অনলাইন ডেস্ক : অসমে চা বাগান শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি, বেতনভুক্ত ‘পার্সনাল সিকিউরিটি অফিসার’ (পিএসও) ব্যবস্থা, মেগা কনসার্ট পরিকল্পনা সহ উজান অসমের উন্নয়ন সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। বুধবার গোলাঘাট জেলার দেড়গাঁওয়ে অবস্থিত লাচিত বড়ফুকন পুলিশ অ্যাকাডেমিতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠক। বৈঠক শেষে পরিষদীয় মন্ত্রী অতুল বরাকে পাশে বসিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের নির্যাস দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চা দিবসে আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আসন্ন দুর্গাপূজার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে সরকার শ্রমিক সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে চা বাগানের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২২০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।’
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা একটি বেতনভুক্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা (পিএসও) ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ঘোষণা করেছেন। মুখ্যমন্ত্ৰী জানান, অসমে বহু ভারী শিল্পোদ্যোগ এবং প্রতিষ্ঠান আসছে। যার জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির পদাধিকারীদের পিএসও-র প্রয়োজন। শর্মা জানান, যাঁরা তাঁদের জীবন হুমকির মুখে বলে মনে করেন তাঁরা সরকারকে ৭৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে পিএসও পেতে পারেন। যাঁরা সত্যিকার অর্থে হুমকি বোধ করছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা সহায়তার জন্য অনুরোধ করছেন, তাঁদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রিসভা-অনুমোদিত উদ্যোগের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘কনসার্ট অর্থনীতি’ জোরদার করার জন্য রাজ্য-সমর্থিত একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সরকার আগামী ডিসেম্বরে গুয়াহাটি, ডিব্রুগড় এবং যোরহাটে বড় কনসার্টের আয়োজন করবে। আগামী ৮ ডিসেম্বর গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠেয় কনসাৰ্ট করবে পোস্ট মেলোন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সমন্বিত অর্থনীতি পলিসিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছি। মেঘালয়ে বড় বড় কনসার্টের আয়োজন করে সরকার প্রায় ৭০ কোটি টাকা লাভ করেছে। অসমকেও মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলির সাথে প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে, অন্যথায় আমরা একটি প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ব।’
নুমলিগড় রিফাইনারিতে রাজ্যের ২৬ শতাংশ অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী এই সুবিধার মধ্যে আরও উন্নয়নমূলক উদ্যোগের জন্য ২০৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে রাজ্য মন্ত্রিসভা ডিব্রুগড়ে নতুন অসম বিধানসভা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২৮৪ কোটি টাকার বাজেটও অনুমোদন করেছে। ওই কমপ্লেক্সে ১ হাজার জনের বসার ব্যবস্থা সহ একটি অ্যাসেম্বলি হল থাকবে, পাশাপাশি বিধায়কদের জন্য আবাসিক ভবনের ব্যবস্থাও থাকবে।
তাছাড়া অসম মন্ত্রিসভা ডিব্রুগড়ের খনিকর স্টেডিয়ামকে রাজ্যের সর্ববৃহৎ ৩৫ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান শর্মা। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, লাচিত বড়ফুকন পুলিশ অ্যাকাডেমির উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষার্থী অফিসারদের জন্য আবাসিক কোয়ার্টার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে অতিরিক্ত ২২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে ক্যাবিনেটে সিলমোহর পড়েছে।
তিনি আরও জানান, কাজিরঙার ষষ্ঠ তফশিলির খসরার চূড়ান্ত অধিসূচনা জারি হয়েছে। এ জন্য ৪৭,২৯১ হেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত সীমা নিৰ্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৯৮৫ সালে কাজিরঙার ষষ্ঠ তফশিলির খসরা প্রকাশ করা হয়েছিল। কাজিরঙা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে বিশ্বনাথের গোপালঝাড়নি, গোনাইটাপু, ঠুটেচাপরি, বালিগাঁও, বিশ্বনাথঘাট, জবরে, উমাটুমনিককে। কলিয়াবরের হাতিমুড়া, শিলঘাট, গাখিরখাটিকেও ষষ্ঠ তফশিলির বাইরে রাখা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্ৰী।