে যায় কলকাতার অন্যতম প্রধান। গর্জন তো ছিল কিন্তু সেসব নেহাতই ‘ফাঁকা ‘। উল্টোদিকে আক্রমণের অট্টহাসি নিয়ে খাঁচাবন্দি মহামেডানের কাঁধে সজোরে নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে মনিপুরের ক্লাবটি। ১৮ মিনিটের মাথায় গোল তো প্রায় পেয়েই গিয়েছিলো তারা। হয়নি মহামেডান স্পোর্টিং গোলরক্ষক শুভদীপের ‘ গোল্ডেন টাচের ‘ জন্য। রেঙদাই স্ট্রাইকার এল বিক্রমজিতের গোলমুখী শট সামান্য স্পর্শের মাধ্যমে কর্নারের ঠিকানায় পৌঁছে দেন শুভদীপ। এ যাত্রায় বেঁচে যায় মহামেডান। অবশ্য বেঁচে যাওয়ার ‘ টম এন্ড জেরির ‘ খেলাটার ছিল স্বল্পআয়ুর। ২৬ মিনিটেই গোলের বাঁধ খুলে দেন রেঙদাইয়ের নানি সিংহ। শিলাজিত সিংহের ফ্রি কিককে গোলের ঠিকানা বাতলে দেন নানি।
শুরুর প্রথম ৩০-৩৫ মিনিট মহামেডান স্পোর্টিং যেন ছিল পথ হারিয়ে ফেলা কোনো উট। যার যাবতীয় অহং, শৌর্য চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে পাহাড়তলে এসে। এমনই ফুটবল উপহার দিয়েছে রেঙদাই। এই সময়টায় মহামেডানকে নিয়ে উল্লেখ করার মত কিছুই ছিল না কলমের পরশে। মহামেডানের দুর্গতির আখ্যান আরও বাকি ছিল। খেলার বয়স তখন ৪২ মিনিট। দারুণ একটা ওভার লেপিং। ওয়ান টু ওয়ান পাস। অসাধারণ একটা ফিল্ড গোল করে রেঙদাইয়ের পক্ষে ব্যবধান ২-০ করে দেন এস সাগর সিংহ। এই মুহূর্তটায় বড্ড বেশি অসহায় দেখছিলো মহামেডানকে। আর রেঙদাই। আরিব্বাস।। তাদের স্টেস্টাসে শুধুই ‘ আট্যাক আর আট্যাক ‘।
বিরতির পরও ম্যাচের হিসেব নিকেশ তেমন একটা পাল্টায়নি। মহামেডানের নির্বিষ আক্রমণগুলি কোনো ঝাঁর ফোক ছাড়াই সামলে নিচ্ছিলো রেঙদাই ডিফেন্স। এই অর্ধে তাঁদের আক্রমণের ধাচটাও নেহাৎ মন্দ ছিল না। তবে দু গোলে এগিয়ে যাওয়ায় ডিফেন্স-এ কড়াকড়িটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জয়চন্দ্র। তারপরও গোলের একটা সুযোগ পেয়েছিল কলকাতার ক্লাবটি। সাইড পোস্ট ‘ গব্বর সিং ‘ হয়ে উঠায় লং রেঞ্জ থেকে কামান দেগেও গোল আর পাননি সানি। খেলার তখন ৬১ মিনিটে গড়িয়েছে।
ঘড়ির কাটা যত এগিয়েছে, লোক বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডিফেন্সে নজরদারিও বাড়িয়েছেন রেঙদাই কোচ জয়চন্দ্র। অবশ্য অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক ট্যাকটিকও অনেক ক্ষেত্রে আপনার কাছে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে। যেমন প্রতিদানটা ৭৪ মিনিটের মাথায় পেল জয়চন্দ্রর ছেলেরা। কাউন্টার এটাকে উঠে এসে ঝড়ের বেগে রেঙদাই ডিফেন্সে এন্ট্রি নেন মহামেডানের পরিবর্ত রোমান। এই রোমানকে আটকাতে অবাঞ্চিত একটা ফাউল করেন নরেশ সিংহ। জাতীয় রেফারি শিলচরের ছেলে আব্দুল মজিদ চৌধুরী পেনাল্টির নির্দেশ দেন। রেঙদাই ডিফেন্সের প্রবল আপত্তি এক্ষেত্রে ধোপে টেকেনি। স্পট কিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি জোশেপ। ঠিক নিশানায় ছিল তাঁর শট। এরপর যতবার মহামেডান আক্রমণে উঠেছে এস এম এন্দো ব্লক থেকে চিয়ারের রোল উঠেছে। মহামেডান সমর্থকদের মধ্যে একটা অক্সিজেনের সঞ্চার হয়েছিল। এরপর চাপের মাত্রা বাড়ালেও মহামেডানের পক্ষে সমতায় ফিরে আসা আর হয়নি। ততক্ষনে কিনা সময়ের অক্সিজেন ফুরিয়ে গিয়েছে। ম্যাচের ফল ২-১’ই বহাল থাকে।